গণবাণী ডট কম:
প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষে বিএনপি’র চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে বুধবার বিকাল ৩টার কিছু পরে তার কেবিন থেকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে বের করে আনা হয়। সেখান থেকে তাকে সরাসরি গুলশানের বাস ভবন ফিরোজায় নিয়ে যাওয়া হবে।
নিষেধ অমান্য করে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী হাসপাতাল চত্বরে উপস্থিত হওয়ায় খালেদা জিয়াকে নিয়ে গাড়ী বের হতে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়। এসময় খালেদা জিয়ার পরিবারের কয়েক সদস্য, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ঢাকার বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়া এবং বিদেশে না যাওয়ার শর্তে খালেদা জিয়াকে ৬ মাসের জন্য মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এজন্য জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্ণীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা ৬ মাসের জন্য স্থগিত করা হয়।
২০১৮ সালে দন্ডিত হবার পর থেকে গত দুই বছর এক মাসের বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দি ছিলেন খালেদা জিয়া। শারিরীক অসুস্থতার জন্য গত ১১ মাস ধরে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এর আগে দুপুরে বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো পর মুক্তির ফাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ওই নথি মন্ত্রণালয়ে পৌছেছে। এই নথির ভিত্তিতে একটি প্রজ্ঞাপন তৈরি করে কারা কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরবর্তী কাজ আইজি প্রিজন সম্পন্ন করবেন। এখন যে কোন সময় খালেদা জিয়া ছাড়া পাবেন।
গত মঙ্গলবার করোনা নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশবাসীকে চমকে দিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার গুলশানের বাসায় সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান, দুইটি শর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে। এগুলো হলো - এই সময়ে তাঁর ঢাকায় নিজের বাসায় থাকতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।
তিনি আরো বলেন, ”মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হচ্ছে, আইনি প্রক্রিয়ায় দুই শর্ত সাপেক্ষে তার দণ্ডাদেশ স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য।”
আইনমন্ত্রী বলেন, ”বেগম খালেদা জিয়ার বয়স বিবেচনায়, মানবিক কারণে, সরকার সদয় হয়ে দণ্ডাদেশ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
আইনমন্ত্রী বলেন, ”ঢাকাস্থ নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করার শর্তে এবং এই সময় বিদেশে গমন না করার শর্তে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য আমি মতামত দিয়েছি। সেই মতামত এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে গেছে।” যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাকে মুক্তি দেয়া হবে, তখন থেকে এই ছয় মাস গণনা শুরু হবে।
বিএনপির প্রতিক্রিয়া :
এই ঘোষণার পর একটি প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ”আশা করি ঠিক সময় মতো তিনি কারাগার থেকে বের হতে পারবেন। মুক্তির পর হাসপাতাল থেকে তাকে বাসভবনে নিয়ে আসা হবে। আমরা চিকিৎসকদের একটি প্যানেল তৈরি করেছি। তারাই খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দেবেন।”
তিনি বলেন, ”সরকাররে এই সিদ্ধান্তে দল ও নেতাকর্মীরা যেমন স্বস্তি বোধ করছেন, আবেগ কাজ করছে, পাশাপাশি তাদের মধ্যে একটি আতঙ্কও কাজ করছে এটা ভেবে যে এমন একটা সময়ে তাকে মুক্তির এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, যখন করোনাভাইরাস নিয়ে একটি দুর্যোগ চলছে।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দেশে-বিদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, ”আপনারা হয়তো আবেগের বশবর্তী হয়ে তার কাছে যেতে চাইতে পারেন। কিন্তু এই অবস্থার প্রেক্ষিতে আবেগের বশবর্তী না হয়ে, ম্যাডামের স্বাস্থ্যের জন্য, সবার নিরাপত্তার জন্য সবাইকে দূরে থাকতে আহবান করবো। “আলাদা থাকার বিষয়টিকে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।”
কিছুদিন আগে বিদেশে চিকিৎসার জন্য মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছিল খালেদা জিয়ার পরিবার।
খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে সরকারের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, মুক্তির পর খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রকাশ, ২০০৮ সালে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ মামলা দায়ের হয়। তার ১০ বছর পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মামলার রায়ে তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। তবে, পরে হাইকোর্ট সেই সাজা বাড়িয়ে দশ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। আরেকটি মামলায় তাঁর সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।