গণবাণী ডট কম:
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনায় মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে র্যাব। হামলার কারণ হিসাবে র্যাব বলেছে, চুরি করার জন্য’ তারা ইউএনওর বাসায় ঢুকেছিল বলে গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছে।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- ঘোড়াঘাট উপজেলার সাগরপুর এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে আসাদুল হক (৩৫) এবং চক বাবুনিয়া বিশ্বনাথপুরের মৃত ফরাজ উদ্দিনের ছেলে মো. নবীরুল ইসলাম (৩৪) এবং খোকা চন্দ্র কুমার বিশ্বাসের ছেলে সান্টু কুমার বিশ্বাস (২৮)।
এর আগে শুক্রবার সকালে ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেনকেও এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক করার কথা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। তবে জিজ্ঞাসাবাদে তার সম্পৃক্ততা’ না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছে র্যাব-১৩ অধিনায়ক রেজা আহমেদ ফেরদৌস শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে মামলার তদন্তের অগ্রগতির এসব তথ্য জানান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আসাদুলের দাবি অনুযায়ী, এটা চুরির অভিপ্রায় থেকে সংঘটিত একটি ঘটনা। তবে প্রকৃত মোটিভ বা প্রকৃত উদ্দেশ্য বের করার জন্য আরও সময়সাপেক্ষ তদন্ত করে এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।”
গত বুধবার রাতে ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসের বাসভবনের ভেন্টিলেটর দিয়ে ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলীর ওপর হামলা চালানো হয়। হাতুড়ির আঘাতে গুরুতর আহত ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকার জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে আনা হয়। তিনি এখন সেখানেই চিকিৎসাধীন।
বিসিএস ৩১ ব্যাচের কর্মকর্তা ওয়াহিদা ঘোড়াঘাটে দায়িত্ব পালন করে আসছেন ২০১৮ সাল থেকে। তার স্বামী মেজবাহুল হোসেন রংপুরের পীরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তাদের তিন বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে।
ঘটনার রাতে ওয়াহিদার বাসায় ছিলেন তার বাবা ওমর আলী। তিনি পুলিশকে বলেছেন, রাতে বাথরুমের ভেন্টিলেটর ভেঙে কেউ একজন বাসায় ঢোকে। ওয়াহিদা টের পেয়ে এগিয়ে গেল তার মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। এ সময় ওমর আলী এগিয়ে গেলে তাকেও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে হামলাকারী পালিয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে আসাদুলের দেওয়া তথ্যে ভিত্তিতে তল্লাশি করে র্যাব একটি লাল টি শার্ট উদ্ধার করেছে, যেটি সিসিটিভির ভিডিওতে হামলাকারীদের একজনের গায়ে দেখা গিয়েছিল। আসাদুল স্বীকার করেছেন, ওই টি শার্ট তার।
র্যাব কর্মকর্তা ফেরদৌস বলেন, নবীরুল ও সান্টু দুজনেই পেশায় রঙ মিস্ত্রি। আসাদুল ও নবীরুলের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রায়ছে। এর মধ্যে নবীরুলের বিরুদ্ধে আগের একটি চুরির মামলাও রয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে এই র্যাব কর্মকর্তা বলেন, আসাদুলের দাবি অনুযায়ী, ইউএনওর বাসায় ঢোকার মূল পরিকল্পনা ছিল নবীরুলের। “সে বলেছে, ইউএনও মহোদয়ের শয়নকক্ষ ও তার বাসগৃহ থেকে অর্থ সম্পদ লুট করা এবং চুরি করাই ছিল তাদের অভিপ্রায়। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও তদন্ত প্রয়োজন আছে।”
সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাওয়া হয়েছিল, হামলাকারীদের উদ্দেশ্য যদি চুরিই হবে, কোনো মালামাল র্যাব জব্দ করেছে কি না। উত্তরে ফেরদৌস বলেন, তারা এ ঘটনার ছায়া তদন্ত করছেন। লাল রঙের একটি টি শার্ট ছাড়া আর কিছু উদ্ধার বা জব্দ করার সঙ্গে র্যাব ছিল না। মামলার আলামত জব্দ করেছে সিআইডি, তারাই সেগুলো আদালতে তুলবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে ফেরদৌস বলেন, তারা মোট ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রংপুরে তাদের কার্যালয়ে এনেছিলেন, তাদের মধ্যে জাহাঙ্গীরও একজন।
একজন সাংবাদিক এ সময় বলেন, জাহাঙ্গীরের একটি রাজনৈতিক পরিচয় আছে, গ্রেপ্তারের খবরে তাকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। কোনসন্দেহ থেকে তাকে ধরা হয়েছিল এবং ছেড়েই বা দেওয়া হল কেন।
জবাবে তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে’ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জাহাঙ্গীরকে তারা র্যাব কার্যালয়ে নিয়ে এসেছিলেন। কথা বলে ওই ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা না পাওয়ায়’ তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ইউএনওর বাসায় ঢুকে হামলার ঘটনায় রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদান্ত কমিটি গঠন করেছেন বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওয়াহাব।
পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজির একজন প্রতিনিধি এবং দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ মাহমুদ এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন।