গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরে মহিলা, শিশু ও কিশোরী হেফাজতীদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্র থেকে ১৪ নিবাসী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কেন্দ্রের সহকারি হোস্টেল সুপার মরিয়ম খাতুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। হোস্টেলে নিয়মিত না থাকাসহ দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবাসন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদা খানম।
গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া এলাকার মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মহিলা, শিশু ও কিশোরী হেফাজতীদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্র রয়েছে। এখানে মূলত কোর্ট হতে পাঠানো বিভিন্ন মামলার ভিকটিম/ হেফাজতীগণ (বাড়ী হতে পালায়ন, হারানো, ধর্ষন, হত্যা মামলার স্বাক্ষী ও অন্যান্য মামলা) অত্র কেন্দ্রে হেফাজতী হিসাবে অবস্থান করে। গেল বুধবার (২৪ মার্চ) গভীর রাতে সেখান থেকে ১৪ জন নিবাসী মূল ভবনের তৃতীয় তলার স্টোর রুমের জানালার গ্রিল কেটে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাবার আগে এ কেন্দ্র মোট ২৮ জন নিবাসী ছিল।
এ ঘটনার খবর পেয়ে বুধবার রাত আড়াইটার দিকে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) সদর থানা পুলিশ মহানগরীর জয়দেবপুর রেল স্টেশন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পালিয়ে যাওয়াদের মধ্য থেকে ৭ জনকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পরদিন বৃহস্পতিবার বিকালে কেন্দ্রের স্টোর কিপার আব্দুর রহমান মোল্লা বাদী হয়ে পলাতক ১৪ জনকে আসামি করে জিএমপির বাসন থানায় মামলা দায়ের করেছেন। পালিয়ে যাওয়া নিবাসীদের বয়স আনুমানিক ১৫-২৫ বছর।
ঘটনার খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম ও জিএমপির কমিশনার এস এম লুৎফুল কবির কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। পরে বিকালে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: সায়েদুল ইসলামও কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: সায়েদুল ইসলাম ঘটনা তদন্তের জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এবং মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক মনোয়ারা ইসরাতকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে পরবর্তী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, ওই আবাসন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদা খানম, উপ-সচিব জগদীশ দেবনাথ, গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কালাম ও গাজীপুর জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহনাজ আক্তার।
আবাসন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদা খানম আরো জানিয়েছেন, কেন্দ্র থেকে পালিয়ে যাওয়া ১৪ জনের মধ্যে ঘটনার রাতেই পুলিশের সহায়তায় জয়দেবপুর রেল স্টেশন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। এছাড়া পলাতক থাকা ৭ জনের মধ্যে ২ জনের অবস্থান জানা সম্ভব হয়েছে। অবস্থান সনাক্ত হওয়া এ দুইজনের মধ্যে একজন আছে ঢাকার কেরানীগঞ্জে এবং অপরজন নরসিংদীতে। এই দুইজন বর্তমানে তাদের স্বজনদের হেফাজতে রয়েছে। তাদের অভিভাবক ফোনে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, তারা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের কেন্দ্রে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। সুস্থ হওয়ার পর যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের হেফাজত কেন্দ্রে ফেরত পাঠানো হবে।
তিনি আরো জানান, বাকি পাঁচজনেরও অবস্থান সনাক্ত করা হয়েছে। তবে পুলিশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের কারণে ব্যস্ত থাকায় তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুতই তাদেরও উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সহকারি হোস্টেল সুপার মরিয়ম খাতুনকে কেন সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে জানতে চাইলে ফরিদা খানম বলেন, মরিয়ম খাতুন নিয়মিত হোস্টেলে অবস্থান করতেন না। তাকে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, জামালপুরের উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে এ কেন্দ্রে ফুলটাইম অবস্থান করার জন্য তত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু তিনি গত দুইমাসেও কেন্দ্রে যোগদান না করায় তাকেও শোকজ করা হয়েছে।
ফরিদা খানম আরো জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার ঘটনা তদন্তের গঠিত কমিটির প্রধান মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এবং মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক মনোয়ারা ইসরাত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ কারণে তদন্ত কাজে কোন অগ্রগতি হয়নি। তাই দ্রুত তদন্তের স্বার্থে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে জানতে পেরেছি। নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ হলেই তদন্ত শুরু হবে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আবাসন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদা খানম বলেন, এখানে ফুল টাইম অফিসার নেই। আমি এ কেন্দ্রের এডিশনাল দায়িত্ব পালন করছি। ফুলটাইম কর্মকর্তা নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত সপ্তাহে অন্তত দুইদিন এ আবাসন কেন্দ্রে ফুলটাইম অবস্থান করবো।
পলাতকদের মধ্যে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থানার দেউলী এলাকার সৈয়দ মিল্টনের মেয়ে মলি আক্তার (১৭), নরসিংদীর শিবপুর থানার ধনুয়া এলাকার শাহ আলমের মেয়ে মনিরা (১৫) এ দুজনের অবস্থান জানা গেছে। তারা তাদের স্বজনদে কাছে আছে বলে অভিভাবকগণ জানিয়েছেন।
অপরদিকে, এখনো যারা পলাতক রয়েছে তারা হলেন, লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা থানার পাঠগ্রামের মিলন মিয়ার মেয়ে মিম আক্তার (১৭), মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানার বড় নওয়াপাড়া এলাকার কামাল সরদারের মেয়ে বন্যা আক্তার নিঝুম (১৫), ঢাকার আশুলিয়ার ওমর ফারুকের মেয়ে ফাহমিদা আক্তার রিয়া (১৬), নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জ থানার মিজমিজ বাতান পাড়া মাদ্রাসা রুটের কবির মিয়ার মেয়ে তাসলিমা আক্তার (১৫) এবং নারায়নগঞ্জের বন্দর থানার বাঘবাড়ি এলাকার আ: রশিদের মেয়ে জামিলা খাতুন সুইটি (১৭)।