গণবাণী ডট কম:
বাংলাদেশে এইচএসসি অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশের সাড়ে তের লাখের বেশি পরীক্ষার্থীর সবাইকেই পাশ করিয়ে দেয়া হয়েছে।
গত বছর যে পাবলিক পরীক্ষাটি করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অনুষ্ঠিত হতে পারেনি, সেটির পরীক্ষা নেয়া ছাড়াই ফলাফল প্রকাশ করা হল।
মূলত, জেএসসি ও সমমান এবং এসএসসি ও সমমান এই দুটি পাবলিক পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে সব শিক্ষার্থীর এইচএসসি ও সমমানের ফলাফল গড় মূল্যায়ন করা হয়েছে।
এভাবে ফল প্রকাশের জন্য অবশ্য কয়েকটি আইনও সংশোধন করতে হয়েছে সংসদে। গত সোমবার এই সংশোধিত আইন গেজেট আকারে প্রকাশ পায়।
আগেই বলা হয়েছে, ফলাফল প্রকাশ করা হবে অনলাইনে, যেন কোন শিক্ষার্থী ফল আনতে স্কুলে না যায়।
শনিবার সকালে ঢাকার সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে এই ফল ঘোষণা করা হয়।
গণভবন থেকে এক অনাড়ম্বর ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়ে কম্পিউটারের মাউস ক্লিক করে ফল প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের যাতে একটি বছর নষ্ট না হয়ে যায়, সেজন্যই এই বিশেষ ব্যবস্থায় ফল দিয়ে দেয়া হয়েছে।
এর আগে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে মোট ১১টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির হাতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল তুলে দেন।
সব মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন।
গত বছরের এপ্রিল মাসে এই শিক্ষার্থীদের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠানের কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পরীক্ষা বাতিল হয়ে যায়।
পরীক্ষা না হওয়ার কারণে এই পরীক্ষার্থীদের একজনও অকৃতকার্য হননি।
মূলত, জেএসসি/সমমানের ২৫% এবং এসএসসি/সমমানের ৭৫% ফল বিবেচনায় নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকের গড় ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
এছাড়া গত বছর যারা এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করেছেন, সেসব শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নও হয়েছে একই পদ্ধতিতে।
আগের দুটি পাবলিক পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক গড় নম্বরের ভিত্তিতেই মূলত এইচএসসি ও সমমানের বিষয়ভিত্তিক গড় ফলাফল তৈরি করা হয়েছে। এবার কোনও বিষয় বাদ দেওয়া বা নম্বর কমিয়ে মূল্যায়ন করা হয়নি।
এরপরও ফলাফল নিয়ে কোন শিক্ষার্থীর সন্দেহ থাকলে সেটা রিভিউ চেয়ে আবেদন করার সুযোগ আছে।
জিপিএ ফাইভ:
এবারে মোট ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ১১.৮৩%।
এর মধ্যে ১৭ হাজার ৪৩ জন শিক্ষার্থী আছেন যারা জেএসসি ও এসএসসি দুটি পরীক্ষায় জিপিএ- ৫ না পেলেও এইচএসসিতে জিপিএ -৫ অর্জন করেছেন। আবার ৩৯৬ জন শিক্ষার্থী আছেন যারা আগের দুটি পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলেও এবার পাননি।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এই বোর্ডের মোট শিক্ষার্থীর ১৭.৭৭% জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
ঢাকা বোর্ডে ৫৭ হাজার ৯২৬ জন, রাজশাহী বোর্ডে ২৬ হাজার ৫৬৮ জন, দিনাজপুর বোর্ডে ১৪ হাজার ৮৭১ জন, যশোর বোর্ড - ১২ হাজার ৮৯২ জন, চট্টগ্রাম বোর্ড ১২ হাজার ১৪৩ জন, ময়মনসিংহ বোর্ড ১০ হাজার ৪০ জন, কুমিল্লা বোর্ডে ৯, ৩৬৪ জন, বরিশাল বোর্ডে ৫, ৫৬৮ জন, সিলেট বোর্ডে ৪, ২৪২ জন, কারিগরি বোর্ডে ৪, ১৪৫ জন, মাদ্রাসা বোর্ডে ৪,০৪৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
এরিমধ্যে অনলাইনেও ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
কিভাবে রেজাল্ট দেখব?
এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল শিক্ষার্থীরা যেন ঘরে বসেই পেতে পারেন এজন্য এ মাসে প্রি-রেজিস্ট্রেশন হয়েছে।
সেখানে যারা শিক্ষাবোর্ড ও রোল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করেছেন তাদের কাছে ফলাফল পৌঁছে যাওয়ার কথা।
প্রাক নিবন্ধনের আহ্বান জানিয়ে এ মাসে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল রাষ্ট্রীয় মোবাইল ফোন কোম্পানি টেলিটক। সেখানে নিবন্ধনের নিয়ম উল্লেখ ছিল।
শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছে, তারা যেন মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে HSC লিখে স্পেস দিয়ে শিক্ষা বোর্ডের নাম দিয়ে স্পেস দিয়ে রোল লিখে স্পেস দিয়ে ২০২০ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠিয়ে দেয়।
এছাড়া ওয়েবসাইট (www.educationboardresults.gov.bd) থেকে সেইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে থেকেও ফল জানার সুযোগ রয়েছে।
বিকল্প, তবে আদর্শ বিকল্প নয়:
এই মূল্যায়ন ফলে দেশে ও দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই শিক্ষার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা কেমন হবে এবং শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবনে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে কিনা সে বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফল প্রকাশের এই পদ্ধতি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য না করার আহ্বান জানান। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের যেন একটি বছর নষ্ট না হয় সেই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এই বিকল্প পদ্ধতিতে ফল প্রকাশ করার কথা জানান তিনি।
সবাইকে বিনা পরীক্ষায় এভাবে পাশ করিয়ে দেয়াকে একটি ‘বিকল্প, কিন্তু আদর্শ বিকল্প নয়’ বলে মনে করেন শিক্ষা নিয়ে কাজ করা অধিকারকর্মী রাশেদা কে. চৌধুরী।
তিনি অবশ্য মনে করেন, এ ছাড়া আর উপায়ও ছিল না। এখন স্বাস্থ্যঝুঁকি মাথায় রেখে পরীক্ষাও নেয়া যাচ্ছিল না, আবার অপেক্ষা করতে গেলে ছেলেমেয়েদের একটা বছর নষ্টও হয়ে যেত। পরে এটা নিয়ে জটিলতা বাড়তো বই কমতো না।
তাছাড়া সবাইকে পাশ করিয়ে দেয়া হলেও, শিক্ষার পরবর্তী ধাপে যেতে হলে সবাইকেই প্রতিযোগীতা করেই যেতে হবে বলেও উল্লেখ করেন মিসেস চৌধুরী। ফলে সবাই পাশ করে গেলেও প্রতিযোগীতা বা যোগ্য প্রার্থী চূড়ান্ত করার সুযোগ চলে যায়নি বলেও মনে করেন তিনি।