গণবাণী ডট কম :
তৌসিফুল ইসলাম মুন্না (১৪)। গাজীপুর মহানগরীর টংগী পূর্ব থানাধীন গাজীপুরা সুমন মার্কেট সাকিনস্থ চন্দ্রিমা হাউজ জনৈক হাবিবুর রহমানের বাসার ভাড়াটিয়া মোঃ মিজানুর রহমান @ জাহাঙ্গীর ও মোছাঃ হামিদা আক্তার দম্পতির বড় ছেলে। ঢাকার উত্তরা শাহিন ক্যাডেট স্কুলের মেধাবী ছাত্র। দুই বছর আগে ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই সকাল পৌণে ৮টার দিকে পিতা মাতার অনুপস্থিতিতে হয়ত খালি বাসায় ঘুমিয়ে ছিলো। হয়তবা খেলা করছিল, কে জানে হয়তা নিরপরাধ এ শিশু টিভি দেখছিল। এসময় কতিপয় অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত বাসায় প্রবেশ করে তাকে নির্মমভাকে গলা কেটে হত্যা করে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়।
বহুল আলোচিত মেধাবী ছাত্র মুন্না হত্যাকান্ডের দুই বছর পর হত্যার রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুর।
গেল ৭ জুন গ্রেফতারের পর আসামীদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে তারা ঘটনার সাথে নিজেদেরকে জড়িয়ে অন্যান্য আসামীদের নাম উল্লেখ করে সেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ এর ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এতে তারা জানিয়েছে, ফাঁকা বাসায় স্বর্ণালংকার চুরি করার সময় বাসায় একা থাকা তৌসিফুল ইসলাম মুন্না চোরদের চিনে ফেলে। এ কারণে চুরির অপরাধ ঢাকার জন্য গ্রেফতারকৃত আসামীরা অন্যদের সহায়তায় মুন্নাকে হত্যা করে।
গ্রেফতার এবং মামলা ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামীরা হলো, ময়মনসিংহ জেলার হালয়াঘাট থানার চকমোকামিয়া গ্রামের কুদ্দুস আলীর ছেলে মোঃ আনোয়ার হোসেন (২৫) ও জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ থানার জাকিরপাড়া গ্রামের উসমান আলীর ছেলে মো: মোফাজ্জল (৩১)।
গাজীপুর জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, গত ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই সকাল পৌণে ৮টার দিকে তৌসিফুল ইসলাম মুন্নার পিতা অফিসে চলে যায়। পরে মুন্নার মা মোছাঃ হামিদা আক্তার মুকুল ছোট সন্তান তামিমকে সাথে নিয়ে স্থানীয় আবু তালেব মডেল একাডেমিতে যায়। পরে সকাল সোয়া ১০টার দিকে মুন্নার মা ছোট সন্তান তামিমসহ স্কুল থেকে ফিরে এসে বাসার প্রবেশের দরজা বাইরে থেকে আটকানো অবস্থায় পায় এবং তাদের ভাড়াকৃত ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে তার সন্তান তৌসিফুল ইসলাম মুন্নাকে বাসার শোবার ঘরে খাটের উপর উপুর হয়ে রক্তাক্ত ও মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। এসময় তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন ও পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ ঘঢ়টনায় নিহত মুন্নার পিতা মোঃ মিজানুর রহমান @ জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) টংগী পূর্ব থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তারপর টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ ক্লুলেস এ মামলাটি দীর্ঘ ২ মাস তদন্ত করে কোন রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে এক নির্দেশে মামলাটি পিবিআই গাজীপুর জেলাকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন।
তিনি জানান, পিবিআই গাজীপুর মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআই এর ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় এবং পিবিআই গাজীপুর ইউনিটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমানের সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটি তদন্ত করেন পুলিশ পরিদর্শক মোঃ হাফিজুর রহমান। দীর্ঘ ২২ মাস মামলাটি তদন্ত করার পর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গেল ৭ জুন রাত সাড়ে ৩টার দিকে গাজীপুর মহানগরের মোঃ আনোয়ার হোসেনকে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন গাজীপুরা শিকদার মার্কেট এলাকা থেকে এবং মোঃ মোফাজ্জলকে একই তারিখ ভোর ৪টার দিকে গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী পূর্ব থানাধীন গাজীপুরা সুমন মাকের্ট এলাকা থেকে অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরো জানান, ঘটনার দিন তৌসিফুল ইসলাম মুন্নার বাবা ও মা বাসায় না থাকার সুযোগে স্বর্ণ ও নগদ টাকা, মোবাইল ও ক্যামেরা চুরি করার উদ্দেশ্যে আসামীরা বাসায় প্রবেশ করতে চাইলে তারা পরিচিত হওয়ায় মুন্না দরজা খুলে দেয়। পরে জিনিসপত্র চুরি করার সময় তৌসিফুল ইসলাম মুন্না আসামীদেরকে বাঁধা দেয় এবং ধস্তাধস্তি করে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আসামীরা মুন্নাকে খাটের উপর ফেলে দিয়ে মুখ চেপে ধরে তার পেটে চাকু দিয়ে আঘাত করে নাড়ি ভুড়ি বের করে ফেলে এবং পরবর্তীতে খাটের উপর তাকে নির্মমভাবে জবাই করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে আসামীগন উক্ত কক্ষের স্টীলের আলমারী ভেঙ্গে স্বর্ণ ও নগদ টাকা, একটি ডিজিটাল ক্যামেরা ও মোবাইল সেট চুরি করে পালিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, মূলত চুরি করার উদ্দেশ্যে প্রবেশ করলেও আসামীদেরকে চিনে ফেলায় চুরির অপরাধ আড়াল করার জন্য তৌসিফুল ইসলাম মুন্নাকে হত্যা করা হয়েছে। মামলায় জড়িত অন্যান্য আাসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।