গণবাণী ডট কম:
ভারতের দিল্লির হিংসাত্মক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কেন্দ্রকে ‘রাজধর্ম’ স্মরণ করিয়ে দিতে রাষ্ট্রপতির কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। একদিন পরেই শুক্রবার এ নিয়ে প্রশ্ন তুলল বিজেপি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, রাজধর্ম নিয়ে সনিয়ার উপদেশ না দেওয়াই বাঞ্ছনীয়।
গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘রাজধর্ম’ পালনের নিদান দিয়েছিলেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়ী। তার পর দু’দশক কাটতে চললেও, তা আজও গলার কাঁটা হয়ে রয়েছে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহদের। দিল্লি জুড়ে সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনাতেও বিরোধীদের মুখে বার বার ঘুরে ফিরে উঠে এসেছে ‘রাজধর্ম’ পালনের কথা।
দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করেন সনিয়া। একটি স্মারকলিপি জমা দিয়ে মোদী সরকারকে ‘রাজধর্ম’ স্মরণ করানোর কথা বলেন তিনি। তা নিয়েই সোনিয়াকে একহাত নেন রবিশঙ্কর প্রসাদ। দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘সনিয়া গাঁধী আমাদের রাজধর্ম না শেখালেই পারেন। উনি বরং বলুন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানে ধর্মীয় কারণে নিপীড়িতদের নিয়ে আপনাদের নেতাদের কী মত ছিল এত দিন। উগান্ডা থেকে যাঁরা পালিয়ে এসেছিলেন, ইন্দিরা গাঁধী তাঁদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কা থেকে পালিয়ে আসা তামিলদের সাহায্যে এগিয়ে গিয়েছিলেন রাজীব গাঁধী। পড়শি দেশে ধর্মীয় নিপীড়ণের শিকার মানুষ জনকে আশ্রয় দেওয়ার পক্ষে লালকৃষ্ণ আডবাণীর কাছে সওয়াল করেছিলেন মনমোহন সিংহ। ইউপিএ এবং এনডিএ আমলে এ নিয়ে চিঠি লেখেন অশোক গহলৌতও। এটা কোন রাজধর্ম যে আজ আপনারা সব পাল্টে গেলেন? মনমোহন সিংহ কি তাহলে ভুল দাবি জানিয়েছিলেন? ইন্দিরা গাঁধী এবং রাজীব গাঁধীও কি ভুল পদক্ষেপ করেছিলেন?’’
ভোট ব্যাঙ্কের স্বার্থেই কংগ্রেস বার বার অবস্থান পাল্টেছে বলেও অভিযোগ করেন রবিশঙ্কর প্রসাদ। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের রাজধর্ম শেখাবেন না। আপনাদের রেকর্ড দেখলেই বোঝা যায়, ভোট ব্যাঙ্কের স্বার্থে বার বার অবস্থান পাল্টেছেন আপনারা। এই সময় দেশের শান্তি এবং সম্প্রীতি নিয়ে যখন একজোট হয়ে আলাপ-আলোচনা করা দরকার, সেই সময় একটা সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে রাজনীতি করছেন আপনারা। বিজেপি এর তীব্র নিন্দা করছে।’’
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরোধী এবং সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে চলতি সপ্তাহের শুরুতে রাজধানী দিল্লির পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। ইট-পাথর নিয়ে পরস্পরের উপর হামলা করে দুই পক্ষ। চলে গুলিবর্ষণও। এমনকি অ্যাসিড হামলার ঘটনাও সামনে এসেছে। তাতে এখনও পর্যন্ত ৪২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহতের সংখ্যা ২০০-র বেশি। গোটা পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং দিল্লি পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকেই দায়ী করেছে বিরোধীরা। একের পর এক বিজেপি নেতা উস্কানিমূলক মন্তব্য করাতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় বলে অভিযোগ তাদের। যদিও উস্কানিমূলক মন্তব্য দু’তরফেই হয়েছে বলে দাবি বিজেপি নেতৃত্বের। খবর : আনন্দবাজার পত্রিকা