গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর সদর উপজেলার কেশরিতা গ্রামে লাক্সারি ফ্যান কারখানায় রবিবার সন্ধ্যায় সংগঠিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১০ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল লাশ হস্তান্তর করা হয়। শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে লাশের ময়না তদন্তশেষে ঢাকার ফরেনসিক বিভাগে পাঠানোর জন্য ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ফ্যান কারখানাটির কোনো ধরনের অনুমোদন ছিল না বলে জানিয়েছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক শাহীনুর ইসলাম জানান, দগ্ধ ও ধোঁয়ায় কালো হয়ে যাওয়ায় মরদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পরে নিহতদের স্বজনরা জামাকাপড়, হাতের ব্রেসলেট, জুতা, গলার চেইন ইত্যাদি দেখে লাশ শনাক্ত করেন।
নিহত ১০ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নোয়াগাঁও এলাকার লাল মিয়ার ছেলে পারভেজ (১৯), ময়মনসিংহের রাঘবপুর এলাকার সেলিম মিয়ার ছেলে মো. তরিকুল ইসলাম (২৪), দিনাজপুরের কাহারোল থানার বারপটিকা এলাকার হামিদ মিয়ার ছেলে মো. লিমন ইসলাম (২০), গাজীপুর সদর উপজেলার কালনী গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ ফয়সাল খান (২২), একই উপজেলার কেশরিতা গ্রামের নির্মল চন্দ্র দাশের ছেলে উত্তম চন্দ্র দাশ (২৬), গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মারতা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে শামীম (২৫), একই গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে রাশেদ (৩২), রংপুরের কাচুবকুলতলা এলাকার তাজুল ইসলামের ছেলে ফরিদুল ইসলাম (২১), নরসিংদীর বেলাব থানার চরকাশিনগর এলাকার সাজু মিয়ার ছেলে সজল মিয়া (২৫) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর এলাকার মোর্শেদ মিয়ার ছেলে ইউসুফ মিয়া (২৭)।
রওজা হাইটেকের লাক্সারি ফ্যান কারখানাটির কোনো ধরনের অনুমোদন ছিল না বলে জানিয়েছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সোমবার সকালে তারা কারখানা পরিদর্শন করে এমন তথ্য দেন। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে কারখানাটির কোনো ফায়ার লাইসেন্স ও পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, আবাসিক ভবনের আদলের দোতলার ওপরে নির্মিত টিনশেড ঘরে কারখানটি অবস্থিত। এতে একটি মাত্র ছোটো সাইজের সিঁড়ি ও দরজা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ঘরটিতে কেমিক্যালসহ বিভিন্ন মেশিনারিজ ও নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে। শ্রমিকরা এ ঘরটিতেই ফ্যানের ফিটিংয়ের কাজ করতেন। অগ্নিকাণ্ডে যাবতীয় মালামাল ও পুরো ঘরটি পুড়ে কয়লার মতো হয়ে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী কারখানার শ্রমিক নাসিমা আক্তার (২৫) জানান, মাগরিবের নামাজের পর দোতলায় ওঠার সময় তিনি বিকট শব্দ শুনতে পান। এর পরেই তিনি আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পেয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসেন।
ওসি মো. জাবেদুল ইসলাম জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সোমবার বিকাল সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।