কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় বিশ্ব মহামারি করোনাভাইরাস বা কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত ৭০ জনের মধ্যে ৬৯ জনই সুস্থ্য হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন। আর একজন উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করার পর করোনা পজিটিভ ফলাফল পাওয়া যায়। অপরদিকে গত ১৮ এপ্রিল থেকে সোমবার পর্যন্ত গত ২২ দিনে উপজেলায় নতুন কোন করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়নি। তাই আপাত দৃষ্টিতে কাপাসিয়াকে করোনা মুক্ত বলা যায়।
বিশ্ব মহামারি করোনাভাইরাস বা কোভিড ১৯ এ কালো ছায়া সারা বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করেছে। বিশ্বে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৪২ লাখ মানুষ আর মৃত্যুবরণ করেছেন পৌনে ৩ লাখ মানুষ। বাংলাদেশে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৬৯১ জনের। মারা গেছেন ২৩৯জন। দেশে করোনার তৃতীয় হটস্পট গাজীপুর। জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২৫৯ জন। মারা গেছেন ২ জন। এর মধ্যে কাপাসিয়ায় ৭০ জন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সালাম সরকার জানিয়েছেন, উপজেলায় সোমবার পর্যন্ত মোট ৭০ জন করোনা পজিটিভ ছিলেন। এদের মধ্যে তিনি নিজেসহ স্বাস্থ্য বিভাগের ৩১ জন, একটি কারখানার শ্রমিক ১৩ জন, সাংবাদিক ও স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে একজন ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়েছেন। তিনিসহ বাকীদের সকলে হাসপাতালের বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম আইসোলেশনে থেকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে সুস্থ্য হয়েছেন। কাপাসিয়ায় আক্রান্ত সকলেই প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম আইসোলেশনে থেকে সুস্থ্য হয়ে করোনা জয় করেছেন। সকলের তৃতীয় ধাপের করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ পাওয়া গেছে। অপর দিকে গত ১৮ এপ্রিল থেকে অধাবদি নতুন কোন করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়নি। তাই আপাত দৃষ্টিতে কাপাসিয়াকে করোনা মুক্ত বলা যায়। এ পর্যন্ত উপজেলায় মোট ৭৯৫ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
জানা যায়, দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর প্রথম অবস্থায় উপজেলায় একটি কারখানায় দুই দফায় ১৩ জন শ্রমিক করোনা শনাক্ত হয়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ ৩১ স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হলে উপজেলায় আতংক ছড়িয়ে পরে। এ অবস্থায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমির পরামর্শ ও গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলামের নির্দেশনায় কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা: ইসমত আরা কাপাসিয়ায় সকল হাট বাজার, যানবাহন চলাচল ঘোষণা করেন। তিনি বিরামহীন উপজেলায় লক ডাউন কড়াকড়িভাবে বাস্তবায়ন করেন। একারণে গত ১৮ এপ্রিলে পর থেকে গত ২২ দিন কাপাসিয়ায় নতুন কোন করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। কাপাসিয়ায় করোনা আক্রান্ত ৭০ জনের ৬৯ জনই সুস্থ, মৃত্যু ১
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সন্দেহে ২৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। নমুনা পরীক্ষার পর রবিবার রাতে ওই ২৮ জনের মধ্যে একজনেরও পজিটিভ রিপোর্ট আসেনি। কাপাসিয়া উপজেলায় এ পর্যন্ত ৭৯৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।
গত ১০ এপ্রিল কাপাসিয়া উপজেলার দস্যুনারায়নপুর এলাকার ছোঁয়া এগ্রো লিমিটেড কারখানার এক শ্রমিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসলে তাকে সন্দেহ হলে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হলে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ওই কারখানার ভিতরের আরো ১২ শ্রমিক করোনা পজিটিভ হলে কারখানা ও পুরো গ্রাম লক ডাউন ঘোষণা করা হয়।
এরপর উক্ত শ্রমিকের সংস্পর্শে আসা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও অন্যান্যদের নমুনা ঢাকায় পাঠানো হলে একে একে স্বাস্থ্য বিভাগে ৩১ জন কেরোনা পজিটিভ পাওয়া যায়।
এ অবস্থায় গাজীপুর জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় উপজেলা প্রশাসন পুরো কাপাসিয়া লকডাউন ঘোষণা করেন। প্রথমে উপজেলা সদর বাজারসহ পাঁচটি বাজার অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়। এতেও ঘরে থাকা ও সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখার উদ্যোগ সফল না হওয়ায় পরে উপজেলার সকল হাট-বাজার, পাড়া মহল্লার সকল দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়। উপজেলায় প্রবেশ সকল পথ ও সকল নৌপথ বন্ধ করে দেয়া হয়। এসব কারণে গত ১৬ এপ্রিল থেকে উপজেলায় গত ২২ দিনে নতুন কোন করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। এমনকি কেউ ফোনে করোনার উপসর্গ নিয়ে কোন অভিযোগও করেনি।
লকডাউন কড়াকড়িভাবে পালন করে, মানুষকে ঘরে রাখা ও সামাজিক দুরত্ব বঝায় রাখার কারণেই উপজেলায় নতুন কোন করোনা পজিটিভ শুন্য হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।