গণবাণী ডট কম:
বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরোধিতা করে বিক্ষোভে হতাহতের ঘটনার জেরে ডাকা হরতালে আজও উত্তাল অবস্থায় রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। আজ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আরো দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানাচ্ছে স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে টানা তিনদিনের সহিংস বিক্ষোভে অন্ততঃ ১০ জনের মৃত্যু হলো। খবর : বিবিসি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ড. সৌকত হোসেন বিবিসিকে বলেছেন, আজ হরতাল চলাকালে যে সংঘর্ষ হয়েছে সেখান থেকে দুজনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই তারা মৃত্যুবরণ করেন। এর বাইরে আর কোন তথ্য দেননি ড. হোসেন।
তবে স্থানীয় সংবাদদাতারা বলছেন, হেফাজতে ইসলামের সমর্থক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব সংঘর্ষে অনেক মানুষ আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশে নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরোধিতা করে ধারাবাহিক বিক্ষোভের পর আজ হরতাল পালন করছে হেফাজতে ইসলাম। হরতালে নানা জায়গায় অবরোধ ও সংঘাতের ঘটনা ঘটলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই সহিংসতার ঘটনা ঘটছে সবচেয়ে বেশি।
স্থানীয় সংবাদদাতা মাসুক হৃদয় বিবিসি কে জানান, হরতালের সমর্থকরা বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। হামলাকারীরা ভূমি অফিস, সরকারি গণগ্রন্থাগার, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
শুক্রবারও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে এক জন নিহত হয়। এদিন ঢাকায় ও চট্টগ্রামের হাটহাজারিতেও ব্যাপক সহিংস বিক্ষোভ হয়। হাটহাজারিতে পুলিশের গুলিতে মারা যায় ৫ জন।
রবিবার এখন পর্যন্ত আরো দুজনের মৃত্যুর খবর এলো সেখান থেকে।
হাটহাজারি থেকে সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, হেফাজতে ইসলামের সমর্থকরা আজও খাগড়াছড়ি চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে রয়েছেন। তারা সড়কের উপর ইটের দেয়াল তুলে দুদিন ধরে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে রেখেছে।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে রবিবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে একদল বিক্ষোভকারী। স্থানীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে সেখানে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীরা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। বিক্ষোভকারীদের হাতে লাঠি এবং ইটের টুকরা দেখা গেছে।
ঢাকার গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, রবিবার (২৮ মার্চ) হেফাজতে ইসলাম ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনকালে বিক্ষুব্ধ হরতালকারীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্নস্থানে সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ অফিস, আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয় ও বাড়িঘরে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে জেলায় অরাজকতার সৃষ্টি হয়। এসময় আলআমিন (২০), আশিক (৩৫) নামে ২ জন নিহত হয়েছে। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ জনে। শহরজুড়ে চলছে থমথম অবস্থা।
এসময় সশস্ত্র হেফাজত কর্মীরা সকাল ১১টার পর থেকে শহরের হালদারপাড়াস্থ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, জেলা পরিষদ কার্যালয়, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহীর গাড়িসহ ৩টি মোটরসাইকেল, সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, পৌরসভা ভবন, পৌরসভা গ্যারেজের ৩টি গাড়ি, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা গণ গ্রন্থাগার, সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, আশুগঞ্জ টোলপ্লাজার বুথে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। শহরের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত উন্নয়ন মেলার ৩২টি স্টলে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এদিকে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শহরের পৈরতলা, জেলা পুলিশ লাইন, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক বিশ্বরোড এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সকাল ১১টার দিকে শহরের পীরবাড়িতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ লাইনে বিক্ষোভকারীরা হামলা চালিয় ভাঙচুর করে। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘন্টাব্যাপী পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। হামলা চলাকালীন সময়ে শহরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যকে দেখতে পাওয়া যায়নি। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে থানা মসজিদ থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে থানায় হামলা না চালানোর জন্য মাদ্রাসার ছাত্রদের অনুরোধ করা হয়।
নিরাপত্তার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট, নোয়াখালীর পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সকাল নয়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে ভাঙচুর চালানো হয়। খুলে ফেলা হয় রেললাইনের নাট-বল্টু। লাইনের ওপর কংক্রিটের স্লাবও ফেলে রাখে হরতালকারীরা আশুগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাঝখানে ১৮ নম্বর রেলসেতুতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, শনিবার রাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শনিবার জেলার বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে অন্তত ৮জন নিহত হয় বলে হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও দারুল আরকান মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা সাজিদুর রহমান জানান। এছাড়াও আরো অনেক ছাত্র গুরুতর আহত হয়। নিহতরা হলেন জুরু আলম (৩৫), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বাদল মিয়া (২৪) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারিউড়া মৈন্দ গ্রামের সুজন মিয়া (২২) বুধলের প্লাম্বার শ্রমিক কাউসার (২৫), জোবায়ের মিয়া (১৪), আখাউড়া মনিয়ন্দের মাওলানা হোসাইন(২২), সদর উপজেলার কলাইমুড়ি এলাকার সুলতান ও বুধলের কাওসার মিয়া।