গণবাণী ডট কম ;
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ১৯ জুলাই। লেখকের নন্দন কানন নুহাশপল্লী যেখানে তিনি চিরশায়িত সেখানেও তাঁর পরিবারের স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা লেখককে স্মরণ করলেন। তবে করোনাকালের বাস্তবতায় অনাড়ম্বর আয়োজনে এবার এই লেখককে স্মরণ করা হলো।
সকালে হুামায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন, দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে হুমমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত, পুস্পস্তক অর্পণ ও মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় মেহের আফরোজ শাওনের বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী, অভিনেতা সিরাজুল কবির কমল, ‘অন্য প্রকাশ’ প্রকাশনা সংস্থার স্বত্বাধিকারী মাজহারুল ইসলাম, কাকলী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী সেলিম আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মোনাজাত পরিচালনা করেন নুহাশ পল্লী মসজিদের ইমাম হাফেজ মুজিবুর রহমান।
মেহের আফরোজ শাওন কবর জিয়াবত ও মোনাজাত শেষে সাংবাদিকদের নিকট হুমায়ুনের স্বপ্ন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় পুর্নব্যাক্ত করে বলেন। এসময় তিনি বলেন, করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে মহামারি চলছে। এই সময়ে গত রমজান, ঈদ উল ফিতরসহ সকল কিছুই আমরা সচেতনভাবে সীমিত আকারে পালন করছি। ব্যাক্তিগতভাবে, হুকমায়ূন আহমেদের পরিবারের সদস্য হিসেব এবং ভক্ত হিসেবে আমার কাছে খুবই খারাপ লাগছে। প্রতিবছর এতিম বাচ্চারা (শিশুরা) নুহাশ পল্লীর বৃষ্টি বিলাসে বসে কোরআন তেলাওয়াৎ করে। আমার কাছে মনে হয়, হুশমায়ূন আহমেদের কাছে সেই দোয়াগুলো পৌঁছে যায়। কিন্তু এবার সেটা আমরা করতে পারেনি। এক সঙ্গে বসে ৬/৭শ এতিম শিশুকে আমরা যখন নিজ হাতে আপ্যায়ন করি, সেটা অনেক ভাল লাগে। এ বছর আমরা সেটা করতে পারলাম না, যেহেতু লোকসমাগম করাটা এখন উচিত না, সচেতনভাবে আমরা সেটা চাই না। ভক্তদের অনুরাধ করা হয়েছে, তারা যাতে দূরত্ব বজায় রেখে কবর জিয়ারত করেন। নিজেদের প্রতি সচেতন থাকেন।
শাওন আরো বলেন, হুমায়ূন আহমেদের সমাধির পাশেই জায়গা ঠিক করেছি, ‘আমরা একটা জাদুঘর করতে চাইছি। নুহাশ পল্লী একটি পারিবারিক সম্পদ। পারিবারিক সম্পত্তিতে এমন কিছু করতে হলে পরিবারের প্রতিটি মানুষের অনুমতির প্রয়োজন আছে। ওই জায়গাটিতে আমি এখনো অপারগ হয়ে আছি। আমারই ব্যর্থতা। সবাইকে একত্রিত করতে এখনো পারিনি। প্রত্যেকের ব্যস্ততার কারণে কিছুটা সমন্বয়হীনতা আছে। প্রত্যেকে দেশেও থাকেন না, অনেকে দেশের বাইরে থাকেন। আমাদের পরিবারের অনেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন বিভিন্ন জায়গায়। আমরা চেষ্টা করছি। স্বপ্লটা নিজের মধ্যে, ভক্তদের মধ্যে বুনেছি। জাদুঘর এখানে হবে, এটা নিশ্চিত করছি।’
অন্যান্য বছর হিমু সকাল থেকেই হুমায়ূন আহমেদের ভক্ত, হিমু পরিবারের সদস্য, হিমু পরিবহনের সদস্যরা নুহাশ পল্লীতে এসে প্রিয় স্যারের কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ এবং জিয়ারত করতেন।
করোনার কারনে এবার তেমনটি দেখা যায় নি। গাজীপুর হিমু পরিবহনের মাত্র দুইজন সদস্য পুস্পস্তবক অর্পণ এবং জিয়ারত করতে আসেন। তারা হলেন লিংকন মিয়া এবং তৌহিদ মিয়া। লিংকন মিয়ার বাড়ি নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানার গোগ এলাকায় হলেও তিনি লেখাপড়া করেন গাজীপুরে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে। পাশাপাশি চাকুরি করেন গাজীপুরের মির্জাপুর এলাকার একটি কারখানায়, থাকেন মির্জাপুর এলাকায়। আর তৌহিদ মিয়ার বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও থানার ছোটবড়ইহাটি গ্রামে। তিনি লেখাপড়া করেন গাজীপুর শহরের মডেল ইনস্টিটিউট অব সাইন্স টেকনোলজিতে।
উল্লেখ্য, জনপ্রিয় এ লেখক ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর তাকে গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে তার নিজ হাতে গড়া স্বপ্নের নুহাশ পল্লীতে সমাহিত করা হয়।