গণবাণী ডট কম:
আমরা সাধারণত নর্মাল পানি বা ঠাণ্ডা পানি পান করে থাকি। তবে, গরম পানি পান করা যে আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারি, তা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। চৈনিক চিকিৎসাবিদ্যা ও ভারতীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী, এক গ্লাস গরম পানি পান করে দিন শুরু করলে হজম সহজ হয় এবং অনেকগুলো স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখা, শরীরকে সচল রাখা, ত্বক ও চুলকে ঠিক রাখা, কিডনির যত্ন নেওয়া, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি কাজের জন্য পানি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারি একটি উপাদান। ঠাণ্ডা পানির পরিবর্তে গরম পানি পান করলে আপনি পেতে পারেন অবিশ্বাস্য ফল। গরম পানি হজম ক্ষমতা ও রক্ত চলাচলকে উন্নত করতে, ওজন হ্রাস করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উন্নত করতে সহায়তা করে। দেখে নিন গরম পানি পানের উপকারিতাগুলো-
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে :
গরম পানির আছে ভ্যাসো ডায়ালেটর বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ তা রক্ত নালিকাগুলোকে প্রসারিত করে এবং হজমে সহায়তা করে। সকালে খালি পেটে গরম পানি পান করলে তা পরিপাকতন্ত্রকে উত্তপ্ত করে এবং এর আশেপাশের রক্ত নালিকাগুলোকে সচল করে। এরপর খাবার খাওয়া হলে তা সহজে হজম হয়। পাকস্থলী এবং অন্ত্রের মধ্য দিয়ে যাবার সময় হজম অঙ্গগুলিকে আরও ভালোভাবে হাইড্রেটেড করে, যার ফলে বর্জ্য বস্তু শরীর থেকে নিষ্কাশিত হয় এবং হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম পানি পান করুন।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে :
এটি বহু মানুষের একটি সাধারণ সমস্যা। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে রাত্রে ঘুমানোর আগে এবং প্রতিদিন সকালে গরম পানি পান করে দিন শুরু করলে পরিপাকতন্ত্র সুস্থ থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি কমায়। এটি অন্ত্রের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় অন্ত্রকে সংকুচিত করে বর্জ্য পদার্থ দূর করতে সহায়তা করে। পানির উত্তাপ অন্ত্রকে সচল রাখে এবং মলত্যাগ সহজ করে। সম্ভব হলে সারাদিন ধরেই হালকা গরম পানি পান করুন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে :
অন্য কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু গরম পানি পান করলে আপনার ওজন কমবে না। তবে ডায়েট ও ব্যায়ামের পাশাপাশি নিয়মিত গরম পানি পান করলে ওজন কমে। সকালে ঘুম থেকে উঠে কুসুম গরম পানি এবং পাকা লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে শরীর সারাদিন ক্যালোরি পোড়ায়। এছাড়া এতে পেট ফাঁপা রোধ হয়।
সাইনাস পরিষ্কার হয় :
সর্দি লেগে গেলে গরম পানি পান করাটা খুবই কাজে আসে। ইনফেকশন সারাতেও তা কাজ করে। গরম পানির কারণে সর্দি পাতলা হয়ে আসে এবং শরীর থেকে দ্রুত বের হয়ে যায়।
দাঁতের উপকারে আসে :
আসল ও নকল- দুই ধরণের দাঁতের জন্যই গরম পানি উপকারী। ঠাণ্ডা পানি পান করলে অনেক সময় দাঁতের ফিলিং দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। অবশ্য খুব বেশি গরম পানিও ক্ষতি করে। দাঁত ভালো রাখতে কুসুম গরম পানি পান করুন।
শরীর থেকে টক্সিন দূর করে :
শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বাড়ায় গরম পানি। এতে শরীর ঘামে, ফলে শরীর থেকে বিষাক্ত ও বর্জ্য পদার্থের নির্গমন ত্বরান্বিত হয়। গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন। এছাড়া গ্রিন টি ও পান করতে পারেন।
ব্যথা কমায় :
ঠাণ্ডা পানি পান করলে পেশী টানটান হয়ে আসে, অন্যদিকে গরম পানি পান করলে পেশীতে রক্ত চলাচল বাড়ে এবং পেশী শিথিল হয়। জয়েন্টের ব্যথা থেকে শুরু করে পিরিয়ডের ক্র্যাম্প, সব ধরণের ব্যথা কমাতে কাজে আসে গরম পানি। এছাড়া ঘুমাতে যাবার আগে পানি পান করাটাও শরীর ঝরঝরে এবং ব্যথামুক্ত রাখে।
রক্ত চলাচল ভালো করে :
গরম পানিতে গোসল করাটা যেমন রক্ত চলাচলের জন্য উপকারী, তেমনি গরম পানি পান করাটাও উপকারী। এতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদযন্ত্র থাকে সুস্থ।
আপনাকে অমায়িক করে :
ঠাণ্ডা পানীয় পান করার পরিবর্তে আপনি যদি গরম পানি পান করেন, তাহলে অন্যরা আপনাকে ভালো চোখে দেখবে। এছাড়া আপনার হাতে গরম পানির মগ বা কাপ থাকলে আপনার আচরণটাও বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ হয়, দেখা গিয়েছে এক গবেষণায়।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট