গণবাণী ডট কম:
গাজীপুর জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি আজ সোমবার সকালে গাজীপুর জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় নিজেই একথা জানিয়েছেন। এ সময় তিনি সকলের নিকট তাঁর সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা করেছেন।
সভা সূত্রে জানা যায়, সরকার ঘোষিত লকডাউনের প্রথম দিন জুম অ্যাপস এর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত গাজীপুর জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় লকডাউন বাস্তবায়ণ এবং সরকার নির্দেশিত ১৮ দফা বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় জেলা প্রশাসক সমাপনী বক্তব্য প্রদানকালে তার করোনা পজিটিভ হওয়ার বিষয়টি সকলকে অবহিত করেন এবং তিনি সকলের নিকট তার সুস্থতার জন্য দোয়া কামনা করেন।সভায় গাজীপুর সিভিল সার্জনসহ কমিটির সদস্য বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাগণ অংশ গ্রহণ করেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলামের ঠান্ডা কাশি ও জ্বর দেখা দিলে তিনি করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। রবিবার নমুনার ফলাফলে পজিটিভ পাওয়া যায়। জেলা প্রশাসক শারিরীকভাবে সুস্থ আছেন। তিনি তাঁর সরকারি বাংলোয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্বাবধানে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সকল সরকারি কাজ প্রযুক্তির সাহায্যে করছেন। তিনি সকলেল নিকট দোয়া কামনা করেছেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জেলা প্রশাসক করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণ করেছিলেন তিনি।
গেল বছর দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু কর সংক্রমণ রোধে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। তখন গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে গাজীপুর জেলায় সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন এবং করোনা প্রতিরোধে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। তখন তিনি মানুষকে খাদ্যসহ নানা সহায়তা প্রদানের লক্ষে হট লাইন চালু করেছিলেন। যার মাধ্যমে ফোনে মানুষ তাদের খাদ্যসহ নানা সমস্যার কথা জানিয়েছেন। এসব সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসন কাজ করেছে। সরকারি সহায়তার বাইরে প্রায় ৩০ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন।
শিল্পনগরী গাজীপুরে গেল বছর সরকারের সাধারণ ছুটিসহ স্বাস্থ্যবিধি পালন করে সব পক্ষের সাথে সমন্বয় সাধন করে গাজীপুরের শিল্প কারখানা চালু রাখার ব্যাপারে জেলা প্রশাসক অত্যন্ত সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সরকারের খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় দানশীল কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় জেলার প্রায় ৩০ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছেন। অনেক পরিবার যারা প্রকাশ্যে খাদ্য সহায়তা নিতে পারত না, সে রকম পরিবারকে রাতের আধারে বাড়িতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছিলেন।
এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ন্যায্যমূলে বিক্রির জন্য সরকারের ভ্রাম্যমাণ ট্রাক সেল এর বিক্রি যাতে সুষ্ঠভাবে চলে তাও কঠোরভাবে নজরদারি করেন। উপজেলা গুলোতে যাতে সরকারি নির্দেশনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়, সেগুলোও তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নজরদারিতে রাখেন।
জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জেলার সকল শ্রেণী-পেশার সাধারণ মানুষ যাতে তার সাক্ষাৎ পান, জেলা প্রশাসন থেকে যথাযথ সেবা পেতে পারে তার জন্য প্রতি বুধবার দিনটি উন্মুক্ত রেখেছেন। এদিন যে কেউ তার সাথে সাক্ষাত করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। এদিন জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সকল শ্রেণীর মানুষ তার কাছে আসেন। গরীব অসহায় মানুষদের ভিড় লেগে থাকে। তিনি ধৈর্য সহকারে তাদের কথা শুনেন এবং সমস্যা সমাধানের আন্তরিক প্রচেষ্টা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বুধবার ছাড়াও প্রায় প্রতি কার্যদিবসে তাঁর কার্যালয়ে সাধারণ মানুষ সেবা গ্রহণের জন্য আসেন।
আচার আচরণে ও পেশাগতভাবে অত্যন্ত দয়ালু ও মানবিকতাপূর্ণ আচরণের কারণে জেলায় তার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রতিদিনই গরীব অসহায় মানুষদের ভিড় লেগে থাকে। তিনি সকলের কথা ধৈর্য সহকারে শুনে সমস্যা সমাধানের আন্তরিক প্রচেষ্টা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আজও অনেকে তার সাথে সাক্ষাতের জন্য এসেছেন। এসে তারা জেলা প্রশাসকের অসুস্থ হওয়ার খবর শুনে আফসোস করেছেন।
গাজীপুর জেলা প্রশাসন অন্যান্য সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীগণ, সাধারণ মানুষ, যারা জেলা প্রশাসকের সাথে কাজ করেছেন, কথা বলেছেন, সেবা নিয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছেন। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্টরা মহান আল্লাহর নিকট জেলা প্রশাসকের আশু রোগমুক্তির জন্য দোয়া করেছেন।