গাজীপুর প্রতিনিধি:
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে আগামীককাল শুক্রবার থেকে তাবলীগ জামাতের তিন দিনব্যাপী ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হবে। ঘন কুয়াশা, মাঝে মাঝে নেমে আসা বৃষ্টিও কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে দেশ বিদেশের লাখো মুসুল্লীরা বাস-ট্রাক, কার-পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে দলে দলে ইতোমধ্যে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। তারা কাঁধে-পিঠে প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে ইজতেমাস্থলে এসে নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন। টঙ্গীর ইজতেমাস্থল এখন মুসল্লীদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যেই প্রথম পর্বের বর্জ্য অপসারণ, ময়দান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করাসহ নেয়া হয়েছে সার্বিক প্রস্তুুতি। ইজতেমায় নিরাপত্তায় কঠোর বলয় গড়ে তোলার পাশাপাশি মুসল্লীদের নির্বিঘ্নে চলাফেরা, ওযু, গোসল, রান্না -বান্নার পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ, স্বাস্থ্য সেবা, সার্বক্ষণিক বিদ্যুত ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদেশী নিবাসে গ্যাস সররবাহ ও অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
মুসলিম বিশ্বের ২য় বৃহত্তম জমায়েত তাবলীগ জামায়াতের বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বের প্রথম পর্ব কাল থেকে শুরু হলেও ইমান আমল ও আখলাখের উপর আজ থেকে শুরু হয়েছে আম বয়ান। তবে শুক্রবার বাদ ফজর মুল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে আম বয়ানের মধ্যদিয়ে। বাংলদেশ, ভারত ও পাকিস্থানের তাবলীগ মুরুব্বীগন এ বয়ানে অংশ নিবেন। টঙ্গীর তুরাগ তীরের বিশালাকারের ময়দান আজই পরিপূর্ন হয়েগেছে। আগত মুসুল্লীদের জন্য ইজতেমা ময়দানকে ৮৭টি খিত্তায় বিভক্ত করা হয়েছে। ৬৪ জেলার তাবলীগ জামাতের মুসল্লীগণ নিজ নিজ জেলাওয়ারি খিত্তায় অবস্থান করছেন। দূর দূরান্ত থেকে আগত মুসল্লীরা জামাতবদ্ধ হয়ে এসব খিত্তায় আসছেন। এয়াড়া আরো পাঁচটি অতিরিক্ত খিত্তা রিজার্ভ রাখা হয়েছে। মাদরাসার ছাত্র অথবা কোনো জেলার মুসল্লী বেশি হলে সে সব খিত্তায় তাদের বসার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। মুসল্লীদের চিকিৎসা সেবায় সরকারি ও বেসরকারি ভাবে স্বাস্থ্য ক্যাম্প চালু করেছে। এসকল ক্যাম্পে মুসল্লীগণ লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। এছাড়া মুসল্লীগণ ইজতেমা মাঠে এসে যাতে ওযু, গোসল, রান্না-বান্নার জন্য কোন সমস্যায় না পড়েন সেজন্যে সরকারী ভাবে আগের চেয়ে সুবিধাদি বাড়ানো হয়েছে।
এ বছর আয়োজিত দুই পর্বের ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হবে আগামী রবিবার (১২ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে। ৪দিন বিরতী দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৭ জানুয়ারি এবং শেষ হবে ১৯ জানুয়ারি। প্রথম পর্বে অংশ নিচ্ছেন মাওলানা যোবায়ের অনুসারী মুসুল্লীগণ এবং দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিবেন মাওলানা সাদ অনুসারী মুসুল্লীগণ।
আগত মুসুল্লীগণ জানিয়েছেন, ইমান, আমল, আখলাকের উপর জ্ঞান অর্জন ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্যই ইজতেমায় এসেছেন মুসুল্লীরা।
বিশ্ব ইজতেমার ময়দানের জুবায়ের অনুসারী মুরব্বি ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান জানান, ময়দানকে মোট ৯২টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। এবার দেশের ৬৪ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। তাদের জন্য ৮৭টি খিত্তা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাঁচটি খিত্তা সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। কোনো জেলার মুসল্লী বেশি হলে অথবা মাদরাসা ছাত্রদের ওই খিত্তাগুলোতে দেয়া হবে। তিনি আরো জানান, এ বছর ইজতেমার প্রথম পর্বে রেকর্ড সংখ্যক মুসল্লী অংশ নেবেন। এজন্য সারাদেশে ব্যাপক দাওয়াতি কাজ করা হয়েছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, ইজতেমা