গণবাণী ডট কম:
দেশে করোনাভাইরাস বা কোভিড ১৯ এর পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্তের পর গত ২৪ ঘন্টায় একলাফে আক্রান্তের সংখ্যা দেড়গুন বেড়েছে। একদিনে আরো ১১২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩০ জনে। দেশের বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর এর নিয়মিত যৌথ ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এছাড়া এতে যুক্ত হয়ে কথা বলেন, যুক্ত হয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। এসময় রাজধানীর মহাখালী জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে নিয়মিত অনলাইন প্রেস ব্রিফিংয়ে যুক্ত ছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা: সানিয়া তাহমিনা এবং আইইডিসিআর এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হয়ে স্বাস্থমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত মানুষের হার বাড়ছে। তবে ভাইরাস শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাবার মূল কারণ করোনাভাইরাস পরীক্ষার হার বেড়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। আগে মাত্র একটি জায়গায় নমুনা পরীক্ষা হত, এখন ১৬ থেকে ১৭টি জায়গায় টেস্ট হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এসময় জানানো হয়, গত ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে এ নিয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২১ জনে। আর যিনি মারা গেছেন তার বয়স ৬০ বছরের বেশি, তিনি ঢাকার বাসিন্দা এবং একজন পুরুষ।
সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত হয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, এখন থেকে বাংলাদেশের ৬৯টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। এই হাসপাতালগুলো করোনাভাইরাস চিকিৎসার জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত হাসপাতালগুলোর সঙ্গে সেবা দেবে।
এসময় আরো জানানো হয়, আগামী ১৫-১৫ দিনের মধ্যে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে ২ হাজার বেডের আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করা হবে। এছাড়া দেশের ৬৯ টি মেডিকেল কলেজে ২৪ ঘন্টা করোনা বিষয়ক সেবা প্রদান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশে এই মূহুর্তে দশ হাজার ৭৮৭ জন মানুষ কোয়ারেন্টিনে আছেন বলে উল্লেখ করা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ জন ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে, সারাদেশে মোট ১৩৫ জন মানুষ আইসোলেশনে রয়েছেন।
সরকারের কাছে এই মূহুর্তে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ৭১ হাজার কিট মজুদ আছে। এছাড়া পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরের দেয়া হটলাইন নন্বরে গত ২৪ ঘণ্টায় এক লক্ষ ১৮ হাজারের বেশি কল এসেছে বলে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক সানিয়া নতুন আক্রান্তদের বিশ্লেষণে জানান, নতুন আক্রান্ত ১১২ জনের মধ্যে পুরুষ ৭০ জন এবং মহিলা ৪২ জন।
নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ১০ বছরের নীচে রয়েছে ৩ জন,
১১ থেকে ২০ বছরের বয়সী ৯ জন,
২১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ২৫ জন,
৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২৪ জন,
৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৭ জন,
৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২৩ জন,
৬০ বছরের উপরে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ জন।
নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৬২ জন ঢাকার বাসিন্দা, ১৩ জন নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা, বাকিরা ঢাকার বাইরের বাসিন্দা।
সংবাদ সম্মেলনে করোনা বিষয়ক সর্তকতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।
এসময় আইইডিসিআর এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা অনুরোধ জানিয়ে বলেন, একান্ত প্রয়োজন না হলে কেউ যেন ঘরের বাইরে না যান এবং বাইরে বের হলে ঘরে ঢোকার আগে সাবান অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ভালো করে পরিষ্কার করে নিবেন। এছাড়া দুইজনের মাঝখানে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখাসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
ফ্লোরা বলেন, পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বাইরে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের অনেকেই নারায়ণগঞ্জ থেকে গিয়ে আক্রান্ত সংক্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, এ থেকে বুঝা যায় যে আমাদের ঘরে থাকা কতটা জরুরি।
তিনি বলেন, আমাদের এই করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর পদক্ষেপ হচ্ছে ঘরে থাকা। তিনি বলেন, আমরা সবচেয়ে কার্যকরভাবে করোনা বিস্তাররোধে অংশগ্রহণ করতে পারি শুধুমাত্র ঘরে অবস্থান করে। শুধু ঘরে থাকলেই করোনা প্রতিরোধ করা সম্ভব, অন্য কিছু করার প্রয়োজন নেই।
এসময় তিনি অনুরোধ করে বলেন, আপনারা শুধু ঘরে থাকুন। আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, জনসমাগমই একমাত্র কারণ করোনা সংক্রমণ বিস্তারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। অতএব আমাদের অনুরোধ আপনারা ঘরে থাকুন এবং ঘরে থাকুন। ঘরে থেকে করোনা বিস্তার রোধে সহায়তা করুন।