গণবাণী ডট কম:
দুর্নীতির ধারণা সূচকে আগের বছরের তুলনায় আরো দুই ধাপ অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) কর্তৃক পরিচালিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২০’ এর বৈশ্বিক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে আসে।
সিপিআই ২০২০ অনুযায়ী ১৮০টি দেশের মধ্যে তালিকার নীচের দিক থেকে বাংলাদেশ ১২তম অবস্থানে আছে। আর সিপিআই-২০১৯ এর তুলনায় দুই ধাপ নীচে নেমেছে বলে উল্লেখ করা হয়। ২০১৯ সালে নিম্নক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪ তম। অবনতির পেছনে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক দুর্নীতির বিষয়টিকে অন্যতম কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
রাষ্ট্রীয় খাতে ঘুষ লেনদেন, সরকারি অবস্থান ও সম্পদ ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার, স্বজনপ্রীতি এবং রাষ্ট্রকাঠামোকে দখল করার প্রবণতাকে এই সূচকের বিবেচনায় আনা হয়েছে।
এছাড়া একটি দেশের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা, তথ্য অধিকার ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব সংক্রান্ত আইনের প্রয়োগ, প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচার, দুর্নীতিগ্রস্তদের বিচারের আওতায় আনা, সম্পদের তথ্য প্রকাশ, তথ্য প্রকাশকারীদের নিরাপত্তা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ইত্যাদিও এই সূচকের মূল বিষয় হিসেবে কাজ করে থাকে।
২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা ৫ বছর বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে টিআই প্রতিবেদনে তালিকাভুক্ত হয়েছিল বাংলাদেশ। পরে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের অবস্থান এগিয়ে আসতে থাকে। ১০০ এর মধ্যে ৪৩ স্কোরকে গড় স্কোর হিসেবে বিবেচনায় সিপিআই ২০২০ অনুযায়ী বাংলাদেশের স্কোর ২৬।
এছাড়া এশিয়ার মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৩১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ সর্বনিম্ন অবস্থানে আছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে একমাত্র আফগানিস্তানই বাংলাদেশের চেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত।
সিপিআই সূচক অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ভুটান, দেশটির স্কোর ৬৮। ১৮০টি দেশের মধ্যে তালিকার ওপর থেকে এই দেশটির অবস্থান ২৪তম। বাংলাদেশের ঠিক আগেই পাকিস্তানের অবস্থান। ২০১৯ সালের চাইতে এক ধাপ পিছিয়েছে দেশটি। তাদের স্কোর ৩১।
দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের এই অবস্থান হতাশাব্যাঞ্জক বলে উল্লেখ করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।। এই স্কোর অনুযায়ী বাংলাদেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা এখনো উদ্বেগজনক বলে জানান তিনি।
গতবারের মতো এবারও বিশ্বের সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ডেনমার্ক এবং নিউজিল্যান্ড। এই দুটি দেশের স্কোর ৮৮। অন্যদিকে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হল সাউথ সুদান এবং সোমালিয়া। দেশ দুটির স্কোর ১২।
গতবারের মতো এবারও বিশ্বের সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ডেনমার্ক এবং নিউজিল্যান্ড। এই দুটি দেশের স্কোর ৮৮। অন্যদিকে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হল সাউথ সুদান এবং সোমালিয়া। দেশ দুটির স্কোর ১২।
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে সিঙ্গাপুর। দেশটির স্কোর ৮৫। সে হিসেবে দেশটি দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। মিয়ানমারও তার আগের অবস্থানের চাইতে ১৩ ধাপ উপরে উঠে এসেছে।
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশ শুধুমাত্র কম্বোডিয়া,আফগানিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার চাইতে এগিয়ে আছে। রাশিয়া মাত্র ৩০ স্কোর পেয়েছে, চীন পেয়েছে ৪২ স্কোর।
এবারের তালিকা অনুযায়ী ১৮০টি দেশের মধ্যে ১২১টি দেশ ৫০ এর নীচে স্কোর পেয়েছে। সিপিআই ২০১৯ এর তুলনায় ৪৮টি দেশের স্কোর কমেছে। অপরিবর্তিত আছে ৭০টি দেশের স্কোর এবং ৬২টি দেশের স্কোর বেড়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী কোন দেশই সর্বোচ্চ স্কোর করেনি। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি বিরাজমান বলে জানান মি. ইফতেখারুজ্জামান।
টিআইবি’র সুপারিশ :
দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এগিয়ে নিতে কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে টিআইবি।
• সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন।
• সামাজিক অবস্থান ও পরিচয় নির্বিশেষে সব দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনা।
• রাষ্ট্রীয় অবস্থানকে নিজেদের সম্পদ বিকাশের লাইসেন্স হিসেবে বিবেচনা করার সংস্কৃতিতে পরিবর্তন।
• সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে এবং বেসরকারি খাতে বেনামি মালিকানা সেটা নিয়ন্ত্রণের জন্য আইনি কাঠামো জোরদার এবং প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য বাড়ানো।
• জবাবদিহিতামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন, বিচার ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন ও জাতীয় সংসদের কার্যকারিতা বাড়ানো এবং এসব প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা।
• ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত রাখা। যতো ফিন্যান্সিয়াল ট্রানজেকশন হয় সেটা শেয়ারিং-এর যে পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী চালু আছে, সেটাতে অংশ নেয়া। এতে আর্থিক খাতে দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও কর ফাকি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
• ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে তথ্য অধিকার আরও দ্রুত ও বিস্তৃত করা।
• সাধারণ মানুষ, এনজিও, গণমাধ্যম যেন জবাবদিহিতা চাইতে পারে সেই সুযোগ বাড়ানো।