গণবাণী ডট কম :
চলতি অর্থ বছরের সম্পূরক বাজেট পাস হয়েছে। আজ সোমবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল-২০২০’ উত্থাপন করেন। পরে বিলটি জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে পাস হয়।
যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তাদের জন্য বরাদ্দ করা বাজেটের চেয়ে বেশি খরচ করেছে, তা অনুমোদন দিতেই সম্পূরক বাজেট পাস করা হয়। এবার সম্পূরক বাজেটের পরিমাণ ৪৬ হাজার ৫১৬ কোটি ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
২০১৯-২০ অর্থ বছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ২৬টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের বরাদ্দ ৪৬ হাজার ৫১৬ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা বেড়েছে এবং ৩৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের বরাদ্দ ১৮ হাজার ৩৫৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা কমেছে। সার্বিকভাবে ২১ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা হ্রাস পেয়ে সংশোধিত বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা।
সম্পূরক বাজেটে অর্থ বিভাগ সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার ৩৫৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। সবচেয়ে কম ১ কোটি ৫৪ লাখ কম বরাদ্দ পেয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
১১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের সাধারণ বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে পেশ হয় চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট।
সম্পূরক বাজেটের ওপর বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও গণফোরামের সাংসদেরা ১৬৭টি ছাঁটাই প্রস্তাব দেন। তবে সেগুলো কণ্ঠভোটে বাতিল হয়।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ–সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের ২৪টি মঞ্জুরি দাবির ভিত্তিতে সম্পূরক বাজেটটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
ছাঁটাই প্রস্তাবগুলোর মধ্যে দুটি সমাজকল্যাণ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের। এর ওপর আলোচনা হয়। বাকিগুলো সরাসরি ভোটে দেওয়া হয়।
সংসদের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের পক্ষে পাঁচটি মঞ্জুরি দাবি তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উত্থাপিত দাবিগুলো ছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সংশ্লিষ্ট।
সম্পূরক বাজেটে করোনা দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্যসেবা খাত, স্বাস্থ্য চিকিৎসা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে অতিরিক্ত ৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
১১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সরকারের আগামী এক বছরের ব্যয় নির্বাহের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব দিয়েছেন, যা ৩০ জুন পাস হওয়ার কথা।
অর্থমন্ত্রী ছাড়াও সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নেন সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, আওয়ামী লীগের সাংসদ আবুল হাসান মাহমুদ আলী, তাহজীব আলম সিদ্দিকী ও ওয়াসিকা আয়েশা খান এবং বিএনপির হারুন-অর-রশিদ।
বিএনপির নেতা হারুন দেরি করে সংসদে আসেন। যখন অর্থমন্ত্রীকে সমাপনী বাজেট বক্তৃতা দেওয়ার অনুরোধ জানান, তখনই হারুন হাত তোলেন। এ সময় তাঁকে বক্তৃতার সুযোগ দেওয়া হয়। এ সময় তিনি সরকার দলীয় সদস্যদের কিছুটা বাধার মুখে পড়েন। হারুন পিপিই, মাস্ক ও গ্লাভস পরে আসেন। তাঁর মাথাও ঢাকা ছিল।
এ সময় সাংসদ হারুন বলেন, বর্তমান সরকার ১২ বছর ধরে ক্ষমতায়। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা শোচনীয়। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের দুরবস্থা এবং লোকবলসংকটের কথা তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে করোনার চিকিৎসা চালু না হওয়া এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের করোনা শনাক্তের কিটের অনুমোদন দিতে দেরি হওয়ার সমালোচনা করেন তিনি। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভারতের ওপর নির্ভরশীল করে ফেলা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এখন সরকারি দলের মন্ত্রী-সাংসদেরা বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা সিএমএইচে দৌড়াচ্ছেন।
জি এম কাদেরও স্বাস্থ্য খাতের অদক্ষতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, করোনার মতো পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য খাতে আরও বরাদ্দ বাড়ানোর দরকার। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের টাকা খরচেরই সক্ষমতা নেই। এ সময় নিজ নির্বাচনী এলাকা লালমনিরহাট জেলা হাসপাতালের দুরবস্থার কথা উল্লেখ করেন তিনি। স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটায় অনিয়ম, দুরবস্থা, ঘাটতি এবং অনিয়ম চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি কমিশন গঠনের দাবি জানান তিনি।
সম্পূরক বিল পাস হওয়ার পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ২৩ জুন পর্যন্ত সংসদের বৈঠক মুলতবি ঘোষণা করেন।