গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় চলমান পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর আন্দোলনে কয়েকটি পোশাক কারখানায় ভাংচুর. অগ্নি সংযোগ ও একটি কারখানায় আগুনে পুড়ে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় ছাত্রদলের এক নেতাকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
গ্রেফতার ছাত্রদল নেতার নাম মোঃ মোশারফ হোসেন রিপন ওরফে মোঃ রিপন হোসেন ওরফে রিপন মাহমুদ (২৭)। তিনি গাজীপুর জেলা কালিয়াকৈর উপজেলার বড়ইছুটি গ্রামের মোঃ সুরুজ আল মামুনের ছেলে। তিনি বর্তমানে কালিয়াকৈর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক ও কালিয়াকৈর উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রার্থী।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিগ্যাসাবাদে ছাত্রদলের ঐ নেতা জানিয়েছেন,রাজনৈতিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চলমান বিএনপির সরকার বিরোধী আন্দোলনকে প্রভাবিত করতে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের নির্দেশে শ্রমিকদের আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। তারই অংশ হিসাবে শ্রমিকদের আন্দোলনকে ব্যবহার করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষেই তিনি কারখানায় ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ করেছে।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় গাজীপুর মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরের নিজ কার্যালয়ের সভা কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোঃ মাহবুব আলম।
গত ৩১ অক্টোবর গাজীপুর মহানগরসহ গাজীপুর জেলাধীন বিভিন্ন পোশাক কারখানাসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা, হাসপাতাল ও বিভিন্ন যানবাহনে দুষ্কৃতকারীরা অগ্নি সংযোগ ও ভাংচুর করে। গত ১ নভেম্বর জিএমপির পুলিশ কমিশনার, শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে গাজীপুর মহানগর ও গাজীপুর জেলাধীন ক্ষতিগ্রস্থ বিভিন্ন পোশাক কারখানা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে কারখানা কর্তৃপক্ষ পরিদর্শনকারীদের তাদের ফ্যাক্টরি ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তখন পুলিশ কমিশনার মহোদয় সাংবাদিকদের সম্মুখেই ফ্যাক্টরির কর্তৃপক্ষসহ উপস্থিত সকলকে আশ্বস্ত করেন যে, পুঙ্খানুপঙ্খ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে অগ্নি সংযোগকারী ও ভাংচুরে জড়িত সকল দুষ্কৃতিকারীকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনামলে নিয়ে আসা হবে।
তিনি আরো বলেন,তদন্তকালে বিভিন্ন পোশাক কারখানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও স্থির চিত্র পর্যালোচনা করাকালীন দেখা যায় যে, গাজীপুর জেলাধীন সফিপুরস্থ লিডা ও ফর্টিস গার্মেন্টস্ লিঃ এর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে দুষ্কৃতকারীরা দলবদ্ধ হয়ে লাঠি সোটা নিয়ে কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর ও দাহ্য পদার্থ ঢেলে গাড়ীতে অগ্নি সংযোগ করে। সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ, স্থিরচিত্র পর্যালোচনা, গার্মেন্টস্ কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনামতে এবং উক্ত এলাকায় স্থানীয় লোকজনের সনাক্তমতে গাড়ী ভাঙচুরকারী দলের নেতৃত্বদানকারী, দাহ্য পদার্থ বহণকারী ও অগ্নি সংযোগে নেতৃত্বদানকারী মো. রিপন হোসেন নামের এক যুবককে চিহ্নিত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে গত ৩০ অক্টোবর তারিখ মহানগরীর কোনাবাড়ী থানাধীন এবিএম ফ্যাশন্স লিঃ এর কারখানায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের সিসিটিভি ফুটেজ প্রদর্শন করা হয়। তাতে সুস্পষ্টভাবে গ্রেফতার মোঃ রিপন হোসেনকে গাড়ী ভাংচুর ও গাড়ীতে দাহ্য পদার্থ ঢেলে অগ্নি সংযোগ করতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, এ কারখানায় অগ্নি সংযোগের ফলে কারখানার ভিতরে একজন শ্রমিক দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব হোসেন বলেন, ঘটনার পরপরই রিপন হোসেন এলাকা থেকে পালিয়ে যায় এবং তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ করে রাখে। রিপনের পরিচয় সনাক্ত করার পর গাজীপুর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (দক্ষিণ) বিঘাগের একটি চৌকস দল রিপনকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা করে গত ৬ নভেম্বর তাকে রাজধানীল হাজারীবাগ থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরেো বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে যে, সে সহ তার দলীয় সহযোগীরা রাজনৈতিক কার্যক্রমের অংশ হিসাবে দলীয় আন্দোলনকে প্রভাবিত করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে শ্রমিকদের আন্দোলনে যোগ দিয়ে কালিয়াকৈরস্থ লিডা ও ফর্টিস গার্মেন্টস এবং কোনাবাড়ীস্থ এবিএম ফ্যাশন্স লিঃ এ অগ্নি সংযোগ ও ভাংচুর এর ঘটনায় অংশগ্রহণ করে।
তিনি জানান, রিপনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় পূর্বের আরো চারটি মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আজ মঙ্গলবার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তাকে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হবে পুলিশ কমিশনার জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, জিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সদর ও অর্থ) জিয়াউল হক, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আহসান উজ্জামান, গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম ও উপ পুলিশ কমিশনার (ডিবি ও মিডিয়া) মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান।