গণবাণী ডট কম:
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা বিশেষত: স্বাস্থ্য বিধি মানা ও সচেনতা বৃদ্ধির উপর জোর দেয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করোনাভাইরাসকে বিশ্বব্যাপী মহামারি ঘোষণা করার পর এই রোগটি মোকাবেলায় সংক্রামক রোগ সংশ্লিষ্ট একটি আইনের প্রয়োগের দিকে নজর দিয়েছে সরকার। করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশ থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসা মানুষকে বাড়িতে অবস্থান করার জন্য আহবান জানালেও অনেকে তা মানছেন না বলে জানান আইইডিসিআরের পরিচালক।
শুক্রবার মহাখালীতে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে আইইডিসিআরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানান। আইইডিসিআর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি বর্ধন জং রানাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানোনো হয়, “আমরা চেষ্টা করেছিলাম আমাদের দিক থেকে যাতে কোনো ধরণের আতঙ্ক না ছড়ায়, বিদেশ ফেরতরা যেন সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন না হন। কিন্তু এখন আমরা খেয়াল করছি সরকারের এই সহানুভূতিশীল পদক্ষেপকে সঠিকভাবে ব্যবহার করছেন না। “এজন্য সংক্রামক ব্যাধি আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে সংক্রামক রোগ আইনে সরকার ‘কিছুটা শক্ত পদক্ষেপও’ নিতে পারে। কিন্তু আমরা সেই আইন প্রয়োগ করতে চাই না। সবাই মিলে এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে চাই।”
“অনেকেই মিথ্যা তথ্য ও গুজব রটিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সকলকে বর্ণিত আইন অনুযায়ী এবং নির্দেশিত পন্থায় যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানাচ্ছে। ব্যত্যয়ের ক্ষেত্রে আইনের সংশ্লিষ্ট শাস্তিমূলক ধারা প্রয়োগ করা হবে।”
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’ প্রয়োগের ঘোষণা দিয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদেশ ফেরত কিছু প্রবাসী বা তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশিত ১৪ দিনের স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনের শর্ত ঠিকভাবে পালন করছেন না।
বিদেশ ফেরত কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ পাওয়া গেলে আইইডিসিআরে সরাসরি না গিয়ে হটলাইনে যোগাযোগের আহবান জানান মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, “এভাবে যাতায়াতের কারণে রোগটি অন্যের শরীরে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। হটলাইনে ফোন করলে আইইডিসিআরের কর্মীরা বাড়ি গিয়ে নমুনা নিয়ে আসবেন। “কারণ আপনাদের কারও মধ্যে যদি সত্যিই এ ভাইরাসের উপস্থিতি থাকে তাহলে সেটা কিন্তু এখানে আসা অন্য আরেকজনের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। শুধুমাত্র আইইডিসিআরে আসা লোকজন আক্রান্ত হবে এমন না। আপনারা যে গণপরিবহন ব্যবহার করেন, আপনাদের সাথে যিনি আসেন, প্রত্যেকেরই ঝুঁকি তৈরি হয়।”
স্বাস্থ্য বিভাগের ক্ষমতা:
এই আইনের অধীনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বসতবাড়ি, হাসপাতাল-ক্লিনিক বা অন্য যেকোন স্থানে কোন করোনা রোগী বা সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পেলে সেখানে পরিদর্শন করাসহ বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এমনকি সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে কোন নির্দিষ্ট হাসপাতাল, অস্থায়ী হাসপাতাল, স্থাপনা বা বাড়িতেই কোয়ারেন্টিন কিংবা আইসোলেশনে রাখতে পারে। তাছাড়া প্রয়োজনে দেশের ভেতরে বাস, ট্রেন, লঞ্চ, প্লেন ইত্যাদি যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করতে পারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
তাছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এবং ওই স্থানে অন্য কোন ব্যক্তির প্রবেশ নিষিদ্ধ, সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে যদি অন্য কোন ব্যক্তির সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে, তাহলে তাকে সাময়িকভাবে অন্য যেকোন স্থানে স্থানান্তর বা জন বিচ্ছিন্নও করা হতে পারে।
আইনের ধারা :
‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’ এর আওতায় করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় না মানলে একজন ব্যক্তি এই আইনের চোখে অপরাধী হতে পারেন - সেটিও ব্যাখ্যা করা হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আইন অনুযায়ী, কোন অস্থায়ী বাসস্থানের বা আবাসিক হোটেল ও বোর্ডিং-এর মালিক যদি জানতে পারেন যে তার ওই স্থানে থাকা কেউ এই সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তবে অবশ্যই সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসককে জানাতে হবে। ডাক্তারদের ক্ষেত্রে একই নিয়ম মানতে হবে। অর্থ্যাৎ তার অধীনে কোন সংক্রামক রোগী চিকিৎসা হলে, সিভিল সার্জনকে রোগী সর্ম্পকে সব ধরণের তথ্য দিতে হবে।
এদিকে কোন যানবাহনে সংক্রামক জীবাণুর উপস্থিতি রয়েছে বলে যদি কোন তথ্য থাকে, তাহলে সেটিকে ওই গাড়ীর মালিক বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সেটি জীবাণুমুক্ত করার নির্দেশ দিতে পারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
তবে করোনাভাইরাস বা কোন সংক্রামক রোগে কেউ মারা গিয়েছে - এমন সন্দেহ হলে অবশ্যই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। আর তার দাফন বা সৎকারের ক্ষেত্রেও ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর নির্দেশনা মানতে হবে।
না মানলে শাস্তি কী?
আইনটিতে বলা হচ্ছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কোন কাজে যদি কেউ বাধা দেন বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন, অথবা কেউ যদি তাদের নির্দেশ না মানেন, তাহলে সেটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
আর এই অপরাধের শাস্তি তিন মাসের জেল, বা অনুর্দ্ধ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
অন্যদিকে, সঠিক তথ্য থাকার পরেও যদি কেউ সেটি গোপন করেন বা ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা ও ভুল তথ্য দেন - সেটিও অপরাধের মধ্যে পড়বে। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির দুই মাসের জেল, বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন সংঘটিত কোন অপরাধের অভিযোগ দায়ের, তদন্ত, বিচার ও আপীল নিস্পত্তির ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির বিধানগুলো প্রযোজ্য হবে।
বিশ্বজুড়ে মহামারীর আকার পাওয়া নভেল করোনাভাইরাস গত আড়াই মাসে ছড়িয়েছে বিশ্বের ১১৮টি দেশ ও অঞ্চলে। এ ভাইরাসের প্রভাবে ফ্লুর মত উপসর্গ নিয়ে যে রোগ হচ্ছে, সেই কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে বিশ্বের সোয়া লাখের বেশি মানুষ, মৃতের সংখ্যা ৪৬০০ ছাড়িয়ে গেছে।
খবর : বিবিসি ও অন্যান্য সূত্র।