গণবাণী ডট কম:
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিম বলেছেন, একজন সাংবাদিককে অবশ্যই গ্রাজুয়েট হতে হবে। তারপর তিনি প্রেস কাউন্সিলে আবেদন করবেন। আমরা যাচাই-বাছাই করে তাকে সনদ দিব। তারপর তিনি সাংবাদিক হবেন। সাংবাদিক পরিচয় দিতে হলে প্রেস কাউন্সিলের সনদ লাগবে।
তিনি আরো বলেন, তবে বর্তমানে যারা পেশায় রয়েছেন, তাদের মধ্যে যদি কারো গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী না থাকে, তাহলে তাকে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতার সনদ দাখিল করতে হবে। নতুন নীতিমালায় এরমকই বিধান রাখা হয়েছে। এটি এখন সংসদীয় কমিটিতে আছে।
তিনি বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল আয়োজিত প্রেস কাউন্সিল এ্যাক্ট ১৯৭৪ ও প্রেস কাউন্সিল প্রণীত সাংবাদিকদের জন্য আচরণবিধি প্রতিপালন শীর্ষক সেমিনার ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, প্রস্তাবিত আইন প্রণীত হলে গ্র্যাজুয়েশন ছাড়া নতুন কোন সাংবাদিক আসবে না। আর এখন যারা আছেন তাদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কোন সাংবাদিক থাকবেন না। শুধু প্রেস কাউন্সিলের কার্ড গ্রহণযোগ্য হবে। প্রেস কাউন্সিলের কার্ডধারীরাই নিজেকে সাংবাদিক হিসাবে পরিচয় দিতে পারবেন। ফলে আশা করা যায়, সাংবাদিকতা পেশাগত মান উন্নয়ন হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা এই নীতিমালা করার পর দেশের সকল জেলা প্রশাসককে আমরা চিঠি দিয়েছি। জেলা প্রশাসকগণ নিজ নিজ জেলার যে সমস্ত পত্রিকার ডিক্লারেশন রয়েছে, সেসব পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিকদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে আমাদের কাছে পাঠানোর জন্য চিঠি দেওয়া হয়। আমরা ইতিমধ্যে এক বছরে ২২ টি জেলা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়েছি। এসব তথ্য দিয়ে আমরা ডাটাবেজ তৈরি করছি। আশা করি অন্য জেলাগুলো থেকেও দ্রুত তথ্য পাওয়া যাবে। ডাটাবেজ তৈরি করার পর প্রত্যেকের ব্যক্তিগত তথ্য আমরা সন্নিবেশিত করবো।
সাংবাদিকদের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রেস কাউন্সিলের ভবিষ্যৎ ভূমিকা কি হবে এবং সাগর রুনি হত্যার বিচারে বার বার তারিখ পিছানো সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কিছু করতে পারলে খুবই ভালো হতো। বিশেষ করে সেদিন নাদিম চলে গেল, বেশ কিছু বছর আগে সাগর রুনি চলে গেছে। তিনি বলেন, একটি কেস ৯৯ বার টাইম পৌঁছানো হবে, তদন্ত শেষ হবে না-এটি দেখতেও খারাপ লাগে, শুনতেও খারাপ লাগে। তিনি বলেন, আইনে আছে হত্যা মামলায় ১২০ দিনের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করতে হবে। ১২০ দিনে বড়জোর চার থেকে পাঁচটা তারিখ পড়তে পারে। এখানে ৯৯টি তারিখ পড়ে গেছে, এখনো তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ- তারা তদন্ত শেষ করতে পারেনি, বিচার শুরু হয়নি! একটু থেমে তিনি বলেন, এটাকে কি বলবো, শুধু দুর্ভাগ্যই বলবো এর বেশি কিছু আমার বলার নেই। পরে তিনি বলেন, তবে আমি আশা করব, ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। তিনি আরো বলেন, সাগর রুনির মামলার মত দ্বিতীয় আর কোন মামলার ঘটনায় যেন এ রকমটি না ঘটে-এটি আমার প্রত্যাশা।
তিনি বলেন, পত্রপত্রিকায় দেখেছি জামালপুরের নাদিম খুন হয়েছেন। বিষয়টি আমাকে ব্যথিত করেছে। আমি চাইব কে দোষী কে দোষী না, সেটি বিষয় নয়, যে দোষী তার যেন দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয়, সেটি আমি চাইবো।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বেতন ভাতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের বেতন ভাতার ব্যাপারটি নিশ্চিত হওয়া দরকার। ইলেকট্রনিক মিডিয়া কিংবা প্রিন্ট মিডিয়া। মালিকদের উচিত ওয়েজ বোর্ড মেনে নিয়ে বেতন ভাতা প্রদান করা। তিনি বলেণ, ‘আমি আমার সাংবাদিকদের বেতন দেবো, আমি তাদের ঠকাবো কেন? তার দ্বারা কাজ আদায় করছি, তার দ্বারা সমাজের সম্মান পাচ্ছি, সেই কারণে আমার উচিত আমার সাংবাদিকদের মূল্যায়ন করা’।
গাজীপুর সার্কিট হাউস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান। গাজীপুর জেলা তথ্য কর্মকর্তা ওবায়দুল কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার ফাহিম আশজাদ।
অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ বেতারের গাজীপুর প্রতিনিধি মাসুদুল হক, এটিএন বাংলার গাজীপুর প্রতিনিধি মাজহারুল হক মাসুম, আজকের পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, ডিবিসি নিউজ এর গাজীপুর প্রতিনিধি মাহমুদা শিকদার, এশিয়ান টিভির গাজীপুর প্রতিনিধি আরিফ হোসেন আবির, দৈনিক অব ডেলি অবজারভার এর গাজীপুর প্রতিনিধি মোসাদ্দেক আলী, নিউ ন্যাশনের গাজীপুর প্রতিনিধি বাদামি বিপ্লব, দৈনিক দিনকালের গাজীপুর প্রতিনিধি মোঃ দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।