গণবাণী ডট কম:
বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার জবাব দিতে পরিবার–পরিজনসহ ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অগ্নিসন্ত্রাসী বিএনপি-জামায়াতের ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণকে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে, ওরা এদেশের সর্বনাশ করতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচনে আপনাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, ওই বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাস করে আপনাদের ভোট কেড়ে নিতে চায়। আর আপনারা তার জবাব দেবেন কীভাবে? প্রত্যেকে, প্রতিটি ভোটার পরিবার-পরিজন নিয়ে সকালে ভোটকেন্দ্রে যাবেন, আপনার ভোট আপনি দেবেন কেউ যেন ঠেকাতে না পারে। তাদের উপযুক্ত জবাব দেবেন, অগ্নিসন্ত্রাসের জবাব দেবেন।
সোমবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর কলাবাগান মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আ.লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য প্রদানকালে এসব কথা জানান তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধারাবাহিক প্রচার-প্রচারণার অংশ হিসেবে এ জনসভার আয়োজন করা হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত আমরা ক্ষমতায় ছিলাম এবং আছি। আমাদের সময় যেহেতু ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র অব্যাহত আছে, যেহেতু মানুষ একটু শান্তিতে ছিল, ওই অগ্নিসন্ত্রাসের সময় ছাড়া। বাকি সময় মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে, মানুষের আয় বেড়েছে, চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছি। আমরা মানুষের শিক্ষা অন্ন বস্ত্র বাসস্থান সবকিছুর জন্য কাজ করে মানুষের হৃদয় জয় করে তাদের ভোট পাই। আমাদের ভোট চুরির প্রয়োজন হয় না।
তিনি বলেন, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, এটা আমার কথা না হাইকোর্টের আদেশ আছে হাইকোর্টের রায় আছে যে, ওই বিএনপি জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল অবৈধ, এরশাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ। তারাই ভোট চুরি করে, তারাই ভোট চুরি ছাড়া জিততে পারে না। ২০০৮ এর নির্বাচনে সেটা প্রমাণিত সত্য। এখন আবার তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়, কেন নির্বাচন বানচাল করবে?
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে নির্বাচন বর্জন করছে, বর্জন করাটা খুব স্বাভাবিক। ভোট চুরি করতে পারে না, নির্বাচন করবে না। কারণ এর আগে তো ভোট চুরি করে অভ্যস্ত, চুরি করা ভোট দিয়েই তো তাদের সৃষ্টি। ক্ষমতা দখল, ক্ষমতা চুরি, ভোট চুরি এছাড়া তো তারা আর কিছু পারে না। সেজন্য নির্বাচন করতে চায় না, নির্বাচন বানচাল করবে। মানুষের ভোটের অধিকার আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করেছি, সেই অধিকার কেড়ে নেবে, নির্বাচন বন্ধ করবে—এত সাহস তাদের নাই, তারা পারবে না। তারা আগুন দিয়ে পোড়ায় বাস, গাড়ি, ট্রেন। আপনারা দেখেছেন ফিসপ্লেট খুলে দিয়ে রেলে এক্সিডেন্ট ঘটায়, যেন এক্সিডেন্ট হয়ে মানুষ মারা যায়, তারা লাশ চায়।
ঢাকায় ১৫টি নির্বাচনী আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি এই ১৫টা রত্ন আপনাদের সামনে তুলে দিলাম। এই ১৫টা রত্ন আপনাদের হাতে দিলাম, যারা আপনাদের সেবক হিসেবে কাজ করবে। আপনাদের সেবা করবে, ঢাকার মানুষের সেবা করবে।
আওয়ামী লীগই জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছি। আমাদের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হয়েছে, জেল খেটেছে। আমরাই নির্বাচনের সংস্কার করেছি। নির্বাচন কমিশন এখন আইনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। আগে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের ওপর ন্যস্ত ছিল। আমরা স্বাধীন করে দিয়েছি। নির্বাচন কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সে ব্যবস্থা আ.লীগই করে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ মানুষের হৃদয় জয় করে তাদের ভোট পায়, ভোট চুরি প্রয়োজন হয় না মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, কিন্তু যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে এবং এটা আমার কথা না, হাইকোর্টের রায় আছে। জিয়াউর রহমান, এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণ অবৈধ। তারা ভোট চুরি করা ছাড়া টিকতে পারে না।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজধানীতে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, যানজট নিরসনসহ নাগরিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঢাকায় পানির অভাব ছিল। পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই। ওই যাত্রাবাড়ীতে এর অভাবে বিএনপির এমপি সালাউদ্দিনকে জনতা যে ধাওয়া দিয়েছে, তাতে সেই এমপির নাম হয়ে গেছে দৌড় সালাউদ্দিন। কৃষক সার চাইতে গেলে তাদের গুলি করে, শ্রমিককে মজুরির জন্য গুলি করে। অথচ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন ৮০০ থেকে এখন ১২ হাজার ৫০০ টাকায় মজুরি বৃদ্ধি করেছে। এ ছাড়া, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তো আছেই।
