গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরে মহানগরীর মহানগরীর পুবাইল এলাকায় মেঘডুবি ২০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা ইতালি ৩৬ প্রবাসী কোয়ারেন্টাইনের সময় অতিক্রান্ত হওয়ায় ছাড়া পাচ্ছেন আগামীকাল সোমবার।
ইতালি প্রবাসী ৪৪ জন বাংলাদেশী গত ১৪ মার্চ রাতে দেশে ফেরেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিআরটিসি বাস যোগে রাতেই তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য ঐ কেন্দ্রে পাঠানো হয়। তারপর থেকে তারা তাদের ৩৬ জন এ কেন্দ্রে রয়েছেন।
কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়া পাওয়া প্রবাসীদের গ্রহণ করার জন্য তাদের স্বজনদেরও ইতিমধ্যে খবর দেওয়া হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টায় প্রবাসীদের নিজ নিজ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এসময় গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম উপস্থিত থাকবেন।
গাজীপুর জেলা প্রশাসন সরকারের নির্দেশে ১৪ মার্চ রাতে প্রবাসীদের পৌছানোর আগে থেকেই ওই কেন্দ্রটি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হিসেবে প্রস্তুত করে রেখেছিল। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে একমাত্র গাজীপুরেই দুটি স্থানে প্রাতিষ্ঠানিক কোরায়েন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে প্রবাসীদের থাকার সকল ব্যবস্থা, তাদের পোশাক, তিন বেলা খাবারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিসপত্র জেলা প্রশাসনের খরচে সরবরাহ করা হয়েছে।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুজ্জামান জানান, ১৪ মার্চ রাতে ইতালি ফেরত ৪৪ প্রবাসীকে পুবাইল এলাকায় মেঘডুবি ২০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে শরীরে তাপমাত্রা থাকায় ১৫ মার্চ ৪ জনকে এবং ১৬ মার্চ আরও ৪ জনকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে ঢাকায় কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখানে পাঠানো ৮ জনের মধ্যে একজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তাকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় পাঠানো ৮ জনের মধ্য থেকে ৭ জনকে ১৮ মার্চ রাতে আলাদাভাবে পুনরায় আরো ১৪দিন কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য পাঠানো হয় গাজীপুরের কাপাসিয়ায় পাবুর মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে। আর গাজীপুর মহানগরীর মেঘডুবি ২০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৩৬ জন। যাদের কোয়ারেন্টাইনের সময়সীমা শেষ হচ্ছে সোমবার।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, দেশে এই প্রথম কোনো প্রকার সরকারি বরাদ্দ ছাড়াই সম্পূর্ণ জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ৩৬ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। তাদের থাকার সকল ব্যবস্থা, তিন বেলা খাবারসহ যাবতীয় খরচ জেলা প্রশাসন বহন করেছে। এই ৩৬ জনের কোয়ারেন্টাইনে থাকা ১৪ দিন পূর্ণ হওয়ায় সোমবার তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এজন্য তাদের স্বজনদেরও খবর দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রবাস জীবন থেকে দেশে এসে প্রিয়জনদের কাছ যেতে না পেরে বিচ্ছিন্ন থেকে একা একা ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য। তারপরেও তাদের স্ত্রী, সন্তান, পরিবার, এলাকার ও দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য প্রবাসীদের অনেক কাউন্সেলিং করা হয়েছে, বোঝানো হয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যদেরও ডেকে এনে বোঝানো হয়েছে। কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসীরাও প্রশাসন, পুলিশ ও চিকিৎসকদের অনেক সহযোগিতা করেছেন। তারা সার্বক্ষণিক পুলিশের নিরাপত্তায় ও চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন।
তিনি আরও জানান, কাপাসিয়ায় পাবুর মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে ১৮ মার্চ রাতে যে সাতজন ইতালি প্রবাসী কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১৪ দিনের মেয়াদ পূর্ণ হলে তাদেরও বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক জানান, কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়া পাওয়া প্রবাসীরা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে সতর্কতার সঙ্গে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলবেন। যারা প্রবাস থেকে এসেছেন তাদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকবেন। সর্বোপরি নিজের প্রতি তাদের খেয়াল রাখতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।