গণবাণী ডট কম:
করোনা ভাইরাস ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। কারণ চীনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। প্রতিদিন অনেক মানুষ বাংলাদেশ থেকে চীনে যাওয়া-আসা করছে। এছাড়া অন্যান্য যেসব দেশে রোগটি সংক্রমিত হয়েছে, সে দেশগুলোর সঙ্গেও বাংলাদেশের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। তাই এখন পর্যন্ত কোনো রোগী পাওয়া না গেলেও বাংলাদেশকে ঝুঁকিমুক্ত বলা যাচ্ছে না।
এদিকে চীনসহ ১৩টি দেশে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। আক্রান্ত হয়েছেন ১৩শ’ মানুষ। এ পর্যন্ত ৫৬ জন মারা গেছেন। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস ঝুঁকি মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও মহাখালী সংক্রমক ব্যাধি হাসপাতাল। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করা হবে। যাতে যেখানে রোগী শনাক্ত হবে, সেখানেই চিকিৎসা দেওয়া যায়।
এছাড়া সকল বিমানবন্দর ও স্থল বন্দরগুলোতে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চীনসহ বিদেশ থেকে যারা আসছেন তাদের মধ্যে সর্দি-কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট উপসর্গ থাকলে অবশ্যই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। এ সকল উপসর্গই হচ্ছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের। এমন উপসর্গ দেখা দিলে তাদেরকে করোনা ভাইরাস আছে কিনা পরীক্ষা করে নিশ্চিত করতে হবে। পরবর্তীতে তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বয়ে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরগুলোতে ইমিগ্রেশন ও আইএইচআর স্বাস্থ্য ডেস্ক গুলোতে সতর্কতা ও রোগের সার্ভেইল্যান্স জোরদার করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন প্রবেশপথে নতুন করোনা ভাইরাস স্ক্রিনিং কার্যক্রম চালু হয়েছে। নতুন ভাইরাস সম্পর্কে ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, করোনা ভাইরাস ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি বলেন, চিকিত্সার চেয়ে ব্যবস্থাপনা জরুরি। এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আইসিইউতে কর্মরত সকল ডাক্তার-নার্সদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ব্যবস্থপনা সম্পর্কে প্রশিক্ষণের আওতায় রাখা হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতাল পর্যন্ত ডাক্তার-নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য চিকিৎসক প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, করোনা ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে প্রথমে তার জ্বর, সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা এবং তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এ ধরনের উপসর্গ থাকলে ওই রোগীকে হাসপাতালে চিকিত্সা নেওয়া জরুরি বলে তিনি জানান। এদিকে করোনা ভাইরাস এখন ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপেও। ফ্রান্সে তিন জন আক্রান্ত হয়েছেন। ফরাসি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার রাতে জানিয়েছে, আক্রান্তদের মধ্যে প্রথম জন বোরডক্সের এবং বাকি দুজন প্যারিসের বাসিন্দা। চীনের মিডিয়াগুলো বলছে, নতুন এক হাজার শয্যার হাসপাতালটি ছয় দিনের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে যাবে। এটি নির্মাণে ৩৫টি খনন যন্ত্র এবং ১০টি বুলডোজার কাজ করছে। এই প্রকল্পটি চিকিৎসা ব্যবস্থার যে সংকট তৈরি হয়েছে সেটির সমাধান করবে এবং দ্রুত নির্মাণে খরচও তেমন হবে না কারণ এটি আগেই তৈরি করা ভবনে নির্মাণ করা হচ্ছে। এদিকে উহানের ফার্মেসিগুলো ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদির সংকটে পড়েছে এবং হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ভীত মানুষের সংখ্যা। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, রাজধানী বেইজিং এবং সাংহাইয়ে নির্দেশনা রয়েছে যে, যেসব বাসিন্দা ভাইরাস আক্রান্ত স্থান থেকে ভ্রমণ করে এসেছে তাদেরকে ১৪ দিন বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যাতে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো যায়।
করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে যা করতে হবে, তা হলো :
• ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার করুন।
• গণপরিবহন এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
• প্রচুর ফলের রস এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
• ঘরে ফিরে হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন।
• কিছু খাওয়া কিংবা রান্না করার আগে ভালো করে ধুয়ে নিন।
• ডিম কিংবা মাংস রান্নার সময় ভালো করে সেদ্ধ করুন।
• ময়লা কাপড় দ্রুত ধুয়ে ফেলুন।
• নিয়মিত থাকার ঘর ও কাজের জায়গা পরিস্কার রাখুন।
• অপ্রয়োজনে ঘরের দরজা জানালা খোলা রাখবেন না।
সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক ও অন্যান্য ।