ঢাকায় পানি, বিদ্যুৎ সমস্যা দূর করেছি। সারা দেশে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। আজকে ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। ঢাকার যানজট দূর করার জন্য মেট্রোরেল চালু হয়েছে। সারা ঢাকায় মোট ৬০০ মেট্রোরেল আমরা করে দেব। আমরা এক্সপ্রেস ওয়ে করে দিয়েছি। নতুন নতুন ফ্লাইওভার করে দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুততর করেছি।
এ সময় ঢাকায় অবকাঠামো গত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ভবিষ্যতে নান্দনিক ঢাকা গড়তে তার পরিকল্পনার কথা জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বর্জ্য নিষ্কাশনে সরকার অত্যাধুনিক পদক্ষেপ নিচ্ছে, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সেটা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আধুনিক পয়ঃশোধানাগারও করেছি। ঢাকার চারপাশে ওয়াটার ওয়ে হবে। যেসব ব্রিজ নিজে রয়েছে সেখানে নতুন করে ব্রিজ করে দেওয়া হবে। ঢাকা তারের জঞ্জাল সরিয়ে সব মাটির নিচে চলে যাবে। যাতে ঢাকা সুন্দর দেখায় এবং জঞ্জালমুক্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। নিম্নআয়ের মানুষকে ফ্লাট করে দিচ্ছি। আমরা প্রাইমারি থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দিচ্ছি। এমনকি, বিদেশে পড়াশোনার জন্যও আমরা বৃত্তি দিচ্ছি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী কিন্তু জনগণের জন্য কিছু করেনি। তবে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। জিয়া মরে যাওয়ার পর টিভিতে দেখাতো সে নাকি ভাঙা সুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া কিছুই রেখে যায়নি। পরবর্তীতে আমরা কী দেখলাম, হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন তারা। তাহলে ভাঙা সুটকেস কি জাদুর বাক্স হয়ে গেল? সেখান থেকে টাকা বের হয়। এভাবেই তারা ক্ষমতার জাদু পেয়ে নিজেরা টাকার মালিক হয়েছে, দেশকে কিছু দেয়নি। আসে লুটপাট করে খেতে।
কিছু বুদ্ধিজীবী ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে উল্লেখ করে আ.লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের অনেকে বুদ্ধিজীবীরা আছেন তারা মানুষকে নানা কথা বলে তাদের বিভ্রান্তি করে। তার জবাবও আমি দেব। কারণ, তারা মানুষকে মিথ্যা তথ্য বলে বিভ্রান্ত করে। তাদের কাজই বিভ্রান্ত করা। কারণ, গণতন্ত্র থাকলেও নাকি তাদের মূল্য থাকে না। আর যদি অস্বাভাবিক সরকার থাকে ওনাদের মূল্য নাকি বেড়ে যায়। কার কতো মূল্য এখন দাঁড়িপাল্লায় মেপে দেখতে হবে আমাদের, সেটা আমরা দেখতে চাই।
আওয়ামী লীগ আছে বলেই মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে দারিদ্রের হাহাকার শোনা যায় না, খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। মাছ, মুরগি, ডিম, তরকারি সবই উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে পেরেছি। আজকে বেকার তিন ভাগ। সেটিও থাকবে না ইনশা আল্লাহ। সেভাবেই দেশকে গড়ে তুলছি।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ও হুমায়ুন কবিরের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা-১৩ আসনের নৌকার প্রার্থী অ্যাড. জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের নৌকার প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থী নায়ক ফেরদৌস আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে বসার পর ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ, খুশির হাওয়ায় ঐ উড়ছে, বাংলার ঘরে ঘরে, মুক্তির আলোই ঝরছে’সহ তিনটি গান গেয়ে তাকে স্বাগত জানানো হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাত নেড়ে শিল্পীদের উৎসাহ দেন। মঞ্চে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা-নেত্রীর পাশাপাশি চিত্রজগতের অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী উপস্থিত ছিলেন।