গণবাণী ডট কম:
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নেয়ার জন্য বুধবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ৮০ হাজার মানুষ নিবন্ধন করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বাংলাদেশে প্রথম ধাপে সারা দেশে ৬০ লাখ ডোজ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে এ মাসের সাত তারিখ থেকে দেশব্যাপী টিকার মূল কর্মসূচি শুরু হবে এবং ইতোমধ্যেই সব জেলায় টিকার ডোজ পৌঁছে গেছে।
যারা টিকা নিয়েছেন তাদের অবস্থা কী :
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তিনি করোনাভাইরাস প্রতিরোধিী টিকা নেবেন কিনা, ‘’হ্যাঁ’’ জবাব দিতে তিনি একদমই সময় নেননি। তবে তখনও তিনি জানতেন না যে তিনিই হবেন বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা নেয়া প্রথম ব্যক্তি।
বিবিসি বাংলাকে তিনি জানিয়েছেন টিকা নিয়ে ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণে থাকার পরপরই সোজা কাজে ফিরে গেছেন তিনি। রুনু ভেরোনিকা কস্তা বলছিলেন, “যে রোগের চিকিৎসায় এত ঝুঁকি নিয়েছি তার টিকা নেবো না এরকম কীভাবে হয়? আমাকে টিকা দেয়ার পর রাতে একবার ঘুমের মধ্যে বাম দিকে কাত হওয়ার পর হাতে একটু ব্যথা পেলাম তারপর মনে পড়লো আমিতো টিকা নিয়েছি। এর বাইরে টিকা নিয়ে আমার আর কোন অনুভূতি হয়নি। যেমন ছিলাম তেমনই হাসপাতালে কাজ করছি, বিয়ের দাওয়াত খাচ্ছি।”
এই সেবিকা সহ প্রথম দিন ২৬ জনকে টিকা দেয়া হয়। এরপর ঢাকার চারটি হাসপাতালে প্রায় ছয়শ ব্যক্তিকে টিকা দিয়ে সাতদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। টিকা দেয়া হয়েছে ২৭ ও ২৮শে জানুয়ারি দুই দিন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা জানিয়েছেন কুড়ি জনের মতো হালকা সমস্যার কথা জানিয়েছেন। “একজন ধরেন বলেছে মাথা ঘুরাচ্ছে, কারো জ্বর হয়ে আবার নেমেও গেছে, একজন বলেছে তার বমি হয়েছে। খুব বেশি সমস্যা কারো হয়নি। সব টিকাতেই কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে।”
দেশব্যাপী কর্মসূচির জন্য প্রস্তুতি কতটা :
নাসিমা সুলতানা জানিয়েছেন এ মাসের সাত তারিখ থেকে দেশব্যাপী টিকার মূল কর্মসূচি শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যেই টিকার ৬০ লাখ ডোজ দিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
বাংলাদেশে শিশুদের বিনামূল্যে টিকা দেবার কর্মসূচিতে নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা দেওয়ার কাজ করবেন। সারা দেশে তাদের নিয়ে সাত হাজারের বেশি কর্মীর দল গঠন করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, প্রতিটি দলে স্বেচ্ছাসেবক সহ ৬ জন করে সদস্য রয়েছেন। প্রতিটি উপজেলায় তারা নিয়োজিত থাকবেন।
“জনসংখ্যার হিসেব করে কোথায় কত টিকা দেয়া হবে তার একটা ম্যাপিং করা হয়েছে। কোথায় কত টিম কাজ করবে সেটাও জনসংখ্যার ভিত্তিতে করা হবে। ইতিমধ্যেই সব জেলায় ৬০ লাখ টিকার ডোজ ডিস্ট্রিবিউট করা হয়েছে,” জানাচ্ছেন নাসিমা সুলতানা।
নিবন্ধনের জন্য যে অ্যাপটি আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) চালু হওয়ার কথা ছিল সেটি হতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানিয়ে নাসিমা সুলতানা বলেছেন এর কারণ গুগল প্লেতে তা অন্তর্ভুক্ত করার অনুমতি এখনো মেলেনি।
কীভাবে টিকার ডোজ সংরক্ষণ করা হচ্ছে :
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে সবচেয়ে বেশি টিকার ডোজ দেয়া হবে ঢাকা জেলায়। যার সংখ্যা সাড়ে ছয় লাখের মতো আর চট্টগ্রামে সাড়ে চার লাখ।
প্রত্যন্ত এলাকায় তা কীভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে এ প্রশ্নের উত্তরে খুলনা জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ নিয়াজ মোহাম্মদ বলছেন, বাংলাদেশ টিকা কর্মসূচিতে খুবই সফল।
“শুধু আমার জেলায় না, দেশের প্রতিটি উপজেলায় দুটি করে আইএলআর রয়েছে। এই আইস লাইন্ড রেফ্রিজারেটরে দুই থেকে আট ডিগ্রি তাপমাত্রায় আমরা টিকা সংরক্ষণ করি।
“বাংলাদেশে শিশুদের যত টিকা দেয়া হয় সব আমরা আইএলআর-এ রাখি। সংরক্ষণ নিয়ে কোন সমস্যা নেই। যেমন আমার আইএলআর আছে ১৬টি। কোভিড ভ্যাক্সিন রাখার জন্য দরকার হয়েছে চারটি,” জানান ডাঃ নিয়াজ মোহাম্মদ।
টিকায় আগ্রহী করতে প্রচারণা :
সরকারিভাবে নানা জেলায় লোকজনকে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করতে প্রচারণা শুরু হয়েছে। তবে সব জেলায় এখনো শুরু হয়নি বলে স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে। ডাঃ নিয়াজ মোহাম্মদ অবশ্য বলেছেন, “আমার যত কর্মী যে যেখানে আছে তাদের সবাইকে কাজে লাগানো হয়েছে। ব্যাপক মাইকিং ছাড়াও তারা ব্যক্তিগতভাবেও সবার সাথে কথা বলছে।”
তবে টিকা নেবার ব্যাপারে আগ্রহ যেমন কম, তেমনি ওয়েবসাইটে নিবন্ধনে জটিলতার অভিযোগ করছেন অনেকে।
নাসিমা সুলতানা জানিয়েছেন, তাদের কাছেও এই অভিযোগ এসেছে। নিবন্ধন সহজ করার জন্য তারা কাজ করছেন। কিন্তু তবুও আগ্রহী নন অনেকে বলে তিনি বলছেন।
ঢাকার একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আরেকজন সেবিকা বলছেন তিনি টিকা নেবেন কিনা সে নিয়ে তার মধ্যে দ্বিধা রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “কারণ আসলে ওই যে যেটা সবাই জানে সেটাই। ভ্যাক্সিন নিয়ে অনেকের প্রবলেম হচ্ছে। অনেকে বলতেছে এখনো পর্যন্ত ওইভাবে ভ্যাক্সিন কার্যকরী কিনা সেটা এখনো প্রমাণিত হয়নি। এজন্যই আরকি নিতে চাচ্ছি না।” খবর : বিবিসি।