গণবাণী ডট কম:
সাধারণত পুলিশি মামলার ক্ষেত্রে গ্রেফতার হওয়ার আগেই আগাম জামিনের আবেদন করা যায়। কিন্তু একবার গ্রেফতার হলে আগাম জামিন পাওয়ার সুযোগ থাকে না। ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে একজন নাগরিক যতক্ষণ পর্যন্ত দোষী প্রমাণিত না হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী বলার সুযোগ নেই।
সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ের ৩১, ৩২ ও ৩৩ অনুচ্ছেদের বিধান অনেকখানি ১৮৯৮ সালের প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারাটিতে প্রতিফলিত হয়েছে। এই ধারায় আদালতের বিবেচনা সাপেক্ষে হাইকোর্ট ও দায়রা আদালতকে আগাম জামিন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে অবাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যেকোনো নাগরিকই এই ক্ষেত্রে গ্রেফতারের ঝামেলা এড়াতে আদালতের কাছে আত্মসমর্পণপূর্বক আগাম জামিনের প্রার্থনা করতে পারবেন। যদিও ফৌজদারি কার্যবিধির কোনো জায়গায় জামিন কিংবা আগাম জামিনের সুস্পষ্ট কোনো সংজ্ঞায়ন করা হয়নি।
বাংলাদেশে ১৮৯৮ সালের প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধিতে পঞ্চম অধ্যায় ও দ্বিতীয় তফসিল বিবেচনায় দুই ধরণের জামিনের বিষয়ে বলা হয়েছে। সাধারণ জামিন ও আগাম জামিন। সাধারণ জামিনে নির্ধারিত বিধি অনুযায়ী কোনো নাগরিক আটক হওয়ার পর আদালতে সময়মত হাজির করার শর্তে আইনগত হেফাজত থেকে জামিনদারের নিকট সাময়িক সময়ের জন্য সমর্পণ করা বুঝায়।
আর আগাম জামিন হলো কোনো ব্যক্তি গ্রেফতার হওয়ার পূর্বেই সম্ভাবনা বা অনুমানপূর্বক যদি বুঝতে পারে যে সামাজিকভাবে হেয় বা বিদ্বেষপূর্ণভাবে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তদন্ত চলছে তখন ভবিষ্যৎ গ্রেফতার ঝামেলা বা হয়রানি থেকে নিজেকে বাঁচাতে স্বশরীরে দায়রা আদালতে বা হাইকোর্ট বিভাগে ৪৯৮ ধারার আলোকে স্বেচ্ছায় ও স্বপ্রণোদিত হয়ে আত্মসমর্পণ করাই হলো আগাম জামিন। বিশেষ পরিস্থিতির কারণে আদালত আগাম জামিন মঞ্জুর হয়। তাই আমলযোগ্য অপরাধ ছাড়া অন্যকোনো ক্ষেত্রে আসামিকে গ্রেফতার করা রীতিসিদ্ধ নয়।
৪৯৮ ধারার শব্দাবলীতে ‘আপিল থাকুক বা না থাকুক যেকোনো ক্ষেত্রে’এমন শব্দ ব্যবহার করে হাইকোর্ট বিভাগ ও দায়রা আদালতকে চরম ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। যদিও দায়রা আদালতে এমন ক্ষমতা প্রয়োগের নজির দেখা যায় না। অত্র কার্যবিধি ৪৯৬ অনুযায়ী একজন আসামি অধিকার বলে জামিন প্রার্থনা করতে পারেন এবং জামিন দেওয়া আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক। সেই কারণে হাইকোর্ট বা দায়রা আদালত ৪৯৮ ধারায় বিচার বিবেচনার সঙ্গে জামিন মঞ্জুরের এই অবাধ ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকেন।
তবে ১৯ ডি এল আর (এসসি) ৩৮ এ বলা হয়েছে-‘অনুমানের উপর জামিন দেওয়ার ক্ষমতা হাইকোর্ট অথবা দায়রা জজের ক্ষমতাভুক্ত এবং এই ক্ষমতা অন্যান্য আদালতের নেই। একই সঙ্গে ৬২ ডি এল আর (এডি) ৪২০ এ বলা হয়েছে, ‘যখন কোনো পলাতক আসামি হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে সেক্ষেত্রে হয়রানিমূলক গ্রেফতারের দরকার নেই।’ সুতরাং গ্রেফতার ঝামেলা এড়াতে আগাম জামিন ঢাল হিসেবে কাজ করে থাকে।