গণবাণী ডট কম:
আজ বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বুধবার সকালে নির্বাচন কমিশনের মুখপাত্র ও সচিব মো: জাহাংগীর আলম নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সন্ধ্যা ৭টায় জাতির জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। সেখানে তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন।
ইসি সচিব বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন অংশীজনের সাথে সভা করে একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছিল। সেই রোডম্যাপ অনুযায়ী, তারা যে সমস্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন তার ধারাবাহিকতায় আজকে বিকেল পাঁচটায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত ২৬তম প্রবিশন সভা অনুষ্ঠিত হবে। এই সভায় তফসিল চূড়ান্ত করা হবে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, এরপর সন্ধ্যা সাতটায় বাংলাদেশের সব গণমাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জাতীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। ওই ভাষণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিস্তারিত সময়সূচী অর্থাৎ তফসিল ঘোষণা করা হবে।
সচিব জানান, এই ভাষণটি বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করবে। তফসিলের মাধ্যমে জানা যাবে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠিক কবে অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে, তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আগারগাঁওয়ে কমিশন ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কমিশন ভবনে এনআইডি সংশোধনের জন্য ব্যক্তিগত শুনানি মঙ্গলবার থেকে বন্ধ রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, দেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন। নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৮৫২ জন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করেছে ইসি। এ তালিকা অনুযায়ী সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে। এ নির্বাচনে ভোট দেবেন ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন ভোটার।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভোটার ছিল ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন। সে হিসেবে ৫ বছরে দেশে ভোটার বেড়েছে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৬ জন।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, রেওয়াজ অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণা থেকে ভোট গ্রহণের দিনের মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ দিনের পার্থক্য থাকে। বুধবার তফসিল ঘোষণা করা হলে আর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হলে প্রায় ৫০ দিনের পার্থক্য থাকবে। এর মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় থাকতে পারে।
নির্বাচন কমিশন এই তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিলো এমন সময়ে যখন নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ চরম অবস্থায় রয়েছে।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে পঞ্চম দফার মতো অবরোধ পালন করছে বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
তফসিল ঘোষণার দিনে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন নামের একটি রাজনৈতিক দল, যে দলটি চরমোনাই পীরের দল হিসাবে পরিচিত।
নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ইসি সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “নির্বাচন কমিশন মনে করে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার মতো পরিবেশ রয়েছে। এটা নির্বাচন কমিশন বার বারই বলেছে।”
মি. আলম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করবেন। যেদিন যে দলের প্রতীক বরাদ্দ করা হবে, সেদিন থেকে নির্বাচনের তারিখ সকাল আট টার পূর্ববর্তী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত দলগুলো প্রচারণা চালাতে পারবেন।
এর মধ্যেই বাংলাদেশের বড় তিনটি দলকে চিঠি দিয়ে ‘পূর্বশর্ত ছাড়া’ সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। এর আগে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনে তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং বাধা দানকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার দেয়ার মতো ঘোষণাও দিয়েছে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক মহল থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানানো হলেও সেরকম সম্ভাবনা খুব কম।
মন্তব্য