কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি :
যত সময় গড়াচ্ছে ততই গোটা দুনিয়া জুড়ে দীর্ঘ হচ্ছে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের কালো ছায়া। ইতিমধ্যেই বিশ্বের দুইশটি দেশে থাবা বসিয়েছে করোনা। সেই সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যাও। বাংলাদেশেও এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজার ১০৩ জন। আর মারাগেছেন ১৬৩। তারমধ্যে গাজীপুরের কাপাসিয়া মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৭০ জন। মারা গেছেন একজন।
কাপাসিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সালাম সরকারসহ ১৩ জন করোনার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল পাওয়ায় সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয়েছেন। বাকীদের মধ্যে অধিকাংশ আক্রান্ত ব্যক্তি দ্বিতীয় ধাপে নেগেটিভ ফলে এসেছে বা সু্স্থ্য হওয়ার পথে।
কাপাসিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের ৩৩ জন, একটি কারখানার শ্রমিক ১৪ জন, সিভিল সার্জন অফিসের কর্মচারী ২ জন, বাকী ২১জন এলাকাবাসী রয়েছেন।
দেশে আক্রান্ত চিকিৎসকদের মধ্যে আব্দুস সালাম সরকারই প্রথম যিনি আক্রান্ত হবার পর হাসপাতালে না গিয়ে নিজ বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা ও সাধারণ নিয়ম মেনে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায়ও করোনা নেগেটিভ হয়েছেন অর্থাৎ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন। তিনি গতকাল বুধবার আইইডিসিআর থেকে তৃতীয় ধাপে নেগেটিভ ফলাফল জানতে পেরেছেন।
আব্দুস সালাম সরকার কাপাসিয়ায় স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়েই আক্রান্ত হন। তিনি আক্রান্ত হবার আগে কাপাসিয়ায় সন্দেহভাজন ৩৮১ জনের নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা করে ৭০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। তারপর গত ১২ দিনে কাপাসিয়ায় নতুন কোন করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। নিজে চিকিৎসক হওয়ার ফলে করোনা বিষয়ে তার সচেতনতাও রয়েছে। তাই তিনি মনোবল হারাননি। তিনি নিজের বাসায় আইসলোশেন থেকে নিজেই নিজের চিকিৎসা করেন। স্বাস্থ্যবিধি ও সিনিয়র ডাক্তারদের পরামর্শ মেনে নিয়মিত আরো কিছু কাজ করে মাত্র ১২ দিনে সম্পুর্ণ সুস্থ হয়ে দেশে প্রথম চিকিৎসক হিসাবে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সালাম সরকার বুধবার বিকালে জানান, গত ১৮ এপ্রিল আমার করোনাভাইরাস পজেটিভ আসে। এরপর থেকে আমি আমার বাসায় নিজে নিজেই আইসোলেশনে থাকি। একটি কক্ষে এটাচ বাথরুম, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক কেটলী ছিল। সব সময় গরম খাবার খেয়েছি। তিনি বলেন, আমার একবার একদিন জ্বর, গলা ব্যাথা ছিল। দুইদিন পাতলা পায়খানা ছিল। চিকিৎসার মধ্যে প্রতিদিন এক ঘন্টা পর পর গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা, গরম পানি খাওয়া। গরম পানির মধ্যে রসুন দিয়ে নাক ও মুখ দিয়ে গরম পানির ভাপ নেওয়া। সবসময় গরম পানি, আদা চা, নিজে তৈরী করে খেয়েছি। কারণ ভাইরাস তো ৪/৫দিন গলার মধ্যে থাকে। তাই গরম পানি, চা এসব খেয়ে গড়গড়া করে যদি পেটের মধ্যে নামিয়ে দেয়া যায়, তারপরে গরম পানি খেলে, গরম পানির ভাপ নিলে ভাইরাস পায়খানার সাথে বেরিয়ে যাবে। তাহলে ভাইরাস কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তিনি বলেন, তা না হলে ভাইরাস শরীরের ভিতরে বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু গরম পানি খেলে, গরম পানির ভাপ নিলে ভাইরাস কোন সুবিধা করতে পারবে না, আমার কাছে তাই মনে হয়েছে। এছাড়া খাবারের তালিকায় ছিল, ভিটামিন সি জাতীয় খাবার যেমন কমলা, মাল্টা ও জিংক সমৃদ্ধ খাবার খেয়েছি। তবে একটু পরপর নাকে মুখে গরম পানির ভাপ নিয়েছি। আর এটাই সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। তিনি আরও বলেন, একটি মেডিসিন ও একটি এন্টিবায়োটিক জাতায় ঔষধ সেবন করেছি। এভাবেই আমি মহান আল্লাহর রহমত ও মানুষের দোয়ায় আজ ২৯ এপ্রিল আমার তৃতীয় ধাপের করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ এসেছে।
এসময় তিনি আরো বলেন, যারা জরুরী প্রয়োজনে বাইরে যাবেন, তারা মাস্ক ব্যবহার করবেন। ঘরে ফিরে কাপড় চোপড় খুলে বাথরুমে গিয়ে গোসল করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হবেন। দিনে ৪/৫ বার গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করবে, গরম পানি খাবে। ঘনঘন হাত ধুবেন, এ মৌসুমের জন্য এগুলো জরুরী।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কাপাসিয়া স্বাস্থ্য বিভাগের করোনা আক্রান্ত বাকী ৩২ জনকে হাসপাতালের পাশে নার্সিং কলেজে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে ২৬ জনের দ্বিতীয় ধাপের করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল পাওয়া গেছে। এছাড়া উপজেলার দস্যুনারায়নপুর এলাকার ছোঁয়া এগ্রো প্রোডাক্ট লিমিটেডের করোনায় আক্রান্ত ১৪ শ্রমিকের মধ্যে একজন ঢাকায় চিকিৎাধীন রয়েছে। বাকী ১৩ জনকে কারখানার ভিতরে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এখানে থাকা ১২ শ্রমিকের তৃতীয় ধাপের করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল পাওয়া গেছে। তাদের করোনা মুক্তির সনদ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ প্রস্তুত করেছে। উপজেলার করোনা আক্রান্ত বাকী ২৩ জনকে রায়েদে বেসরকারী মডিউল পল্লী হাসপাতালে আইসোলেশন সেন্টার খুলে সেখানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সেখানেও অধিকাংশ দ্বিতীয় ধাপের করোনা পরীক্ষায় তাদের ফলাফল নেগেটিভ এসেছে।