গণবাণী ডট কম:
বিশ্ব মহামারি করোনাভাইরাস বা কোভিড ১৯ পরিস্থিতির অবনতির কারণে আগামী ১৪ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত আট দিনের জন্য সার্বিক কার্যাবলী ও চলাচলে নতুন বিধি নিষেধ আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। আজ সোমবার (১২ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সেখানে ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নতুন এই প্রজ্ঞাপনে সরকারি, বেসরকারি অফিস এবং স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, শপিংমলসহ অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট এই সময়ে পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। সড়ক, নৌ, রেল, অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট-সব ধরণের পরিবহন বন্ধ থাকবে।
অপরদিকে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শর্ত সাপেক্ষে খোলা রাখা যাবে শিল্প-কারখানা।
নতুন প্রজ্ঞাপনে আরোপিত বিধিনিষেধগুলো হলো:
১. সব সরকারি, আধাসরকারি, সায়ত্ত্বশাসিত ও বেসরকারি অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল বন্দর এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
২. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৩. সব ধরনের পরিবহন (সড়ক, নৌ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না।
৪. শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের স্ব স্বপ্রতিষ্ঠান থেকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।
৫. আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থল, নদী ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বর্হিভূত থাকবে।
৬. অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়ত করা যাবে।
৭. খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ্হ করা ঘাবে। শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে।
৮. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
কয়েকদিন ধরেই সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছিল একটি ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ কথা। সেখানে বলা হচ্ছিল কোন শিল্প কারখানা খোলা রাখা হবে না এবার। কিন্তু রবিবার পোশাক শিল্পের মালিক সংগঠনগুলো দাবি জানিয়েছিল, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা খোলা রাখার কথা। সেই ধারাবাহিকতায় প্রজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে, এবারও ছাড় দেয়া হলো শিল্প-কারখানাগুলোকে।
৯। স্বাস্থ্যবিধি মেনে জুম্মার নামাজ এবং তারাবীর নামাজ হবে। তবে এসব নামাজে জমায়েত কীভাবে করা যাবে- সে ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্দেশনা জারির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
১০। বোরো ধান কাটার জন্য জরুরি প্রয়োজনে কৃষি শ্রমিক এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারবেন। কৃষি শ্রমিক পরিবহনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর প্রশাসনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সমন্বয় করার জন্য।
১১। বিধি-নিষেধগুলো কার্যকর করতে সারাদেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন পদক্ষেপ নেবে এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের নিয়মিত টহল জোরদার করবে।
১৪ই এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ২১শে এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ কার্যকর থাকবে বলে বলা হয়েছে। তবে এই প্রজ্ঞাপনেও লকডাউন বা সাধারণ ছুটি শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। যদিও সরকারর বিভিন্ন পর্যায় থেকে লকডাউন শব্দ ব্যবহার করে সেটা কঠোরভাবে কার্যকর করার কথা বলা হয়েছিল।
এর আগে গত ৫ই এপ্রিল থেকে দেশে চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও তা কার্যকর হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে গত বছরের ৮ই মার্চ করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর ২৬শে মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন টানা দুইমাস পরিবহন, মার্কেট ও অফিস-আদালত বন্ধ থাকে।
এই বছরের মার্চ থেকে আবার সংক্রমণ বৃদ্ধির হার বেড়ে যাওয়ায় সরকার এপ্রিলের শুরুতে চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে।