গণবাণী ডট কম:
আমেরিকা, ইউরোপসহ শীত প্রধান দেশগুলোতে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, বাংলাদেশে আক্রান্তের হার শীতপ্রধান দেশের মতো হবে না। তবে শীতে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থাকায় সব নাগরিকের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরতেই হবে। নইলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ।
সম্প্রতি ঘরের বাইরে সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে সরকার। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশসহ কার কী ভূমিকা হবে সে বিষয়েও বলা হয়েছে। তার পরেও মাস্ক পরলেই কি করোনা ভাইরাস ঠেকানো যাবে, মাস্ক পরলে দম বন্ধ হয়ে আসে’, মাস্ক পরলে বিরক্ত লাগে’-এমন নানা অজুহাতে মাস্ক ছাড়াই ঘর থেকে বের হয়ে পড়ছেন নাগরিকরা। এতে ঝুঁকি বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসলে চিকিৎসার কোনো সমস্যা হবে না। ইতিমধ্যে চিকিৎসার সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রথম দিকে এলোমেলো অবস্থা ছিল। সেই অবস্থা আমরা কাঠিয়ে উঠেছি। অনেক অভিজ্ঞতাও অর্জন হয়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাও অনেক অগ্রগতি হয়েছে।
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ঐ দেশগুলো একাধিকবার লকডাউন ও কারফিউ দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে। তবে আমাদের দেশে শীত প্রধান দেশের মতো অবস্থা হবে না। কিন্তু প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। সরকারের করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার আগাম প্রস্তুতি সন্তোষজনক বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি সার্বিক বিষয় মনিটরিং করছে এবং সরকারকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে। অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, সবার মাস্ক পরতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য ঢাকা শহরের ৮০ ভাগ মানুষ মাস্ক পরেন না। আর গ্রামের ৯৯ ভাগ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করেন না। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, করোনা সংক্রমণ আগের চেয়ে একটু বাড়ছে। তাই সবার মাস্ক পরতেই হবে। মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে যা যা করার সরকারের তাই করতে হবে। নইলে হঠাৎ করে সংক্রমণ বেড়ে গেলে তখন সমস্যা দেখা দিতে পারে। চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম ব্যবস্থা।
সরকারের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। নো-মাস্ক, নো-সার্ভিস এই বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ শীতকালে দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ করোনা ভাইরাস মহামারির ছোবল অনেকটাই সামলে নিতে পারলেও যে কয়েকটি দেশ বেশি সময় ধরে ধুঁকছে তার একটি বাংলাদেশ; সংক্রমণের মধ্যেই স্বাভাবিক জীবনে ফেরা এখানকার লোকজনের একটি বড় অংশই বাইরে মাস্ক পরতেও চাচ্ছেন না। সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করা না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, পঙ্গু হাসপাতাল, নিউরো সাইন্স ইনস্টিটিউট, চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও ক্যানসার ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আগত রোগীদের মধ্যে কিছু কিছু করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। যাদের কোনো লক্ষণ নাই। এই বিষয়টি খুবই বিপজ্জনক। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আগত রোগী ও অভিভাবকদের মাস্কসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাসপাতালে আসার আহ্বান জানান। খবর: দৈনিক ইত্তেফাক।