গণবাণী ডট কম:
প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস বা কোভিড ১৯ বিষয়ে গাজীপুরের প্রকৃত অবস্থা এবং এর কারণসহ সার্বিক পরিস্থিতি ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছেন গাজীপুরের জেলা পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার (পিপিএম)।
দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন বিভাগ ও জেলার সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে ধারাবাহিক ভিডিও কনফারেন্সের অংশ নিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজীপুরসহ ঢাকা বিভাগের চার জেলা ও ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে মতবিনিময় করেন। গাজীপুর জেলার সরকারি কর্মকর্তারাও যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় এতে অংশগ্রহণ করে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পুলিশ সুপার তার বক্তৃতায় জেলায় লকডাউনের বাস্তব চিত্রগুলো তুলে ধরেন।
এসময় তিনি গাজীপুরের চলমান করোনা সংকট, সংকটের মধ্যেও তৈরী পোশাক শিল্প মালিকদের কারো কারো লুন্ঠনের প্রবণতা, শ্রমিকদের স্বার্থ, স্বাস্হ্য ঝুঁকির আশংকার খুঁটিনাটি দিকগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে, সাহসের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে, প্রধানমন্ত্রীর সামনে বক্তব্য রাখার সুযোগ পেয়ে অধিকাংশ দায়িত্বশীলকে যখন আমরা চাটুকারিতায়, নির্লজ্জ হয়ে ওঠার প্রবণতায় দৌড়াতে দেখি, সেখানেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত সর্তক ও যৌক্তিক এবং সংযত। গাজীপুরের গণমানুষের মনের কথা, তাদের প্রাণের উপলব্ধিটাই তিনি প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরতে পেরেছেন। এই বোধ ও মর্যাদা, মানবিক ও সাহসী বক্তব্য শুধু গাজীপুবাসী নয়, দেশের অনেকস্থানের মানুষে আশান্বিত করেছে।
পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেন, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর অংশ হিসেবে জেলাটিতে লকডাউন কার্যকর করতে গিয়ে মাঠ পর্যায়ে নানা ধরণের সমস্যার মুখে পড়ছেন তারা। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানাগুলো খোলা থাকার বিষয়টি।
তিনি বলেন, প্রথম দিকে জেলাটি অনেক ভাল ছিল। হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার কারণে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারেনি। কিন্তু পরেরবার যখন গার্মেন্টস কারখানাগুলো খুলে গেলো আর শ্রমিকরা বেতনের আশায় ফিরতে শুরু করলো তখন থেকে অবস্থা পাল্টে যেতে শুরু করলো।
তিনি বলেন, কালীগঞ্জ ও কাপাসিয়ার দিকে ছোঁয়া এগ্রো ফার্ম নামে একটি কারখানায় প্রথম একজনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়। এর পর ওই কারখানার আরো শ্রমিকদের নমুনা পরীক্ষা করে আরো ২৫ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এই কারখানাটির ব্যবসা মূলত নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামভিত্তিক। সেখান থেকে শুরু হওয়ার পর সংক্রমণ পরে পুরো জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া সেই সাথে নারায়ণগঞ্জের সাথেও জেলার যোগাযোগ চালু ছিল। তবে, এখনো অন্য কারখানাগুলো তেমন সংক্রমিত হয়নি। আরেকটি কারখানায় একজনের মধ্যে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। সে এখন সেই কারখানাতেই অবস্থান করছেন। এই অবস্থার মধ্যে যদি আবারো কারখানাগুলো খুলে যায়, আবার যদি শ্রমিক আসা-যাওয়া করে তাহলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের সুযোগে অনেক ব্যবসায়ী সুযোগ নিচ্ছে। তারা পিপিই বানানোর নাম করে শ্রমিকদের ডেকে এনে অন্য ধরণের পণ্য সামগ্রী বানাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে কারখানাগুলো যেভাবে খোলা রয়েছে তাতে লকডাউন নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জরুরী। এখনো অনেক কারখানা মালিক আছেন যারা বেতন দেবেন বলে শ্রমিকদেরকে ডেকে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু তারা বেতন দিতে পারছেন না। এটি লকডাউন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গাজীপুরে অনেক বড় অন্তরায়।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘গাজীপুরে যারা ফ্যাক্টরিতে কাজ করছেন, তাদের নিরাপদ রাখতে সুনির্দিষ্টভাবে আপনার দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। এসব ফ্যাক্টরির মালিকরা শ্রমিকদের ঠকাচ্ছেন। কত প্রয়োজন হয় তাদের? বঙ্গবন্ধু যেমনটা বলেছিলেন, আমার কৃষক, আমার শ্রমিক তো চোর নয়। তারা তো কিছু চায় না। একমুঠো ভাতই তাদের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু যাদের আছে, যারা শিক্ষিত… তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক কিন্তু এখনো সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোযোগ দিয়ে এসপির কথাগুলো শোনেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তাকে আশস্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব। আমি গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে বসব।’
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক চিঠি দিয়ে ২৫ এপ্রিলের পর কিছু কারখানা খোলার কথা জানিয়েছেন এবং শ্রমিক পরিবহনের জন্য বাস চেয়েছেন। ’
কনফারেন্সে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পর গাজীপুর ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নতুন করে শ্রমিক আনা ঠিক হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শ্রমিকদের থাকা ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে সীমিত পরিসরে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে নির্দেশনা দেন।
এ ভিডিও কনফারেন্স যেদিন অনুষ্ঠিত হয়, গত সোমবার দিন গাজীপুরে নতুন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৯৭ জন। আর জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাড়ালো ২৬৯ জনে। সোমবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, গাজীপুরে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। সেখানে আক্রান্তের হার প্রায় ২০ শতাংশের কাছাকাছি। আজকের তথ্য মতে গাজীপুরে আক্রান্তের হার ১৯.৫ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, নারায়ণগঞ্জের পর করোনাভাইরাস সংক্রমণের অন্যতম হটস্পট হয়ে উঠেছে গাজীপুর।
এ অবস্থায় পুলিশ সুপারের সময়োপযোগী বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমাদৃত ও প্রশংসিত হচ্ছে। লাখ লাখ দর্শক ভিডিও কনফারেন্সের ধারণ করা ভিডিও দেখেছেন। হাজার হাজার মানুষ প্রশংসাসুচ মন্তব্য করেছেন। কয়েকটা এমন;
M.A. Mannan বলেছেন, ধন্যবাদ মাননীয় পুলিশ সুপার মহোদয়কে সঠিক তথ্য নির্ভর কথা বলার জন্য। বিশেষ করে কাপাসিয়া নিয়ে কথা বলার যখন কেউ ছিলোনা তখন তিনি ই পুরো জেলার সঠিক তথ্য উপস্থাপন করেছেন পাশাপাশি মাননীয় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী ও ত্রান সহায়তার বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন।
Emdadul Haque বলেছেন, অসংখ্য ধন্যবাদ এসপি মহোদয় কে গাজীপুরের সঠিক চিত্রটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করার জন্য।