মো: আনিসুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিবেদক, কাপাসিয়া (গাজীপর) :
গাজীপুরে শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ঘেঁষে নির্মিত কাপাসিয়া-শ্রীপুর আঞ্চলিক সংযোগ সড়কের দস্যু নারায়ণপুরের ভাওয়াল নারায়ণপুর পোষ্ট অফিসের কাছে আবারো সড়ক ধসে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর নির্মিত এ সড়কটির পূর্ব-পশ্চিমে দৈর্ঘ্য ৩০০ ফুট, প্রস্থে ২০ ফুট রাস্তাসহ প্রায় ১২০ ফুট জমি সমতল থেকে প্রায় ১৫ ফুট নীচে দেবে গেছে। একই স্থানে গত ১৭ বছরে আরো দুইবার গাছপালাসহ সড়ক দেবে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল।
স্থানীয়রা জানায়, গেল রাত ১১টার দিকে সড়কে ফাটলি দেখা গিয়েছিল। আজ শুক্রবার ভোরে সড়ক দেবে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভুমি ধসের পর থেকে এ সড়কে শ্র্রীপুরের সাথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
খবর পেয়ে কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মো: আমানত হোসেন খান, সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো: সাখাওয়াত হোসেন প্রধান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর আঞ্চলিক সংযোগ সড়কটির দস্যু নারায়নপুর বাজারের পূর্ব পাশে ভাওয়াল নারায়ণপুর পোষ্ট অফিসের কাছে সড়কটি শীতলক্ষ্যা নদীর দিকে দৈর্ঘ্যে ৩শো ফুটের মত এবং প্রস্থে ১২০ ফুটের মত ১৫ ফুট দেবে গেছে। এ ঘটনা জানার পর আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ভীড় করেছেন।
স্থানীয়রা জানায়, গত মার্চ মাসে সড়কটির ধসে যাওয়া স্থানে দেড়শো ফিটের মত ধনুক আকারে চির দিয়ে ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি দেবে গিয়েছিল। যা ক্রমাগত বেড়েছে। এই সড়ক দিয়ে কাপাসিয়া থেকে শ্রীপুর ও শ্রীপুর থেকে কাপাসিয়া বড় ছোট হালকা ভারি যানবাহন চলাচল করে থাকে। তখন থেকেই যে সকল যানবাহন প্রতিদিন এই পথে আসা যাওয়া করে তারা এখানে এসে গতি কমিয়ে দিয়ে সাবধানে চলাচল করছিল।
এখানে সড়কের দুই পাশেই সওজ কর্তৃপক্ষের সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে, সেখানে লেখা সয়েল সেটেলমেন্ট পর্যবেক্ষণ চলিতেছে’। ফলে যান চলাচলে খুব বেশি সতর্ক থাকতে হচ্ছে চালকদের। প্রায় ২০ ফিট প্রস্থ সড়কটির ধনুক আকারে ফাটল দিয়ে দেবে গিয়ে খাড়া গতিরোধকে পরিণত হয়েছিল। যে কোন সময় আবারো সড়ক দেবে গিয়ে যে কোন দূর্ঘটনা ঘটতে পারে স্থানীয়দের আশঙ্কা ছিল।
২০১৮ সালে সড়কটি দেবে যাওয়ার পর গাজীপুর সড়ক বিভাগ পুনরায় সড়কটি নির্মাণ করে। নতুনভাবে নির্মিত হবার পর গত কয়েক মাস আগে থেকেই এই অংশে কিছুটা ফাটল দেখা দিয়েছিল। পড়ে নতুন করে পিচ দিয়ে তা জোড়া লাগানো হয়।
এই একই স্থানে প্রথম ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ও পড়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয়বার বড় ধরনের ধসের ঘটনা ঘটেছিল । এলাকার স্থানীয়দের ধারণা ছিল, সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে চলা শীতলক্ষ্যা নদী থেকে অবৈধ ও অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারনেই বারবার সড়ক দেবে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের সড়ক দেবে যাওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষজ্ঞ দল সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তখন তারা মত দিয়েছিলেন, দেবে যাওয়া অংশে মাটির নিচে নিম্নমানের পিট জাতীয় কয়লা (কালো মাটি) থাকতে পারে। শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে গেলে এসব কয়লা জাতীয় মাটি তার ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে নিচে নেমে যায় এবং সড়কে ধস নামে।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মো: আমানত হোসেন খান বলেন, আগের ভুমি ধসের ঘটনাগুলোও শীতকালেই ঘটেছে। এবারও সড়ক ধসে সড়কের পাশের মাটি গুলো নদীর দিকে সরে গিয়েছে। তাই ধারণা করা যায়, নদীতে পানির চাপ কমে গেলে মাটি নদীর দিকে সরে গিয়ে সড়কটি ধসে যায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে দ্রুত সড়কটি চলাচল উপযোগী করার ব্যবস্থা করা হবে।
এ ব্যাপারে গাজীপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন জানান, সড়ক দেবে যাওয়ার ঘটনাটি দু:খজনক। আমরাও হতাশ। খুব তাড়াতাড়ি ঘটনার কারণ জেনে সড়ক মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।