ময়দানকে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায় রাখতে মহানগর পুলিশ, র্র্যাব, আনসার সদস্যরা সিসি টিভি, ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ, আগত মুসুল্লীদের লাগেজ ও দেহ তল্লাশী, সাদা পোশাকে নিরাপত্তার বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারী অব্যাহত রেখেছেন। বিদেশী মেহমানদের এবারই প্রথম নিরাপত্তা বিবেচনায় ৫ ভাগে ভাগ করে রাখা হয়েছে। তিনি আরো জানিয়েছেন, র্যাব সদস্যরাও নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। র্যাব ছাড়াই ৯ হাজার পুলিশ সদস্য নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত থাকবেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, এবার মুসুল্লীদের জন্য গতবারের তুলনায় সকল সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। ইজতেমা ময়দানে সার্বক্ষনিকভাবে কাজ করছে সিটি করপোনেশনের ২ হাজার কর্মী। তাছাড়া ইজতেমা মাঠের খোঁজ খবর রাখছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।
আগামীকাল শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত ইজতেমা ময়দানে। বৃহত্তম এই জুমার জামাতে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসুল্লীরা দলে দলে আসবেন ইজতেমা ময়দানে। ইজতেমার আয়োজকদের ধারণা আনুমানিক ১০ লক্ষাধীক মুসুল্লী জুমার নামাজ আদায় করবেন।
কোন খিত্তায় কোন জেলা:
দেশের বিভিন্ন জেলায় আগত মুসুল্লীরা ইজতেমার প্রথম পর্বে যে সব খিত্তায় থাকবেন সেগুলো হচ্ছে; ১নং খিত্তায় গাজীপুর, ২নং খিত্তায় টঙ্গী-১, ৩নং খিত্তায় টঙ্গী-২, ৪নং খিত্তায় টঙ্গী-৩, ৫নং খিত্তায় মিরপুর-১, ৬নং খিত্তায় মিরপুর-২, ৭নং খিত্তায় সাভার-১, ৮নং খিত্তায় সাভার-২, ৯নং খিত্তায় মোহাম্মদপুর, ১০নং খিত্তায় কারকরাইল-৩, ১১নং খিত্তায় কেরানীগঞ্জ-১, ১২নং খিত্তায় কেরানীগঞ্জ-২, ১৩নং খিত্তায় কাকরাইল-১, ১৪নং খিত্তায় কাকরাইল-২, ১৫ (ক) খিত্তায় ডেমরা, ১৫ (খ) নং খিত্তা (সংরক্ষিত খিত্তা), ১৬নং খিত্তায় কাকরাইল-৪, ১৭নং খিত্তায় কাকরাইল-৫, ১৮নং খিত্তায় কাকরাইল-৬, ১৯নং খিত্তায় কাকরাইল-৭, ২০নং খিত্তায় রাজশাহী, ২১নং খিত্তায় নওগাঁ, ২২নং খিত্তায় নাটোর, ২৩নং খিত্তায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ২৪ নং খিত্তায় যাত্রাবাড়ী-২, ২৫নং খিত্তায় যাত্রাবাড়ী-১, ২৬নং খিত্তায় সিরাজগঞ্জ, ২৭নং খিত্তায় দোহার, ২৮নং খিত্তায় নবাবগঞ্জ, ২৯নং খিত্তায় মানিকগঞ্জ, ৩০নং খিত্তায় টাঙ্গাইল, ৩১নং খিত্তায় নড়াইল, ৩২নং খিত্তায় ধামরাই, ৩৩নং খিত্তায় রংপুর, ৩৪নং খিত্তায় নীলফামারী, ৩৫নং খিত্তায় কুড়িগ্রাম, ৩৬নং খিত্তায় লালমনিরহাট, ৩৭নং খিত্তায় গাইবান্ধা, ৩৮নং খিত্তায় মুন্সীগঞ্জ, ৩৯ নং খিত্তায় মাগুরা, ৪০নং খিত্তায় ঝিনাইদহ, ৪১নং খিত্তায় বগুড়া, ৪২ নং খিত্তায় নারায়ণগঞ্জ, ৪৩নং খিত্তায় ফরিদপুর, ৪৪নং খিত্তায় যশোর, ৪৫নং খিত্তায় সাতক্ষীরা, ৪৬নং খিত্তায় বাগেরহাট, ৪৭নং খিত্তায় নরসিংদী, ৪৮নং খিত্তায় ভোলা, ৪৯নং খিত্তায় জামালপুর, ৫০নং খিত্তায় ময়মনসিংহ-১, ৫১নং খিত্তায় ময়মনসিংহ-২, ৫২নং খিত্তায় মেহেরপুর, ৫৩নং খিত্তায় চুয়াডাঙ্গা, ৫৪নং খিত্তায় নেত্রকোনা, ৫৫নং খিত্তায় কিশোরগঞ্জ, ৫৬নং খিত্তায় গোপালগঞ্জ, ৫৭নং খিত্তায় বরিশাল, ৫৮নং খিত্তায় রাজবাড়ি, ৫৯নং খিত্তায় শেরপুর, ৬০নং খিত্তায় শরিয়তপুর, ৬১নং খিত্তায় মাদারীপুর, ৬২নং খিত্তায় সিলেট, ৬৩নং খিত্তায় কক্সবাজার, ৬৪নং খিত্তায় রাঙ্গামাটি, ৬৫নং খিত্তায় খাগরাছড়ি, ৬৬নং খিত্তায় বান্দরবান, ৬৭নং খিত্তায় ফেনী, ৬৮নং খিত্তায় নোয়াখালী, ৬৯নং খিত্তায় লক্ষীপুর, ৭০নং খিত্তায় চাঁদপুর, ৭১নং খিত্তায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ৭২নং খিত্তায় খুলনা, ৭৩নং খিত্তায় পটুয়াখালী, ৭৪নং খিত্তায় বরগুনা, ৭৫নং খিত্তায় চট্টগ্রাম, ৭৬নং খিত্তায় কুমিল্লা, ৭৭নং খিত্তায় পিরোজপুর, ৭৮নং খিত্তায় ঝালকাঠি, ৭৯নং খিত্তায় সুনামগঞ্জ, ৮০নং খিত্তায় হবিগঞ্জ, ৮১নং খিত্তায় মৌলভীবাজার, ৮২নং খিত্তায় পাবনা, ৮৩নং খিত্তায় ঠাকুরগাঁও, ৮৪নং খিত্তায় পঞ্চগড়, ৮৫নং খিত্তায় দিনাজপুর, ৮৬নং খিত্তায় জয়পুরহাট এবং ৮৭নং খিত্তায় কুষ্টিয়া। ৮৮ থেকে ৯২ নম্বর খিত্তা সংরক্ষিত থাকবে।