গণবাণী ডট কম:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার নির্দেশে শর্ত সাপেক্ষে পচিশ মাসের বেশী সময় কারাভোগের পর ৪৯তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের একদিন আগে মুক্তি পেলেন দুর্ণীতি মামলায় দন্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।
বুধবার বিকাল ৩টার কিছু সময় পরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। করোনাভাইরাসের সংক্রমেণের ঝুকির মধ্যে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর ভিড় ঠেলে তিনি মুক্তি পাওয়ার প্রায় দুই ঘন্টা পর পৌছেছেন গুলশানে তার ভাড়া বাসা ফিরোজায়।
বিএনপি মহাসচিবের অনুরোধ উপেক্ষা করে বিপুল সংখ্যক নেতা কর্মী খালেদা জিয়াকে এক নজর দেখার জন্য মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুকি নিয়ে হাসপাতাল চত্বর ও আশপাশের সড়কে ভীড় করেন। একারণে বিকাল ৩টার কিছু পরে মুক্তি পেলেও হাসপাতালের কেবিন থেকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে তাকে সোয়া ৪টার দিকে বের করে আনা হয়। এ সময় তার পরনে ছিল বহুল পরিচিত হয়ে ওঠা গোলাপী রংয়ের শাড়ি, চোখে সানপ্লাস, আর মুখে মাস্ক। ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার নিজে গাড়ি চালিয়ে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেন। শামীমের স্ত্রী কানিজ ফাতেমাও ছিলেন ওই গাড়িতে। নেতা কর্মীদের ভিড় ঠেলে হাসপাতাল থেকে সরাসরি গুলশানে তার বাস ভবন ফিরোজা পৌছাতে সময় লেগেছে প্রায় দুই ঘন্টা।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দন্ডিত হবার পর ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে বন্দি ছিলেন খালেদা জিয়া। গত দুই বছর এক মাসের বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দি থাকাবস্থায় খালেদা জিয়া শারিরীক অসুস্থতার জন্য গত ১১ মাস ধরে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার করোনা নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশবাসীকে চমকে দিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার গুলশানের বাসায় সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান, দুইটি শর্তে খালেদা জিয়াকে ৬ মাসের জন্য মুক্তি দেয়া হচ্ছে। এগুলো হলো - এই সময়ে তাঁর ঢাকায় নিজের বাসায় থাকতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।
তিনি আরো বলেন, ”মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হচ্ছে, আইনি প্রক্রিয়ায় দুই শর্ত সাপেক্ষে তার দণ্ডাদেশ ৬ মাস স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য।”
আইনমন্ত্রী বলেন, ”বেগম খালেদা জিয়ার বয়স বিবেচনায়, মানবিক কারণে, সরকার সদয় হয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা (উপধারা-১)অনুযায়ী দণ্ডাদেশ ৬ মাস স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
আইনমন্ত্রী বলেন, ”ঢাকাস্থ নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করার শর্তে এবং এই সময় বিদেশে গমন না করার শর্তে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য আমি মতামত দিয়েছি। সেই মতামত এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে গেছে।” যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাকে মুক্তি দেয়া হবে, তখন থেকে এই ছয় মাস গণনা শুরু হবে।
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো পর মুক্তির ফাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ওই নথি মন্ত্রণালয়ে পৌছেছে। এই নথির ভিত্তিতে একটি প্রজ্ঞাপন তৈরি করে কারা কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরবর্তী কাজ আইজি প্রিজন সম্পন্ন করবেন। এখন যে কোন সময় খালেদা জিয়া ছাড়া পাবেন।
এরপর বিকাল ৩ টার কিছু পরে বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্বেগ উৎকন্ঠা আর অপেক্ষার সমাপ্তি টেনে মুক্ত হন খালেদা জিয়া।
এসময় খালেদা জিয়ার পরিবারের কয়েক সদস্য, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। নিষেধ অমান্য করে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী হাসপাতাল চত্বরে উপস্থিত হওয়ায় খালেদা জিয়াকে নিয়ে গাড়ী বের হতে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়।
প্রকাশ, ২০০৮ সালে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ মামলা দায়ের হয়। তার ১০ বছর পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মামলার রায়ে তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। তবে, পরে হাইকোর্ট সেই সাজা বাড়িয়ে দশ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। আরেকটি মামলায় তাঁর সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।