নিজস্ব প্রতিবেদক, (কাপাসিয়া) গাজীপুর:
দুই দফা জানাজার নামাজ শেষে গাজীপুরের সিনিয়র সাংবাদিক শেখ মনজুর হোসেন মিলনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার রাত দশটার দিকে গাজীপুরের কাপাসিয়ার পাবুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে পিতার কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
এর আগে শুক্রবার সকালে কাপাসিয়া উপজেলার কাপাসিয়া বরুন সড়কের কোটবাজালিয়া বাজারের দক্ষিণ পাশে একটি ড্রাম ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। খবর পেয়ে গাজীপুর ও কাপাসিয়ার সিনিয়র সাংবাদিকগণ ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে দুর্ঘটনা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়।
শেখ মনজুর হোসেন মিলন নিজের মোটর সাইকেল যোগে তিনি কাপাসিয়ার দিকে আসছিলেন। পথে তিনি কথিত দুর্ঘটনার শিকার হন। তিনি ড্রাম ট্রাকের চাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন, কিন্তু তার মোটর সাইকেল সম্পূর্ণ অক্ষত থাকে। এসব বিষয় দেখে ও স্থানীয়দের বর্ণনা শুনে ধারণা করা হয়, ড্রাম ট্রাকের চালকের সাথে বাক বিতন্ডার পরে চালক শেখ মনজুর হোসেন মিলনকে চাপা দিয়ে হত্যা করেছে।
মঞ্জুর হোসেন মিলনের অসুস্থ্র স্ত্রী রিমিন আক্তার, তার ভাই কামাল হোসেন অভিযোগ,এটা পরিকল্পিত হত্যা। তাঁর স্বামীকে ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রাকচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিঁনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান।
পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
মঞ্জুর হোসেন মিলন (৫২) কাপাসিয়া উপজেলার পাবুর গ্রামের মৃত আব্দুস সাঈদ শেখের ছেলে। তিনি গাজীপুর সিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দৈনিক ভোরের দর্পণ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি এবং সাপ্তাহিক গাজীপুর দর্পণ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও তিনি বৈশাখী টেলিভিশন, দৈনিক যুগান্তর ও দৈনিক দিলকালে কাজ করেছেন। তিনি কাপাসিয়া প্রেসক্লাবের তিনবারের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি অসুস্থ স্ত্রী, দুই কন্যা সন্তান, মা, ভাই, বোনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
শুক্রবার বিকেলে ঐ হাসপাতালে মঞ্জুর হোসেন মিলনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে হাসপাতালের দক্ষিণ চত্বরে তার প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার নামাজে তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ।
পরে রাত সাড়ে ৯ টায় গাজীপুরের কাপাসিয়ায় পাবার উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে দ্বিতীয় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজার নামাজে তার সহকর্মী ছাড়াও কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার আজিজুর রহমান পেরা, কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোঃ আমানত হোসেন খান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বিপুল সংখ্যক মুসল্লী অংশগ্রহণ করেন।পরে তাকে পারিবরীক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।সেখানে তার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
পরে কাপাসিয়ার কর্মরত সাংবাদিকগণ তার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন এবং সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। সেখান থেকে তারা কাপাসিয়া থানায় এ ঘটনায় বিচার চেয়ে অভিযোগ দায়ের করতে যান।
