গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে রবিবার উদ্বোধন করা হয়েছে করোনাভাইরাস শনাক্ত পরীক্ষার পিসিআর ল্যাব। সকালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে পিসিআর ল্যাবের উদ্বোধন করেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে পিসিআর ল্যাবের শুভ উদ্বোধন করা হয়। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব এডভোকেট মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, হাসপাতালরে পরিচালক ডাঃ মোঃ খলিলুর রহমান, গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস.এম. তরিকুল ইসলাম, পুলিশ কমিশনার মোঃ আনোয়ার হোসেন বিপিএম(বার), পিপিএম(বার), সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ খায়রুজ্জামান, অত্র মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আসাদ হোসেন, মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শেখ আব্দুল ফাত্তাহ, মাইক্রোবায়োলজী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ এস. কে. সাইফুল আলম প্রমুখ।
গাজীপুরের উপজেলার এবং অন্যান্য বুথ থেকে সংগৃহীত নমুনা সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে উক্ত ল্যাবে পরীক্ষা করে অতিদ্রুত রিপোর্ট প্রদান করা হবে।
রাজধানীর অতি নিকটে হওয়ার কারণে শিল্প নগরী গাজীপুর দেশের মধ্যে করোনা সংক্রমণের দিক দিয়ে তৃতীয় হটস্পট হিসাবে অনেক আগেই চিহ্নিত হয়েছে। গাজীপুর জেলায় রয়েছে, কয়েক হাজার তৈরী পোশাক শিল্প, কল কারখানা। নানা কারণে গাজীপুর করোনা সংক্রমণের প্রবল ঝুকির মধ্যে রয়েছে। কিন্তু এখানেই এতদিন করোনাভাইরাস পরীক্ষার কোন ল্যাব ছিল না।
গাজীপুরে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের বাস। এখানে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাত্র ১২ হাজার ৭৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে থেকে ১ হাজার ৪৯০ জনের করোনা পজিটিভ ফলাফল পাওয়া গেছে। নানা তাদের মধ্যে সুস্থ ২৮৬ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১১ জন।
অপরদিকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিকে কোভিড ১৯ চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু গাজীপুরে করোনা পরীক্ষার কোন ল্যাবরেটরী না থাকায় জেলাবাসীকে করোনা পরীক্ষার জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল। আর এসব কারণে গাজীপুরে এখন অন্তত একটি করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাব স্থাপন অত্যন্ত জরুরী ছিল। নানা জটিলতায় নমুনা সংগ্রহ, ঢাকায় প্রেরণ ও ফলাফল প্রাপ্তীতে বিলম্ব হচ্ছে। অনেকে নমুনা পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে করতে হতাশ হয়ে ঢাকা চলে যেতেন। আবার অনেকে নমুনা দিয়ে ৪/৫ দিনে ফলাফল জানতে পারেন না। এসব কারণে গাজীপুরে করোনা পরীক্ষার জন্য একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী ছিল।
এরকম পরিস্থিতিতে গাজীপুরে একটি করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাকে আন্তরিক সহযোগিতা করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলামের প্রচেষ্টায় জেলাবাসীর এ অভাব পুরণ হতে চলেছে। আগামী রবিবার গাজীপুরে উদ্বোধন হবে করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাব।
এ বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, জেলাবাসীর এ প্রত্যাশা ও বাস্তবতার নিরিখে বিষয়টির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যে চিঠি পাঠাই। গাজীপুরের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে পিসিআর ল্যাব রয়েছে। আমরা সেই মেসিনটি শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে স্থাপন করেছি। এ বিষয়ে বিষয়ে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও মাননীয় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব জাহিদ আহসান রাসেল এমপি মহোদয় সার্বিক সহযোগিতা করেন। তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথা বলে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে পিসিআর ল্যাব ব্যবহারের জন্য অনুমতির নিতে মাননীয় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ইতিমধ্যেই মাননীয় কৃষিমন্ত্রী মহোদয়ের সাথে কথা বলে সম্মতি নিয়েছেন। এছাড়া যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথা বলেছেন। এখন ল্যাব স্থাপনের জন্য আমাদের ক্যাবিনেট প্রয়োজন ছিল। এজন্য আমি ও মাননীয় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মহোদয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করি। এছাড়া ঢাকার তেজগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (Medical Store Depot -CMSD) থেকে কেবিনেট এনে তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজে একটি করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাব করার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের সহযোগিতায় গাজীপুরবাসীর প্রত্যাশা পূরণ হতে চলেছে। গাজীপুরবাসী করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাব পাচ্ছেন। গাজীপুরবাসীকে আর করোনা পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা বা ভোগান্তি পোহাতে হবে না।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো: খলিলুর রহমান আরো জানান, এখানে প্রতি শিফটে একসাথে ১শ নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। দৈনিক দুই শিফটে ২শ নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। তবে, নমুনা পরীক্ষার শুরুর প্রথম কয়েকদিন সীমিত সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করে যাদের পজিটিভ ফলাফল পাওয়া যাবে, সেগুলো ঢাকায় পাঠানো হবে। সেখানে প্রাপ্ত ফলাফল পুনরায় যাচাই করা হবে। এভাবে কয়েকদিন যাচাই করার পর দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে এখানে পুর্ণ পরীক্ষা শুরু হবে।