গাজীপুর প্রতিনিধি:
শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মাধ্যমে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কনকনে শীত উপেক্ষা করে গাজীপুর মহানগরীল টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে শুরু হয়েছে ৫৫তম বিশ্ব ইজতমার প্রথমপর্ব। দেশের ৬৪টি জেলার ও বিদেশীসহ মাওলানা জুবায়ের অনুসারী লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসুল্লী এ ইজতেমায় নিচ্ছেন। বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীতে মুসুল্লীদের ঢল নেমেছে। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দান পূর্ণ হওয়ার পর মুসুল্লীরা ময়দান পার্শ্ববর্তী কামারপাড়া রোড, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ফুটপাত এবং আশপাশের খালি জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন।
মুসুল্লী
ইজতেমা ময়দানের মুরব্বী ইঞ্জিনিয়ার মাহফুফুর রহমান জানান, শুক্রবার বাদ ফজর থেকে শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ খুরশীদের আম বয়ান শুরু করেছেন। বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মো: আব্দুল মতিন। আজ জুমার নামাজ পড়াবেন বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ জোবায়ের। মূল বয়ান উর্দূতে হলেও ইজতেমায় আগত বিভিন্ন দেশের-ভাষা মুসুল্লীদের জন্য স্ব স্ব ভাষায় তাৎক্ষণিক বয়ান তরজমা করা হচ্ছে।
ইজতেমা ময়দান এবং এর আশ পাশ এলাকা যতদূর চোখ যায় শুধু পাঞ্জাবি আর টুপি পড়া মানুষ আর মানুষ। ইজতেমার এ পর্বে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন জেলার মুসুল্লীরা জামাতবদ্ধ হয়ে দলে দলে কনকনে শীত, কুয়াশা আর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, পিকআপ, ট্রেন, লঞ্চসহ ইত্যাদি যানবাহনে করে গত মঙ্গলবার থেকে ময়দানে এসেছেন। বৃহস্পতিবার ময়দান পূর্ণ হয়ে গেলে ময়দানে স্থান না পেয়ে মুসুল্লীরা ময়দান পার্শ্ববর্তী সড়ককের ফুটপাত-কামারপাড়া সড়কে ও খালি জায়াগায় সামিয়ানা টানিয়ে আবস্থান নিয়েছেন। মুসুল্লীদের আসা এখনো অব্যাহত রয়েছে। আগত দেশ-বিদেশের মুসুল্লীদের পদচারণনায় শিল্প শহর টঙ্গী এখন যেন ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমায় রয়েছে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। পুরো ইজতেমা ময়দান সিসি ক্যামেরা, ওয়াচটাওয়ারের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদ্যরা পর্যবেক্ষণ করছেন। গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো: আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার বাজায় রাখার জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ৫টি স্তরে বিভক্ত করা হয়েছে। নিরাপত্তায় ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ৯ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ওয়াচ টাওয়ার, ফুটপেট্রোল, মোবাইল পেট্রোল চেকপোষ্টসহ পোশাকে সাদা পোশাকে পলিশ সদস্যরা ইজতেমা ময়দানের ভেতরে এবং বাহিরে দায়িত্ব পালন করছে।
জানা গেছে, প্রতিবারের ন্যায় এবারও বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলিগ মারকাজের শুরা সদস্য ও বুজর্গরা বয়ান পেশ করবেন। মূল বয়ান উর্দূতে হলেও তাৎক্ষনিকভাবে বাংলা, ইংরেজী, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়। বিদেশী মুসুল্লীদের জন্য বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে নিবাস তৈরি করা হয়েছে। ইজতেমায় বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসুল্লীরা আলাদা আলাদা স্থানে অবস্থান নিয়েছেন।
আরো দুই মুসুল্লীর মৃত্যু : বিশ্ব ইজতেমায় যোগদেয়া আরো দুই মুসুল্লীর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- সিরাজগঞ্জের খোকা মিয়া (৬০) এবং চট্টগ্রামের মোহাম্মদ আলী। গত রাতে তারা মারা গেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে নিহত ইয়াকুব শিকদার (৮৫) নামে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া এলাকার এক মুসুল্লী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
এ দিকে ইজতেমা শুরুর দিন শুক্রবার হওয়ায় ইজতেমা মাঠে জুম্মার নামেজে অংশ নিতে ইজতেমায় যোগদানকারী মুসুল্লী ছাড়াও অনেক মুসুল্লী আগেই ইজতেমাস্থলে এসেছেন। সকাল থেকে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশে-পাশের এলাকার বিপুল সংখ্যক ইজতেমাস্থলে জু’মার নামাজে অংশ নিতে আসছেন।
তিন দিনব্যাপি বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামি ১২ জানুয়ারি রোববার আখেরী মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। পরে চারদিন বিরতি দিয়ে ১৭ জানুয়ারি থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় মাওলানা সা’দ অনুসারী মুসুল্লীগণ অংশ নেবেন।