গণবাণী ডট কম:
নব্বই দশকের তুমোল জনপ্রিয় চিত্র নায়ক শালমান শাহকে হত্যা করার অভিযোগ নাকচ করেছে পুলিশের সর্বশেষ তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা পিবিআই। সালমান শাহের মৃত্যুর ২৫ বছরের সময় পরে পিবিআই নিশ্চিত করেছে যে, ওই সময়ের জনপ্রিয় এই চিত্রনায়ক পারিবারিক কলহের জের ধরে আত্মহত্যা করেছিলেন।
সোমবার নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছেন পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।
১৯৯৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর চিত্রনায়ক সালমান শাহকে ঢাকায় তাঁর বাসভবনে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অন্যতম জনপ্রিয় নায়কের আকস্মিক মৃত্যুতে তখন স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল পুরো দেশ।
তখন শালমান শাহের পরিবার এবং ভক্তদের অনেকেই দাবি করছিলেন যে তাকে হত্যা করা হয়েছে। সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনায় সর্বশেষ তদন্তটি করার দায়িত্ব পায় পিবিআই। সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই আরো জানায় যে, একাধিক সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করে তারা নতুন তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।
পিবিআই জানায়, প্রায় ২৫ বছর আগের ঘটনা বলে মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সালমান শাহের দেহরক্ষী, মালী, প্রতিবেশী, বাড়ির কাজের সহকারীসহ অনেক ব্যক্তির জবানবন্দি গ্রহণ করতে বেশি সময় লেগেছে। ১৬৪ ধারায় ১০ জনের জবানবন্দি নিয়েছে পিবিআই। পিবিআই নতুন করে আলামত হিসেবে একটি ফ্যান জব্দ করেছে। ধারণা করা হয়, ওই ফ্যানে ঝুলেই আত্নহত্যা করেছিলেন সালমান।
পিবিআই’র ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, “এই সাক্ষীদের প্রত্যেকেই সেই সময় সালমান শাহের একজন সহশিল্পীর সাথে তার মেলামেশা করাকে পারিবারিক কলহের একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন”।
তবে সালমান শাহের মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে, তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর মা নীলা চৌধুরীর অভিযোগ ছিল পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করতে গেলে পুলিশ সেটিকে অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে। পুলিশ বলেছিল, অপমৃত্যুর মামলা তদন্তের সময় যদি বেরিয়ে আসে যে এটি হত্যাকাণ্ড, তাহলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হত্যা মামলায় রূপ নেবে।
সালমান শাহের মৃত্যুকে ঘিরে যখন একের পর এক প্রশ্ন উঠতে থাকে, তখন পরিবারের দাবির মুখে দ্বিতীয়বারের মতো ময়না তদন্ত করা হয়। মৃত্যুর আটদিন পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে তিন সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করা হলে মামলার কাজ সেখানেই থেমে যায়। তবে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় শালমান শাহের রহস্যময় মৃত্যু এ নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল।
সালমান শাহর বাবা অপমৃত্যুর মামলা দাখিল করলেও ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই সেটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করা হয়। তদন্ত শেষে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করে সে বছরের ৩ নভেম্বর আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি।
সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে রিভিশন মামলা করা হলে ২০০৩ সালের ১৯ মে সেটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট দাখিল করা সেই তদন্ত প্রতিবেদনেও সালমানের মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
সে বছরের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহর মা বিচার বিভাগী তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান এবং পরবর্তীকালে নারাজি আবেদন করেন। আদালত নারাজি আবেদন মঞ্জুর করে র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যা ব) মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।
সর্বশেষ মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট লস্কর সোহেল রানা পিবিআইকে নির্দেশ দেন। পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে পিবিআই এই মামলা আবার তদন্তের কাজ শুরু করে।
অবশেষে পিবিআই বলছে, সালমান শাহ আত্মহত্যাই করেছিলেন। এর কারণ হিসেবে বলে হয়, একজন নায়িকার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে পারিবারিক কলহের জেরেই আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন সালমান।
সালমান শাহর আসল নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। ১৯৭১ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট শহরে নানা বাড়িতে তার জন্ম। টেলিভিশন নাটক দিয়ে তিনি অভিনয় জীবন শুরু করেন। এরপর তার আগমন ঘটে চলচ্চিত্রে।
১৯৯২ সালে জনপ্রিয় একটি হিন্দি সিনেমার অফিসিয়াল রিমেক ছিল ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। এ সিনেমাটি মুক্তির পর থেকেই চলচ্চিত্রে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেন সালমান। নিজস্ব ফ্যাশন-রুচি ও স্মার্টনেসের কারণে তরুণ প্রজন্মের কাছে আইডলে পরিণত হন তিনি।
মাত্র সাড়ে তিন বছরের ক্যারিয়ারে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন সালমান। এর মধ্যে রয়েছে- ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘তুমি আমার’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘সুজন সখি’, ‘বিক্ষোভ’, ‘স্নেহ’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’ প্রভৃতি। সালমান অভিনীত বেশিরভাগ চলচ্চিত্রই সুপারহিট হয়েছে।