এ ঘটনায় শেখ মনজুর হোসেন মিলনের ছোট ভাই কামাল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা চালকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে এজাহার দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, শেখ মঞ্জুর হোসেন মিলন শুক্রবার বেলা অনুমান সোয়া ৯টার দিকে কাপাসিয়া থানাধীন রায়েদ গ্রামস্থ্য শ্বশুর বাড়িতে বেড়াইতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেল যোগে রওনা হয়। পথে কাপাসিয়াগামী পাকা রাস্তা দিয়ে তার সঠিক পার্শ্ব দিয়ে চালায়ে আসতে থাকাবস্থায় বেলা অনুমান সোয়া ১০টার দিকে কাপাসিয়া থানাধীন কোটবাজালিয়া চৌরাস্তা থেকে অনুমান ৩০০ গজ দক্ষিণে আবুল হোসেনের বাড়ি সংলগ্ন পশ্চিম পার্শ্বে কাপাসিয়া ডাকোয়াদী পাকা রাস্তায় পৌঁছলে সম্মুখ কাপাসিয়ার দিক থেকে ঢাকা মেট্রো-ট-১৭-১০৮১ নং বালি বোঝাই ড্রামট্রাক এর অজ্ঞাতনামা চালক গাড়ীটি চালায়ে দক্ষিণ ডাকোয়াদীর দিকে তার ভুল সাইড নিয়ে যাচ্ছিল।
এজাহারে আরো বলা হয়েছে, শেখ মঞ্জুর হোসেন মিলনকে তার রাস্তার সঠিক পার্শ্ব দিয়ে চালাইতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে থাকায় সে মোটরসাইকেলটি থামায়ে গাড়ী থেকে নেমে সিগনাল দিয়ে ড্রামট্রাকটি থামাইলে উহার অজ্ঞাতনামা চালক গাড়ী থেকে নেমে শেখ মঞ্জুর হোসেন মিলনের সাথে কথা কাটাকাটি করতে থাকে। এমন সময় উক্ত ড্রামট্রাকের অজ্ঞাতনামা চালক ক্ষীপ্ত হয়ে তার ড্রামট্রাকে উঠে বসে গাড়ীটি চালু করে শেখ মঞ্জুর হোসেন মিলনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে গাড়ীটি পিছন দিকে চালাইতে থাকে এবং এক পর্যায়ে উক্ত ড্রামট্রাক চালক তার ড্রামট্রাকটিকে চালায়ে উল্লিখিত ঘটনার জের ও শত্রুতায় শেখ মঞ্জুর হোসেন মিলনকে চাপা দিয়ে কোমড়ের নিচে উভর পা সহ পিষে চূড়মার করে ফেলে, নাড়ি-ভূরি বের করে ফেলে, মাথায় ও শরীরের অন্যান্য স্থানে গুরুতর ফাটা, থেঁতলানো রক্তাক্ত জখম করে। হত্যা করে ড্রামট্রাকটি ফেলে দ্রুত পশ্চিম দিকে পালিয়ে যায়।
আরো বলা হয়েছে, রাস্তা চলাচল ও আশপাশের বাড়ির লোকজন উক্ত ঘটনা দেখে এবং শেখ মঞ্জুর হোসেন মিলনের ব্যবহৃত মোবাইল সেট থেকে নাম্বার সংগ্রহ করে জনৈক ব্যক্তি তার ০১৯৭২৭৮৯৭৬৮ মোবাইল নাম্বার থেকে শেখ মঞ্জুর হোসেন মিলনের স্ত্রী রিমিন আক্তারকে তার ০১৬৮৬৭৭৪০১১ এবং আমার ০১৯২১৮৯৭৯৬৮ মোবাইল নাম্বারে ফোন করে উক্ত ঘটনা জানাইলে আমি এবং রিমিন আক্তার ও তার ভাই মোঃ তামিম সহ ছোট ভাই আমির হোসেন ও অন্যান্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই এবং উল্লিখিত ঘটনার বিস্তারিত দেখি ও শুনি। কাপাসিয়া থানা পুলিশ সংবাদ পাইয়া ঘটনাস্থলে যায় এবং মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য লাশ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন।
কিন্তু শনিবার দুপুর ১২টার সময় রিপোর্ট লেখার সময়ও মামলাটি থানায় রেকর্ড করা হয়নি।
এদিকে, সাংবাদিক মঞ্জুর হোসেন মিলনের নিহতের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম, গাজীপুর জেলা বিএনপি’র সভাপতি একেএম ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান, কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডাঃ রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, শ্রীপুর পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন বেপারী, গাজীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি খায়রুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান, শ্রীপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এসএম মাহফুল হাসান হান্নান, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, সহ-সভাপতি বশির আহমেদ কাজল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেকসহ শোক জানিয়েছেন গাজীপুরের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।