গাজীপুর প্রতিনিধি :
বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে দেশ বিদেশের মাওলানা সাদ অনুসারী তাবলীগ মুসুল্লীদের ঢল এখন গাজীপুর মহানগরের টঙ্গীর তুরাগ পারের ইজতেমা ময়দান মুখী। শনিবার অতিবাহিত হচ্ছে ইজতেমার দ্বিতীয় দিন। আগামীকাল রবিবার মধ্যাহ্নের পূর্বে যে কোনো সময় আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে সমাপ্তি ঘটবে তাবলীগ জামাতের এবারের ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব তথা ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার। মুসুল্লীদের টঙ্গীমুখী স্রোত অব্যাহত রয়েছে। বহু আকাংখিত আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত এ স্রোত অব্যাহত থাকবে। আখেরী মোনাজাত উপলক্ষে কয়েকটি মহাসড়কে আজ মধ্যরাত থেকে যান চলাচল সীমিত করা হবে।
ব্যাপক ধর্মীয় উদ্দীপনা ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় লাখো লাখো ধর্মপ্রাণ মুসুল্লী যোগ দিয়েছেন বিশ্ব ইজতেমায়। আল্লাহ প্রদত্ত বিধান ও রাসুল (সঃ) প্রদর্শিত তরিকা অনুযায়ী জীবন গড়ার আহবান জানিয়ে তাবলিক জামাতের শীর্ষ মুরব্বীদের বয়ান শুনে এবং জিকির আসকার, ইবাদত, বন্দেগী করে প্রথম দিন অতিবাহিত করেছেন মুসুল্লীরা।
শনিবার বাদ ফজর দিল্লীর মাওলানা মুরসালিনের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম। এ বয়ান বাংলায় তরজমা করছেন বাংলাদেশের মুফতি আজিম উদ্দিন। এ ছাড়া ইজতেমায় আগত বিভিন্ন ভাষাভায়ির মুসুল্লীদের জন্য ওই বয়ান তাৎক্ষনিক স্ব স্ব ভাষায় অনুবাদ করা হচ্ছে। প্রতিদিন ফজর থেকে এশা পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানে ইমান, আমল, আখলাক ও দ্বীনের পথে মেহনতের উপর বয়ান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
শনিবার বাদ যোহর বয়ান করেন দিল্লীর আ: সাত্তার মেওয়াতী, এ বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মুফতি আশরাফ আলী, বাদ আছর বয়ান করেন বাংলাদেশ মাওলানা মোশারফ, আজ বাদ মাগরিব বয়ান করবেন মাওলানা জমশেদ। তাঁর বয়ান বাংলায় তরজমা করবেন মুফতি জিয়া বিন কাশেম বলে জানিয়েছেন ইজতেমা আয়োজিক মুরব্বী আনিস।
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশ এলাকায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে ৫ স্তরের। পোশাকের পাশাপাশি প্যান্ডেলের ভিতরে-বাইরে সাদা পোশাকে (মুসুল্লী বেশে) রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরো ইজতেমা ময়দান সিসি ক্যামেরার মধ্যমে এবং বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যবেক্ষন টাওয়ার স্থাপন সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে লাখ লাখ মুসুল্লী ইজতেমা ময়দানে অবস্থান করছেন। আখেরি মোনাজত শরিক হতে আরো বিপুল সংখক মুসুল্লী কাল ইজতেমা ময়দানে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মুসুল্লীদের ইজতেমা ময়দানে আসা এবং আখেরি মোনাজাত শেষে মুসুল্লীদের বাড়ি ফেরা নির্বিগ্ন করতে গাজীপুর মেট্টাপলিটন পুলিশ টঙ্গীমুখী সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করবে।
গাজীপুর মেট্টাপলিটন পুলিশের কমিশনার মো: আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, আখেরি মোনাজাত শরিক হতে আরো মুসুল্লী আসবেন। অনেক মুসুল্লী ময়দানে স্থান না পেয়ে রাস্তায় বসে মোনাজাতে শরিক হন। মুসুল্লীদের আসা-যাওয়া নির্বিগ্ন করতে শনিবার দিবাগত ভোর রাত ৪টা হতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর চৌরাস্তায় এবং ঢাকার মহাখালী থেকে বন্ধ করে দেয়া হবে। উত্তরবঙ্গ থেকে আসা গাড়ি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ি থেকে বন্ধ করে দেয়া হবে। এ ছাড়া টঙ্গীমূখী সকল শাখা সড়কগুলো বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ ট্রাফিক ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, ইজতেমায় যোগ দেয়া বৃদ্ধ মুসুল্লীদের যাতায়তের জন্য সাটল বাসের ব্যবস্থা থাকবে। ইজতেমাস্থল থেকে চৌরাস্তামূখী ৩০টি এবং মহাখালীমূখী ৩০ বাস চলাচল করবে। তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও ভাল রয়েছে। আশা করছি বাকি সময়টুকুও সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে।
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ময়দানের সংলগ্ন এলাকায় স্থাপিত পুলিশ কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেয়া ৭ মুসুল্লীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাতে ও শনিবার ভোরে তারা মৃত্যু বরণ করেন। এরা হলো, রংপুরের পীরগঞ্জ থানার ওসমানপুর এলাকার মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে হুমায়ুন কবির (৬০), ঝিনাইদহ সদরের কালাহাট গোপালপুর এলাকার লুৎফর রহমানের ছেলে আ ফ ম জহুরুল আলম (৬৫), ঢাকার তুরাগ থানাধীন নলভোগ এরাকার ফজলুর রহমানে ছেলে ইলিয়াস মিয়া (৮৫) এবং গাইবান্ধার সাঘাটা থানার কামালেরপাড়া এলাকার ভিলু হাজীর ছেলে আব্দুর সোবাহান (৬৫)। সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারা বাজার থানার চানপুর লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত হযরত আলীর ছেলে কাজী আলাউদ্দিন (৬৫), নরসিংদী জেলার বেলাব থানার বিরবাঘরের চন্দনপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে সুরুজ মিয়া (৬০) ও গাইবান্ধা জেলার ফুলছরি থানার টেংরাকান্দি গ্রামের রমজান আলীর ছেলে গোলজার হোসেন (৪০)।