গণবাণী ডট কম:
নবম ওয়েজবোর্ডের প্রজ্ঞাপনে মন্ত্রিপরিষদের তিনটি সুপারিশ কেন বেআইনি হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া রুলে আরোও জানতে চাওয়া হয়েছে, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মীদের নবম ওয়েজবোর্ডসহ পরবর্তী ওয়েজ বোর্ডগুলোর আওতায় আনার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না। তথ্য সচিব ও শ্রম সচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজ) সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস গত সপ্তাহে রিট আবেদনটি করেন। তার পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী তীর্থ সলিল পাল ও মো. নুরুল করিম বিপ্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ।
প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রুল জারি করে আদেশ দেন।
রিটে মন্ত্রিসভার সুপারিশ প্রজ্ঞাপনে থাকা অন্যান্য সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক দাবি করা হয়। আইনজীবী তীর্থ সলিল পাল বলেন, নবম ওয়েজবোর্ডে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনের দ্বাদশ অধ্যায়ে মন্ত্রিসভার তিনটি সুপারিশ রয়েছে। সেগুলো হলো সংবাদকর্মীরা আয়কর দেবেন, এক মাসের গ্র্যাচুইটি পাবেন ও নবম ওয়েজবোর্ড পর্যায়ক্রম অনুসরণযোগ্য। অথচ প্রজ্ঞাপনে আছে সংবাদকর্মীরা দু’টি গ্র্যাচুইটি পাবেন।
এ ছাড়া পঞ্চম ওয়েজ বোর্ড নিয়ে করা মামলার রায়ে এসেছে, সংবাদকর্মীদের আয়কর দেবেন সংবাদপত্রের মালিক। তাই মন্ত্রিসভার ওই সুপারিশ আইন সমর্থন করে না। এমনকি কাউকে একবার কোনো অধিকার দেয়া হলে আইন অনুসারে তা খর্ব করা যায় না।
এ আইনজীবী আরো বলেন, বাংলাদেশ শ্রমবিধি ২(ত) অনুযায়ী গণমাধ্যমের ব্যাখ্যায় ইলেকট্রনিক মিডিয়াও আছে। তাই তাদের ওয়েজবোর্ডের আওতায় আনার নির্দেশনাও চাওয়া হয় রিটে।
সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের বেতন বাড়াতে গত ১২ সেপ্টেম্বর নবম ওয়েজ বোর্ডের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
বিপ্লব পরে সাংবাদিকদের বলেন, আবেদনে তিনটি বিষয় ছিল- এক. আগের ওয়েজ বোর্ডে মালিকপক্ষ সাংবাদিকদের হয়ে আয়কর পরিশোধ করতো। নবম ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী তা সাংবাদিকদেরই পরিশোধ করতে হবে।
দুই. নবম ওয়েজবোর্ডের গেজেটের সপ্তম অধ্যায়ে বলা আছে সংবাদকর্মীরা দুটো করে গ্র্যাচুইটি পাবে মূল বেতনের সমপরিমাণ। কিন্তু দ্বাদশ অধ্যায়ে এসে বলা হলো দুটো করে না একটি করে গ্র্যাচুইটি দেওয়া হবে।
এই আইনজীবী বলেন, “একই গেজেটে একবার বলা হলো দুটি করে আবার বলা হচ্ছে একটি করে। ফলে কোনটা বাস্তবায়ন হবে সে বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
তিন. শ্রমবিধির ২(ত) অনুযায়ী শ্রমিক বলতে প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক উভয় মাধ্যমের সংবাদ কর্মীদের বুঝানো হয়েছে। প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা যদি ওয়েজ বোর্ডের আওতাভুক্ত হয় তাহলে কেন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা আসবে না? এই তিনটি বিষয় উল্লেখ করে রিট আবেদনটি করা হয়েছে।”
রিট আবেদনের বলা হয়েছে, সরকার শ্রম আইনের ১৪৩ধারা অনুযায়ী সংবাদপত্র শ্রমিকদের জন্য মজুরিবোর্ড গঠন করে। শ্রম আইনের ১৪৩ থেকে ১৪৮ ধারা পর্যন্ত শুধুমাত্র সংবাদপত্র শ্রমিকদের জন্য প্রযোজ্য।
এ আইনে সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড কর্তৃক সুপারিশকৃত রোয়েদাদের বিষয়ে মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করে নতুন করে সুপারিশের সুযোগ নেই।
অথচ নবম ওয়েজ বোর্ড গেজেটের দ্বাদশ অধ্যায়ে মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশে সাংবাদিকদের গ্রাচ্যুইটি একটি করা হয়েছে। তাছাড়া আয়করও সাংবাদিকদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং নবম ওয়েজ বোর্ড ‘পর্যায়ক্রমে’ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। এতে সাংবাদিকদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে।
একইভাবে শ্রম আইনে সংবাদপত্র শ্রমিক বলতে কর্মরত সাংবাদিকদের বুঝানো হয়েছে। আর শ্রম বিধিমালার ২(ত)-এ সংবাদপত্র শ্রমিক বলতে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বুঝানো হয়েছে।
সরকার শ্রম আইনের ১৪৩ ধারা অনুযায়ী সংবাদপত্র শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ড গঠন করলেও সেই মজুরি বোর্ডের সুপারিশ থেকে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সংবাদ কর্মীদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
এর আগেই নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (নোয়াব) সভাপতি দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের রিট আবেদনে নবম ওয়েজ বোর্ডের গেজেট কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট।