গণবাণী ডট কম:
করোনা প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির শনিবার অনুষ্ঠিত এক সভায় সংক্রমণ বিবেচনায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ৪৫টি এবং চট্টগ্রামের ১০টি এলাকা এবং ঢাকার বাইরে গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকাকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বা ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে, এখনই রেড জোন হিসাবে চিহ্নিত এসব এলাকা পুরোটাজুড়ে লকডাউনের সম্ভাবনা নেই। রেড জোনে কবে কখন কিভাবে লক ডাউন হবে, তা পরে স্থানীয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিবে।
লকডাউন বাস্তবায়নের কাজে যুক্ত একজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী রবিবার গণমাধ্যমকে বলেছেন, তাঁদের সিদ্ধান্ত হলো বড় এলাকা নয়, বড় এলাকার অধিক সংক্রমিত ছোট এলাকায় কার্যকর লকডাউন করা। আর এটি একযোগে আগামীকাল থেকেই শুরু হবে এমন নয়। পর্যায়ক্রমে তা হবে।
যেমন, ঢাকার রাজাবাজারের মধ্যে কেবল পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় লকডাউন চলছে। আর যেসব এলাকা লকডাউন করা হবে সেখানে সাধারণ ছুটি থাকবে। ছুটির বিষয়ে আগামীকাল সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হলো ঢাকা মহানগরীর যেসব এলাকায় প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৬০ জন বা তার বেশি মানুষের শরীরে করোনা শনাক্ত হবে ওই এলাকাকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। আর ঢাকার বাইরে কোনো এলাকায় যদি প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ১০ জন বা তার বেশি করোনা রোগী থাকে তাহলে সেটি রেড জোন হবে।
আর ঢাকায় প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে তিন থেকে ৫৯ জন আক্রান্ত হলে সেটি হবে মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বা হলুদ এলাকা। ঢাকার বাইরে লাখে তিন থেকে ৯ জন রোগী থাকলে হলুদ এলাকা হবে। আর কোনো সংক্রমণ নেই বা এক লাখ মানুষের মধ্যে তিনজনের কম আক্রান্ত থাকলে সেই এলাকাটিকে নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বা সবুজ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।
জানা গেছে, করোনা প্রতিরোধে গঠিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির শনিবারের এক সভায় প্রাথমিকভাবে লাল বা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে কতগুলো এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৭টি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৮ এলাকা মোট ৪৫টি এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ১০টি এলাকা রয়েছে। ঢাকার বাইরে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার সকল উপজেলাকে রেড জোন চিহ্নিত করা হয়েছে। এখানে তুলনামূলক বড় এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, জেলার জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন এবং পুলিশ সুপার মিলে এসব জোনের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে রেড জোন চিহ্নিত করবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত লকডাউনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সিটি করপোরেশন এলাকায় এবারের ভিন্নমাত্রার লকডাউন বাস্তবায়নের কাজটি হচ্ছে সিটি করপোরেশনের অধীনে। সিটি করপোরেশনগুলো স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে। এই লকডাউন বাস্তবায়নের কাজে যুক্ত আছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি আজ গণমাধ্যমকে বলেন, সীমিত এলাকা নিয়ে লকডাউনের চেষ্টা হচ্ছে। কারণ এই পরিস্থিতিতে মোকাবিলার জন্য সামর্থ্যও একটি বিষয়।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনেও বলেছেন রেড জোন চিহ্নিত কোনো বড় এলাকায় নিয়ে লকডাউন হবে না। একটি এলাকার সংক্রমণ বেশি থাকা অংশটিকে লকডাউন করা হবে। আর কাল থেকেই তা হবে এমন নয়। এটি পর্যায়ক্রমে হবে।
নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ১ জুন সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন এলাকাকে লাল, হলুদ ও সবুজ এলাকায় ভাগ করে ভিন্নমাত্রায় এলাকাভিত্তিক লকডাউন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। অধিক সংক্রমিত এলাকাকে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সম্মতি দিয়েছেন।
তারই ধারাবাহিকতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব রাজাবাজারে গত মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে লকডাউন শুরু হয়। এখন ঢাকার বাইরেও কিছু কিছু এলাকায় তা শুরু হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটির রেড জোন চিহ্নিত এলাকা:
উত্তর সিটি করপোরেশনের যে ১৭ এলাকাকে রেড জোন হিসেবে ধরা হয়েছে সেগুলো হলো: বসুন্ধরা, বাড্ডা, ক্যান্টনমেন্ট, মহাখালী, তেজগাঁও, রামপুরা, আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, গুলশান, মগবাজার, এয়ারপোর্ট, বনশ্রী, রায়েরবাজার, রাজাবাজার, উত্তরা, মিরপুর।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি রেড জোন চিহ্নিত এলাকা:
দক্ষিণ সিটির ২৮টি এলাকার মধ্যে আছে: যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মুগদা, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, জিগাতলা, লালবাগ, আজিমপুর, বাসাবো, শান্তিনগর, পল্টন, কলাবাগান, রমনা, সূত্রাপুর, মালিবাগ, কোতোয়ালি, টিকাটুলি, মিটফোর্ড, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, ওয়ারী, খিলগাঁও, পরিবাগ, কদমতলী, সিদ্ধেশ্বরী, লক্ষ্মীবাজার, এলিফ্যান্ট রোড, সেগুনবাগিচা।
চট্টগ্রাম সিটিরেড জোন চিহ্নিত এলাকা:
চট্টগ্রাম সিটির ১০ এলাকাকে রেড জোনের মধ্যে রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো, চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড, পতেঙ্গার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড, পাহাড়তলির ১০ নম্বর ওয়ার্ড, কোতোয়ালির ১৬, ২০, ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড, খুলশীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড, হালিশহর এলাকার ২৬ নম্বর ওয়ার্ড।
রাজধানীর বাইরের তিন জেলার রেড জোন চিহ্নিত এলাকা:
ঢাকার বাইরের তিন জেলার মধ্যে গাজীপুরের সব কটি উপজেলাকে রেড জোনের আওতার মধ্যে আনা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, সদর এবং পুরো সিটি এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আর নরসিংদীর সদর মডেল থানা, মাধবদী ও পলাশ এলাকা।
শনিবারের সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল গ্রুপ তাদের এলাকায় রেড জোন চিহ্নিত করতে সহযোগিতা করবে। এ ছাড়া তারা স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তগুলো পর্যবেক্ষণ করবেন।
কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল গ্রুপের সদস্য ও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা গণমাধ্যমকে বলেন, কিছু কিছু এলাকা নির্দিষ্ট করা হচ্ছে। ঢাকার এলাকাগুলোতে আমরা সহযোগিতা করছি। কিন্তু নির্দেশনা হচ্ছে, সিভিল সার্জন মহোদয়েরা নিজেরাই ঘোষণা করবেন। আমরা তাদের সহযোগিতা করব। এটা স্থানীয়ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। স্থানীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
ঢাকা উত্তর সিটির পূর্ব রাজাবাজের গত ৯ জুন রাত ১২টা থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তিনটি ওয়ার্ড, মাধবদীর বিরামপুর এলাকা ও পলাশের চরসুন্দর এলাকা এখন লকডাউন আছে।