গণবাণী ডট কম:
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় ২০১৯ ও এই বছরে এখন পর্যন্ত কোন প্রসূতির মৃত্যু হয়নি। যেখানে ২০১৭ সালে প্রসবকালে ৮জন প্রসূতির মৃত্যু হয়। ২০১৮ সালে তা কমে দাঁড়ায় একজনে। আর গত প্রায় দেড় বছর উপজেলায় কোন প্রসুতির মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। উপজেলা পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুর রহিম দাবি করেন, প্রসব পূর্ববর্তী, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী যথাযথ এবং মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করার ফলে এই সফলতা পান তাঁরা। গাজীপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি ব্যতিক্রম এই উদ্যোগ নেন গত ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর।
এবার করোনা মহামারির সংকটকালে প্রতিটি বাড়িতে নিরাপদ প্রসব নিশ্চিত করার জন্য নেওয়া হয় ব্যতিক্রম আরেক উদ্যোগ। তা হল-প্রতিটি ওয়ার্ডে দুইজন করে ধাত্রী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মাতৃ ও নবজাতকের স্বাস্থ্য রক্ষায় যুক্ত করা। আর মাঠ পর্যায়ে সরকারি সেবাদানকারীদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করবেন তাঁরা (ধাত্রী)।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, গত ১৭ জুন পর্যন্ত উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে দুইজন করে মোট ১৯৮ জন ধাত্রীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ, গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন খিঁচুনি এবং মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিয়ে ৬ দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ দেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. নূসরাত জাহান খান। কর্মশালাটি পরিচালনা করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবদুস সালাম সরকার। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি ইউনিয়নে ১৮ জন করে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় প্রশিক্ষিত ১০ জন ধাত্রীকে আজ শনিবার প্রসবকালে ব্যবহারের জন্য জরুরি টুলবক্স দেওয়া হয়। বাকি ১৮৮ জনকে ওই টুলবক্স দেওয়া হবে এই মাসেই।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুর রহিম জানান, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি প্রশিক্ষণ কর্মশালা উদ্বোধন করেন। পরে প্রশিক্ষণের প্রতিটি সেশনে ওই মাধ্যমেই যুক্ত হয়ে ধাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ধাত্রীদের উদ্দেশে সিমিন হোসেন রিমি বলেন, জ্ঞানের অভাবে কিংবা অবহেলার কারণে কোন নবজাতক এবং প্রসূতির জীবন যেন বিপন্ন না হয়। এই বিষয়ে সকলকে অধিক সতর্ক ও দায়িত্ববান হতে হবে। নবজাতক ও প্রসূতির যেকোন জটিলতায় বিলম্ব না করে অতিদ্রুত সরকারি হাসপাতালে নেওয়ার বিষয়েও গুরুত্ব দেন তিনি।
এদিকে প্রশিক্ষণ কর্মশালার শেষদিনে প্রশিক্ষিত ধাত্রীদের নাম ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বরসহ ৪৪ হাজার প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়। উপজেলার ৯৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়। এতে করোনা মহামারির সময়ে গর্ভবতী মা ও স্বজনদের করণীয়সহ প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর দেওয়া হয় প্রচারপত্রে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. ইসমত আরা বলেন, গ্রামে এখনো অনেক নারী আছেন, যাঁরা প্রসবকালীন হাসপাতালে যেতে চান না। তাঁরা যেন একজন প্রশিক্ষিত ধাত্রী পায়, সে জন্যই ধাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কারণ সামান্য ভুলে নবজাতক ও প্রসূতির মৃত্যু হতে পারে।
সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি বলেন, বর্তমান করোনা মহামারিতে এই ধরণের প্রশিক্ষণ কর্মশালার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার কথা উপলব্ধি করেই আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ধাত্রীদের আগে গত মাসে মাঠ পর্যায়ে ২০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সাল থেকে উপজেলায় গর্ভবতীদের ৩৭টি তথ্যসংবলিত পরিচয় নম্বরসহ ৪৪ পৃষ্ঠার মা ও শিশু স্বাস্থ্যসহায়িকা বই দেওয়া হয়। এতে গর্ভবতী মায়ের নাম ও উচ্চতা, স্বামীর নাম-পেশা, রক্তের গ্রুপ, বাল্যবিয়ে ছিল কি না বিস্তারিত তথ্য ও গর্ভবতীর রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী সম্ভাব্য তিনজন রক্তদাতার মোবাইল ফোন নম্বরসহ পরিচয় লেখা থাকে।