গণবাণী ডট কম:
২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেছে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। দলটির এবারের স্লোগান হচ্ছে, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি, বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে তথ্যচিত্রে আওয়ামী লীগ শাসনমালের উন্নয়নের বিবরণ তুলে ধরা হয়।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ড. আব্দুর রাজ্জাকের স্বাগত বক্তব্যের পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অতঃপর ইশতেহার ঘোষণা করেন, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক, প্রকৌশলী, বুদ্ধিজীবী, তরুণ সমাজের প্রতিনিধি, দেশি-বিদেশি সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
২০০৮ সালে ‘দিনবদলের সনদ’ শিরোনামে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালে ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে টানা দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসে দলটি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ। সে সময় ২০৪১ সালে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং ২১০০ সালে নিরাপদ ব-দ্বীপ পরিকল্পনার রূপরেখা প্রদান করা হয়েছিল।
এবার থাকছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের লক্ষ্য, যেখানে স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত্তিতে হবে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি।
ইশতেহার ঘোষণাকালে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় গেলে নাগরিককেন্দ্রিক, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, জ্ঞানভিত্তিক, কল্যাণমুখী, সমন্বিত দক্ষ ‘স্মার্ট প্রশাসন’ গড়ার মাধ্যমে জনগণকে উন্নত ও মানসম্মত সেবা প্রদান ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে।
তিনি বলেন, মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে দক্ষ, উদ্যোগী, তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর, দুর্নীতিমুক্ত দেশপ্রেমিক ও জনকল্যাণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলমান থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর, উন্নত, মানবিক ও জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে কাজ করেছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা বহুগুণে বেড়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় গেলে একটি স্মার্ট বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে স্মার্ট ও আধুনিক হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
ইশতেহার ঘোষণার বক্তব্যে দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য কমানোর বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে দারিদ্র্যের হার ১১ শতাংশে, চরম দারিদ্র্যের অবসান এবং ২০৪১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশে নামিয়ে আনব।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘোষিত ইশতেহারে যেসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া, কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা, লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো, ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্য সেবা সুলভ করা, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, সাম্প্রদায়িকতা এবং সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা, সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।
ইশতেহারের উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সকল সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা আরও উন্নত করা হবে। জ্বালানি সরবরাহ নির্ভরযোগ্য করার লক্ষ্যে গ্রুপ ভিত্তিতে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট ও সৌরশক্তি প্যানেল বসানোর উৎসাহ ও সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
ইশতেহারের ‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট ভিলেজ’ অংশে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। গ্রাম পর্যায়ে কৃষিযন্ত্র সেবাকেন্দ্র, ওয়ার্কশপ স্থাপন করে যন্ত্রপাতি মেরামতসহ গ্রামীণ যান্ত্রিকায়ন সেবা সম্প্রসারণ এবং এসবের মাধ্যমে গ্রামীণ যুবক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদনশীল কর্মসংস্থানের কর্মসূচি সম্প্রসারিত করা হবে। এসব সেবার পাশাপাশি হালকা যন্ত্রপাতি তৈরি ও বাজারজাত করতে বেসরকারি খাতের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ এবং উপকরণে বিনিয়োগ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
‘গ্রামে অর্থনৈতিক বিকাশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও বিনোদনমূলক কর্মসূচি বৃদ্ধি করা হবে।গ্রামের তরুণ যুবসমাজের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা কমাতে গ্রামেই আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তরুণদের কৃষি, শিল্প ও ব্যবসায় উৎসাহ বাড়াতে সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।’
আওয়ামী লীগ দাবি করছে, তাদের বিগত শাসনামলে প্রতিটি উপজেলায় রাস্তাঘাট উন্নত ও সম্প্রসারিত হয়েছে, যা প্রতিটি গ্রামকে উপজেলা সদরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে এবং উপজেলার সঙ্গে জেলা সদর ও জাতীয় সড়ক যুক্ত রয়েছে। প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হয়েছে। সুপেয় পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে, যা আরও উন্নত ও সম্প্রসারিত করা হবে।
ইশতেহারে আরো বলা হয়েছে, তাদের সরকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ব্যয়ভার গ্রহণ করেছে। বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকের বেতন-ভাতার জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। উপজেলাসমূহে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ১০০ শয্যাতে উন্নীত করা হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবাকে গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
‘প্রতিটি ইউনিয়নে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সেবাকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। গ্রামের তরুণসমাজ এই সেবার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামের জনগণ এই সেবার মাধ্যমে দেশে-বিদেশে যোগাযোগ করছে। যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট সেবা সম্প্রসারণের ফলে গ্রামীণ উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থা গতিপ্রাপ্ত হয়েছে। কৃষি উপকরণ সহজলভ্য ও কৃষিপণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে, গ্রামীণ চাহিদা মেটানোর জন্য কৃষি প্রযুক্তির সম্প্রসারণ এবং কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশ ত্বরান্বিত হচ্ছে। কৃষিজ ও অকৃষিজ উভয় ক্ষেত্রে কর্মকাণ্ড বহুগুণ সম্প্রসারিত হয়েছে।’