গণবাণী ডট কম:
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জাতীয় সংসদে জাতীয় বাজেট প্রস্তাব পেশ হলো। তবে এবারের মতো বাজেট পেশের দিন সংসদের এমন বিবর্ণ পরিবেশ আগে কখনো দেখেননি কেউ। বাজেট পেশের দিন অধিবেশন কক্ষ থাকে প্রায় সব সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে সংসদ অধিবেশন কক্ষ থাকে পরিপূর্ণ, পুরো সংসদ ভবন জুড়ে বিরাজ করে আনন্দঘন উৎসব মুখর পরিবেশ।
বিশ্ব মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সংসদে বাজেট পেশের দিনে ৩৫০ জন এমপির এক-তৃতীয়াংশেরও কম সংখ্যক সদস্য উপস্থিতি ছিল। ছিল না কোনো উচ্ছ্বাস। বরং মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস পরে আসা সংসদের সদস্যদের সবার মধ্যেই ছিল করোনাভীতি, অজানা এক উদ্বেগ-আতঙ্ক।
বাজেট পেশের দিন প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি ব্রিফকেস বা ব্যাগ হাতে অর্থমন্ত্রী যখন অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন তখন উপস্থিত সদস্যরা সবাই আনন্দচিত্তে টেবিল চাপড়ে তাদের অভিনন্দন জানান। এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে, করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী তাদের দুজনের মধ্যে ছিল দূরত্ব। এবারও টেবিল চাপড়িয়েছেন উপস্থিত থাকা সীমিত সংখ্যক সংসদ সদস্য। সেই টেবিল চাপড়ানোর মধ্যেও যেন কোনো আনন্দ ছিল না।
গত বেশ কয়েক বছর ধরে এমপি ও সাংবাদিকদের বাজেট ডকুমেন্টারি দেওয়া হতো পাটের তৈরি বিশেষ একটি আকর্ষণীয় ব্যাগে ভরে। অধিবেশন কক্ষে প্রত্যেক এমপির আসনের সামনে টেবিলের ওপর আগে থেকেই দেওয়া থাকত সেই ব্যাগ। প্রতি আসনের সামনে একটি করে ব্যাগের কারণে ভিন্ন এক দৃশ্যে সাজত অধিবেশন কক্ষ। এবার শুধু অপরিহার্য বাজেট ডকুমেন্টারি সরবরাহ করা হয়েছে খামে ভরে। সংসদ ভবনের ভেতরে সাংবাদিকদেরও প্রবেশ ছিল না। সংসদ ভবনে থাকা মিডিয়া সেন্টার থেকে সাংবাদিকরা বাজেট ডকুমেন্টারি সংগ্রহ করেছেন। সাংবাদিকবিহীন এমন অধিবেশনও আগে কখনো কেউ দেখেননি।
বাজেট পেশের দিন সাধারণত বিকালে শুরু হয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য চলে সন্ধ্যার পর দীর্ঘ সময় ধরে। এবার বেলা ৩টায় শুরু হয়ে এক ঘণ্টার মধ্যেই সংসদের বৈঠক শেষ হয়েছে। প্রথমবারের মতো অর্থমন্ত্রী সংক্ষিপ্ততম বাজেট-বক্তব্য রেখেছেন সংসদে, তার বক্তব্যের বড়ো অংশই পঠিত বলে গণ্য করেছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
দীর্ঘ বাজেট বক্তব্য উপস্থাপনকালে অতীতে সব সময়ই অর্থমন্ত্রীকে কিছুক্ষণ পরপর পানি বা ফ্লাক্সে রাখা গরম চা পান করতে দেখা যেত। এবার সেটিও করতে হয়নি অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালকে। ব্যক্তিগতভাবে এটা ছিল তার জীবনের দ্বিতীয় বাজেট উপস্থাপন। তাকেও হাসিখুশি দেখা যায়নি।
বাজেট বক্তৃতার প্রারম্ভে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘দুঃখের বিষয়, করোনার প্রভাব সারা বিশ্বের অর্থনীতির হিসাব-নিকাশকে সম্পূর্ণ ওলটপালট করে দিয়েছে।’ আর অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্য শেষ করেন সুরা আল বাক্বারাহর ১৫৫ নম্বর আয়াত পাঠ এবং এর বাংলা অনুবাদ করে। আল্লাহ যেন তার রহমত থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত না করেন—সেই প্রার্থনা দিয়েই বক্তব্যের ইতি টেনেছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী আরবিতে সুরা আল বাক্বারাহর ১৫৫ নম্বর আয়াত পাঠ করেন।
বলেন, ‘এই আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন—আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষায় ফেলবই; মাঝেমধ্যে তোমাদেরকে বিপদের আতঙ্ক, ক্ষুধার কষ্ট দিয়ে সম্পদ, জীবন, পণ্য-ফল-ফসল হারানোর মধ্য দিয়ে। আর যারা কষ্টের মধ্যেও ধৈর্য-নিষ্ঠার সঙ্গে চেষ্টা করে, তাদেরকে সুখবর দাও।’ এ সময় মহান আল্লাহর দরবারে অর্থমন্ত্রী প্রার্থনা করেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি তোমার রহমত থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত কোরো না।’
পরিশেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি তার সৃষ্টির অকল্যাণে কিছুই করেন না, যা করেন কল্যাণের জন্যই করেন। তাই অবশ্যই অচিরেই তিনি তার কল্যাণের সুশীতল ছায়ায় আমাদেরকে আশ্রয় দিয়ে মহামারি ভাইরাস থেকে সবাইকে পরিত্রাণ দান করবেন এবং আমরা ফিরে যাব আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়, উন্মোচিত হবে এক আলোচিত ভোরের।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৩ জুন একাদশ সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি ছিল দেশের ৪৮তম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২০তম এবং অর্থমন্ত্রী হিসেবে মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেট। ঐ সময় অর্থমন্ত্রী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত থাকায় কয়েক মিনিট সূচনা বক্তব্য রাখেন। পরে তার পক্ষে পুরো বাজেট বক্তৃতাটি পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থমন্ত্রী হিসেবে লোটাস কামাল এবার যখন দ্বিতীয় বাজেট ঘোষণা করলেন তখন বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী চলছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ।