গণবাণী ডট কম:
ভারতে গত কয়েক মাসের সব রেকর্ড ভেঙে গত চব্বিশ ঘন্টায় প্রায় পঁচিশ হাজার নতুন করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছেন বলে সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
এর সঙ্গে সঙ্গেই ভারতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌনে সাত লাখে পৌঁছল – এবং আর মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই রাশিয়াকে টপকে ভারত বিশ্বের করোনা মানচিত্রে তৃতীয় স্থানটি দখল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই বিপদের মুখে সরকার এখন হাজার হাজার রোগী থাকতে পারবে, এমন বিশাল সব মেকশিফট করোনা হাসপাতাল বানানোর কাজ করছে।
ভারতই বিশ্বের নতুনতম করোনা হটস্পট হিসেবে উঠে আসবে কি না, সেই প্রশ্নে অবশ্য বিশেষজ্ঞরা এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নন।
গত এক সপ্তাহ ধরেই ভারতে রোজ নতুন করোনা পাজিটিভ কেস পাওয়া যাচ্ছিল আঠারো হাজারের মতো, কিন্তু গত চব্বিশ ঘন্টায় সেই সংখ্যাটা এক লাফে বেড়ে দাঁড়ায় ২৪, ৮৫০য়ে।
সোমবার সকালেই ভারত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় রাশিয়াকেও টপকে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে – তখন গ্লোবাল করোনা মানচিত্রে ভারতের চেয়ে আগে থাকবে শুধু আমেরিকা আর ব্রাজিল।
ভারতে এযাবত মোট পৌনে সাত লাখ কেসের মধ্যে দুলাখেরও বেশি শুধু মহারাষ্ট্রেই, আর রাজধানী দিল্লিতেও সংখ্যাটা প্রায় এক লাখের কাছাকাছি।
ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল ড: সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ বিবিসিকে বলছিলেন, “ভারত দেশটা এত বড় আর দেশের নানা জায়গায় নানাভাবে এর ম্যানেজমেন্ট হচ্ছে – কাজেই করোনার ‘পিক’-টাও কিন্তু এক এক জায়গায় এক এক সময়ে আসছে।”
“যেমন, দিল্লিতে পিক-টা প্রায় এসেই গেছে বলা চলে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে পিক-টা আরও একটু দেরিতে আসবে মনে হচ্ছে। জনসংখ্যা, জনবসতির ঘনত্ব ও আরও নানা ফ্যাক্টরের ওপর এটা নির্ভর করছে।”
“বলা যেতে পারে, ভারতের এক একটা রাজ্য যেন পৃথিবীর ছোট ছোট এক একটা দেশের মতো আচরণ করছে!”
ভারতের এক এক রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি এক এক রকম, দেখা যাচ্ছে সঙ্কট ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি ও কৌশলও বিভিন্ন রাজ্যে আলাদা।
তবে সারা দেশেই সামান্য করোনা টেস্টিং করানোর জন্য মানুষকে এখনও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে, আর পজিটিভ হলে হন্যে হতে হচ্ছে একটা হসপিটাল বেডের জন্য।
দিল্লির এক তরুণী স্মিতা শর্মা যেমন বলছিলেন, “বস্তুত কোনটা যে কাজ করবে আর কোনটা করবে না তা নিয়ে সরকারই যেন নিশ্চিত নয় মনে হচ্ছে।”
“ফলে মানুষের মধ্যে স্বভাবতই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।”
বস্তুত দিল্লি এখন সারা দেশের সবচেয়ে করোনা উপদ্রুত শহর – এ মাসের শেষে করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা সেখানে ৫ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে সরকারেরই অনুমান।
রোগীর চাপ সামাল দিতে দিল্লিতে রাধাসোয়ামি বিয়াসের বিশাল আশ্রমকে দশ হাজার বেডের বিশাল মেকশিফট হাসপাতালে পরিণত করা হচ্ছে।
সে কাজের দায়িত্বে থাকা শীর্ষ সরকারি আমলা নন্দিনী মহাজন সরাসরি বলছেন, “এই নতুন ভাইরাসের মোকাবিলায় আমরা শুরুতে ঠিকমতো প্রস্তুত ছিলাম না, আর সে কারণেই তা মহামারির রূপ নিয়েছে।”
“আমাদের সাধারণ স্বাস্থ্য কাঠামোর ওপর চাপ পড়েছে অবশ্যই, আর এখন সেই ক্ষমতা বাড়ানোরই কাজ চলছে।”
দিল্লি বিমানবন্দরের কাছে সেনাবাহিনীর জমিতে আজ রবিবার হাজার শয্যার এমনই এক হাসপাতাল উদ্বোধন করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
তিনি জানান, “সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি শিল্প সংস্থাগুলো মিলে মাত্র বারো দিনের মধ্যে এই অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করেছে – যেখানে ভেন্টিলেটর ও অক্সিজেন-সুবিধা সমেত আড়াইশো আইসিইউ বেডেরও সুবিধা থাকছে।”
চীনের ধাঁচে এই ধরনের বড় বড় অস্থায়ী হাসপাতাল ভারত তৈরি করছে এমন একটা সময়ে, আড়াই মাসের লকডাউন পেরিয়ে যখন ভারত দ্বিতীয় পর্বের ‘আনলকিং’য়ে ঢুকে পড়েছে।
লকডাউন কোনও কাজে আসেনি, ড: সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ অবশ্য তেমনটা মনে করেন না।
তার কথায়, “লকডাউন অবশ্যই আমাদের কিছুটা সময় দিয়েছে স্বাস্থ্য অবকাঠামোটা তৈরি করার জন্য। আর পাশাপাশি কিছুটা হলেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় বেশ কিছুটা সচেতনতা তৈরি করেছে।”
“বলছি না সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই যে ‘নিউ নর্মাল’ জীবনধারার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা, তা তো কিছুটা হয়েইছে – যে কারণে ভারতের গ্লোবাল হটস্পট হয়ে ওঠার সম্ভাবনা এখনও বেশ কম!”
“তবে ভারতীয়দের এখন এটাও বুঝতে হবে করোনাভাইরাস হুট করে চলে যাবে না – আর এই নতুন জীবনধারাতেই আমাদের এখন বাঁচতে হবে বেশ কিছুদিন”, বলছিলেন সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ।
ফলে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় নতুন জীবনধারার সঙ্গে ১৩০ কোটি ভারতীয় কতটা খাপ খাইয়ে নিতে পারেন আর কতদিন সে ধৈর্য দেখাতে পারতেন – তার ওপরও অনেকটা নির্ভর করছে এদেশে সঙ্কট কত ব্যাপক আকার নেবে। খবর : বিবিসি।