গণবাণী ডট কম:
সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’ বর্তমানে সাইক্লোনটি রয়েছে মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ২৯০ কিলোমিটার দূরে। পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩২০ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৮০ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৭০ কিলোমিটার দূরে। ঝড়টি আগে ঘণ্টায় ২২ কিলোমিটার গতিতে এগোতে থাকলেও, এখন তা কমে ঘণ্টায় ১৫ থেকে ১৮ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছে।
মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
কোথায় আঘাত করবে?
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলছেন, ”ঘূর্ণিঝড়টি যেভাবে এগিয়ে আসছে, তাতে সেটি গতিপথ পরিবর্তন না করলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে থাকা সুন্দরবনের ওপর দিয়ে যাবে বলে আমরা ধারণা করছি। বাংলাদেশ সময় বুধবার সন্ধ্যার পর ঝড়টি অতিক্রম করতে শুরু করবে।”
এই গতিবেগে একটি ঝড় ভূমিতে এসে পড়ার দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর দুর্বল হতে শুরু করে বলে আবহাওয়াবিদরা বলছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’ যেভাবে এগিয়ে আসছে, তাতে সেটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে থাকা সুন্দরবনের ওপর দিয়ে যাবে বলে তারা ধারণা করছেন। তবে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর ধারণা করছে, ভূমিতে আসার পর কলকাতার কাছাকাছি এলাকা দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রম করবে। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকেই ঝড়টি ভূমিতে আসতে শুরু করবে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
বুধবার সকালে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া অফিস জানায়, এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ বিকেলে বা সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবনের নিকট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সুপার ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুপার ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় এবং দ্বিতীয় পক্ষের চাঁদের সময়ের শেষ দিনের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারীবর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব ধরনের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
সাইক্লোনটি বর্তমানে কোথায় রয়েছে?
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাস দিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গর দীঘা থেকে বাংলাদেশের হাতিয়ার মাঝামাঝিতে সুন্দরবনের কাছ দিয়ে ঝড়টি অতিক্রম করবে। ভূমিতে আসার পর সেটি কলকাতার কাছাকাছি দিয়ে চলে যেতে পারে। এই সময় ভারী বৃষ্টিপাত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে উভয় দেশের আবহাওয়া বিভাগ। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের অনেক স্থানে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।
ঝড়টির গতি কতো?
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
”যতক্ষণ ঝড় সাগরে থাকে, ততক্ষণ তার গতিপথ ও বৈশিষ্ট্য ক্ষণে ক্ষণে বদলাতে থাকে। তবে এখন সাইক্লোনটি যতটা দূরে রয়েছে, তাতে এটি গতিপথ সামান্য পাল্টালেও খুব বেশি পরিবর্তন হবে না।” তিনি বলছেন। বর্তমানে ঝড়টি ১৫ থেকে ১৮ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছে।
জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা :
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ”আমরা পূর্বাভাস দিয়েছি, উপকূলীয় জেলাগুলোয় ১০ থেকে ১৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।”
এই সময় ঘূর্ণিঝড় ও অমাবস্যার কারণে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরে জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হবে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে।
কতোটা শক্তিশালী সুপার সাইক্লোন আম্পান :
এর মধ্যেই এই ঘূর্ণিঝড়টিকে এই শতকের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে, যাকে বলা হচ্ছে সুপার সাইক্লোন।
তবে শুরুর তুলনায় সুপার সাইক্লোনটির শক্তি সামান্য কমেছে। কিন্তু এখনো এটি যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে এর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ক্ষমতা রয়েছে বলে আবহাওয়াবিদরা বলছেন।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক, এ ধরণের একটি সুপার সাইক্লোনের পুরো বিস্তৃতি হতে পারে ৮০০ থেকে ১২০০ কিলোমিটার। ফলে কেন্দ্রে তো ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকেই, এই পুরো বিস্তৃতি (ডায়ামিটার) জুড়েই ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।