গণবাণী ডট কম:
বাংলাদেশে যে তিনজন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে দু’জনের শারীরিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, “যে তিনজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত ছিল, তাদের দু’জনকে গতকাল (মঙ্গলবার) পরীক্ষা করে আমরা নেগেটিভ পেয়েছি।” বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী ঐ দু’জনকে ছাড়পত্র দেয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বুধবার সকালে মহাখালীর আইইডিসিআর সেন্টার থেকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বিষয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
তিনি বলেন, “পরপর দু’দিন পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসলে বা কারো শরীরে কোভিড-১৯’ এর উপস্থিতি না পেলে আমরা তাকে সুস্থ ঘোষণা করতে পারি এবং হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিতে পারি।” আক্রান্ত ব্যক্তিদের আজ আরেক দফা পরীক্ষা করে তাদের হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হবে কিনা সেবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা।
গত রবিবার আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৩জন রোগী শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশে, যাদের মধ্যে দু’জন সম্প্রতি ইতালি থেকে এসেছেন। আক্রান্তদের বয়স বিশ থেকে পয়ত্রিশ বছরের মধ্যে বলে জানানো হয়েছিল।
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জরুরী সেবা নিতে অথবা যে কোন তথ্য জানাতে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের ১২টি ফোন নম্বরের পরিবর্তে চালু করা হয়েছে একটি হটলাইন নম্বর। হটলাইন নম্বরটি হলো ০১৯৪৪৩৩৩২২২।
আইইডিসিআরের পরিচালক আরো জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআরে মোট ৩ হাজার ২২৫টি টেলিফোন কল আসে, যার ৩ হাজার ১৪৫টি করোনা সংক্রান্ত। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১০ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়, যাদের কেউই এই ভাইরাসে সংক্রমিত নয়। মোট নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ২৪ জনের। এই নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ১৪২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিভিন্ন হাসপাতালে বিদেশ ফেরত আটজনকে আইসোলেশেন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে কোয়ারেন্টিন করার খুঁটিনাটি বিষয়েও আলোচনা করেন আইইডিসিআরের পরিচালক। তিনি বলেন, “কোয়ারেন্টিন হিসেবে আমরা মূলত ১৪ দিন বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেই। যেসব দেশে বড় আকারে আউটব্রেক রয়েছে, সেসব দেশ থেকে যারা আসবেন তাদেরকে অন্তত ১৪দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা বলছি।”
তবে যারা অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনীয় কাজে বিদেশ থেকে এসেছেন তাদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র কাজ ছাড়া অন্যান্য সময় স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিন করার অনুরোধ করেন তিনি।
“স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টিন বা সেল্ফ কোয়ারেন্টিন বলতে বুঝাচ্ছি, যে কাজের সময়টা বাদে অন্যান্য সময় যেন তারা জনসমাগম এড়িয়ে চলেন এবং ভাইরাস যেন না ছড়ায় সেই সতর্কতা অবলম্বন করেন। কাজের সময়টুকুতেও তারা যেন বিশেষভাবে সতর্ক থাকেন, সেই অনুরোধ করবো আমরা।”
এ সময় তিনি বিদেশ থেকে দেশে ফেরত আসা লোকজনকে অন্তত ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়াও স্বল্প সময়ের জন্য যারা দেশে আসছেন, তাদের সেলফ কোয়ারেন্টাইনে বা ঘরের ভেতর থাকার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি হোটেল কর্তৃপক্ষকে মাস্ক ব্যবহার করা এবং এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
এছাড়াও দেশের সাধারণ মানুষদের বার বার সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ভালোভাবে ধোয়া, অপরিষ্কার হাত নাক বা মুখে না লাগানো, হাত মেলানো ও কোলাকোলি থেকে বিরত থাকা, অত্যাবশ্যকীয় না হলে বিদেশ যাওয়া থেকে বিরত থাকা, জনসমাগম এড়িয়ে ইত্যাদি মেনে চলার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।