গণবাণী ডট কম:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের জন্য সারাবিশ্বের মানুষ অপেক্ষা করছে। এ নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই মার্কিন মুল্লুকে অশান্তি শুরু হয়ে গেছে। আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি চলছে বিক্ষোভ। সবার মনে একটাই প্রশ্ন কে হচ্ছেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট- বাইডেন? না ট্রাম্পই থাকবেন হোয়াইট হাউজে?
সর্বশেষ ৪৪ টি অঙ্গরাজ্যের ঘোষিত ফলাফলে বাইডেন জিতেছেন ২৫৩ টি ইলেকটোরাল ভোট, ট্রাম্প ২১৪ টি। মোট ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৩৮, আর জিততে হলে প্রয়োজন ২৭০টি ভোট। এবারের নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৬%, যুক্তরাষ্ট্রের ১২০ বছরের ইতিহাসে যা সবচেয়ে বেশি
এখনো কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের ফলাফল ঘোষণা বাকি আছে। তারই মধ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন যে, আইন-সম্মত’ ভোট গননায় তিনিই বিজয়ী হয়েছেন। মেইল-ইন ব্যালটকে কেন্দ্র করে মি. ট্রাম্প বারবার দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ তুললেও তার দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মন্তব্য করেছেন, শেষ পর্যন্ত আমার মনে হয় বিচারকদেরই ফলাফল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিতে হবে।’
জো বাইডেন তার সমর্থকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন যে তিনিই যে বিজয়ী হবেন সেবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’
অপরদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল এখন নির্ভর করছে চারটি রাজ্যের ওপর। রাজ্যগুলো হলো : অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, নেভাডা এবং পেনসিলভেনিয়া।
নেভাডা এবং অ্যারিজোনায় জো বাইডেন সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন, জর্জিয়া ও পেনসিলভেনিয়াতেও তিনি ব্যবধান কমিয়ে আনছেন। পেনসিলভেনিয়া, উইসকনসিন, জর্জিয়া এবং মিশিগানে ভোট গণনা বন্ধ করার লক্ষ্যে মি. ট্রাম্পের নির্বাচনী দল মামলা দায়ের করেছে। বাইডেন এখন পর্যন্ত মোট সাত কোটি ১৫ লক্ষ ভোট পেয়েছেন।
চূড়ান্ত ফলাফল কত দূরে?
বৃহস্পতিবারের ভোট গণনা এখনও শেষ হয়নি এবং বাকি পাচটি রাজ্যে কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থী জয় পেতে যাচ্ছেন কি না, তাও এখন পর্যন্ত ধারণা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে জো বাইডেন ধীরে ধীরে বিজয়ের দিকে আগাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে।
চারটি ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যের ওপর এখন সবার নজর :
জর্জিয়া: এই রাজ্যে ট্রাম্প এখনও সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। তবে বৃহস্পতিবারে যেখানে ১৮ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন তিনি, শুক্রবার সকাল ১১ টা (বাংলাদেশ সময়) পর্যন্ত ঐ ব্যবধান কমে দাঁড়িয়েছে ১,৮০০ ভোটে। এখনও প্রায় ১৫ হাজার ভোট গণনা বাকি রয়েছে।
নেভাডা: দিনের শুরুতে বাইডেন এগিয়ে ছিলেন ৮ হাজার ভোটে, এখন ১১ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন তিনি।
পেনসিলভানিয়া: বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে ট্রাম্প এগিয়ে ছিলেন ১ লাখ ৬০ হাজার ভোটে। তবে মেইল-ইন ব্যালট গণনা শুরু হওয়ার পর থেকে ব্যবধান কমতে শুরু করে। এখন ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন প্রায়ঢ ২৫ হাজার ভোটে, আর গোনা বাকি ২ লাখ ২০ হাজার ভোট।
অ্যারিজোনা: বাইডেন এখানে ৬৯ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ভোটে। এখনও ২ লাখ ২০ হাজারের বেশি ব্যালট গণনা বাকি রয়েছে।
দুই প্রার্থী যেভাবে জয় পেতে পারেন
পেনসিলভানিয়া, নেভাডা, অ্যারিজোনা, জর্জিয়া ও নর্থ ক্যারোলাইনা - এই পাঁচটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যের ভোট এখনও গণনা চলছে।
শুধু পেনসিলভানিয়া অথবা বাকি চারটি রাজ্যের যে কোনো দু’টিতে জয় পেলে জো বাইডেন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হতে পারবেন।
অন্যদিকে মি ট্রাম্পের আবারো হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব ফিরে পেতে প্রয়োজন পেনসিলভানিয়া এবং বাকি চারটি রাজ্যের তিনটিতে বিজয়।
এমন পরিস্থিতিতে আগে যা হয়েছিল:
নির্বাচনে ভোট গণনার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে এবার যেমন দু পক্ষের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, সেরকমই দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল ২০ বছর আগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে, ফ্লোরিডার ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে।
ডেমোক্র্যাট আল গোর ও রিপাবলিকান জর্জ ডব্লিউ বুশের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছিল। তবে ভোটের দিন মনে হচ্ছিল যে আল গোরই জিততে যাচ্ছেন।
জনপ্রিয় ভোটে গোর অনেক এগিয়ে থাকলেও ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে দুই প্রার্থীর লড়াই হচ্ছিল। সব নির্ভর করছিল ফ্লোরিডার ইলেকটোরাল কলেজ ভোট কার পক্ষে যায়, তার ওপর।
ঐ সময় ফ্লোরিডা রাজ্যে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনী নীতি অনুসরণ করা হচ্ছিল। ভোট গণনার নির্ভুলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর ভোট পুনর্গণনার দাবি ওঠে।
বুশ শিবিরের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গোর শিবির চারটি কাউন্টিতে ভোট পুনর্গণনার আবেদন করে।
শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ পর মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ৫-৪ ভোটে জর্জ বুশকে বিজয়ী ঘোষণা করে।
এখন পর্যন্ত আমেরিকার শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপে নির্বাচনের ফল নির্ধারণের ঘটনা ঐ একবারই। খবর : বিবিসি।