গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের আবদার এলাকায় আলোচিত প্রবাসীর স্ত্রী ও তিন সন্তান হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় পিবিআই এর হাতে গ্রেফতার হয়ে সোমবার আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়া ঘাতক পারভেজের পিতাসহ আরো ৫ আসামীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার, রক্তমাখা জামা উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা র্যাবের কাছে হত্যাকান্ডের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, শ্রীপুর উপজেলার আবদার এলাকার মো: কাজিম উদ্দিন (৫০), একই গ্রামের মো: বশির (২৬), সুনামগঞ্জের গাবি গ্রামের মো: হানিফ(৩২), ময়মনসিংহের ফকির পাড়া গ্রামের মো: হেলাল (৩০) ও সুনামগঞ্জের কাঠালবাড়ি গ্রামের মো: এলাহি মিয়া (৩৫)।
এর আগে গত রবিবার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এই ঘটনায় পারভেজ (১৭) নামের এক ঘাতককে গ্রেফতার করলে সে গাজীপুর আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্ধি দেয়। পারভেজ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া শ্রীপুরের উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের আবদার এলাকার কাজিম উদ্দিনের ছেলে।
র্যাব ১ জানায়, গত ২৩ এপ্রিল শ্রীপুর উপজেলার আবদার এলাকার একটি ফ্ল্যাট বাড়ির দ্বিতীয় তলায় মালয়েশিয়া প্রবাসী কাজলের স্ত্রী স্মৃতি ফাতেমাসহ ওই দম্পতির মেয়ে সাবরিনা সুলতানা ওরফে নূরা (১৬), হাওয়ারিন (১৩) এবং ছেলে ফাদিল (৮) এর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। এঘটনায় গত ২৪ এপ্রিল ২০২০ তারিখ প্রবাসী কাজলের পিতা আবুল হোসেন অজ্ঞাত নামা ব্যক্তিদের আসামি করে শ্রীপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। এই ঘটনায় ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব ১ এর সদস্যরা। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যা ব-১ এর সদস্যরা শ্রীপুর থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অভিযুক্ত ৫জনকে গ্রেফতার করে।
পরে গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যমতে প্রবাসীর বাড়ীতে খুন ও ধর্ষণের আগে লুটকৃত মালামাল ও আসামীদের পরিধেয় রক্তমাখা কাপড়, নগদ ৩০ হাজার টাকা, একটি হলুদ রংয়ের গেঞ্জি, জিন্স প্যান্ট, ৩টি লুঙ্গি এবং একটি আংটি উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, তারা সবাই মাদক সেবী। এদের মধ্যে কাজিম উদ্দিন রিকশা চালক, হানিফ শ্রমিক, বশির অটো রিকশা চালক, হেলাল ভাঙ্গারী বিক্রেতা এবং এলাহি মিয়া শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ছিনতাইসহ নানাবিধ অপরাধের সাথে জড়িত। সকলেই জুয়াড়ী এবং ভিকটিমের বাড়ী সংলগ্ন এলাকায় নিয়মিত জুয়া, মাদক সেবন ও আড্ডা দিত। এছাড়া ভিকটিমদের তারা নানাভাবে হয়রানী করত। গ্রেফতারকৃত কাজিমের ছেলে পারভেজ আনুমানিক দেড় মাস আগে সন্ধ্যার দিকে গোপনে ভিকটিমের বাড়ীর খাটের নিচে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় গৃহকত্রী ফাতেমার হাতে আটক হয়েছিল। সে ধর্ষণসহ হত্যা মামলার আসামী বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃতরা ঘটনার কয়েকদিন আগে জানতে পারে যে, কাজল মালয়েশিয়া থেকে হুন্ডির মাধ্যমে প্রায় ২০/২২ লাখ টাকা পাঠিয়েছে। এমন খবরের ভিত্তিতে ঘটনার ৫/৭ দিন আগে গ্রেফতারকৃত কাজিম ও হানিফ একত্রিত হয়ে কাজলের বাড়ীতে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। পরে অন্য আসামী বশির, হেলাল, এলাহি এবং অন্যান্যদেরকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পনা চুড়ান্ত করে। এদের দলে কাজিম এর ছেলে পারভেজও ছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৩ এপ্রিল ভিকটিমদের বাড়ীর পিছনের এলাকায় জড়ো হয়। প্রথমে পারভেজ ভেন্টিলেটর দিয়ে বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করে। এছাড়া হানিফ মাদারগাছ এবং পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে সিড়ির ঢাকনা খুলে বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করে। পরে অন্যদের প্রবেশের জন্য বাড়ীর পিছনের ছোট গেট খুলে দেয়া হয়। কাজিম, হেলাল, বশির, এলাহি এবং আরও কয়েকজন পিছনের গেট দিয়ে বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করে। এক পর্যায়ে কাজিম এবং হেলাল সহ তিনজন প্রথমে ফাতেমার ঘরে ঢুকে এবং কাজিমের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফাতেমাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকাগুলো দিতে বলে। ফাতেমা এত টাকা নেই বলে জানায় এবং তার রুমের স্টিলের শোকেসের উপর রাখা টেলিভিশনের নিচে চাপা দেয়া ৩০ হাজার টাকা বের করে দেয়। পরবর্তীতে ফাতেমার স্বণার্লংকারগুলো ছিনিয়ে নেয় এবং পালাক্রমে ধর্ষণ করে। অন্যান্য রুমেও লুটতরাজ চলতে থাকে। আসামী বশির ও এলাহিসহ আরও একজন ভিকটিম নুরাকে তাদের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে গলার চেইন ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। তাকেও পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়। এছাড়া আসামী বশিরসহ আরও একজন ফাতেমার ছোট মেয়ে হাওয়ারিনকে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করে। আসামী পারভেজও এই হত্যাকান্ড ও ধর্ষণে অংশগ্রহণ করে।
গ্রেফতারকৃতরা আরো জানায়, ফাতেমা ও তার মেয়েরা গ্রেফতারকৃতদের কয়েকজনকে চিনে ফেলায় তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়। হত্যাকান্ডে আসামীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও গলাকেটে ভিকটিমদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এই হত্যাকান্ডে তাদের আরও কয়েকজন সক্রিয় সহযোগির সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে বলে জানায় র্যাব ১।