গণবাণী ডট কম:
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে তার পরিবারকে অনুমতি দেয়নি সরকার।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার আবেদন মঞ্জুর করতে পারছি না। কারণ সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ আইনে নেই। তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয় থেকে এই মতামত দেওয়া হয়েছে এবং একারণে তাদের আবেদন মঞ্জুর করা সম্ভব হচ্ছে না।
খালেদা জিয়া গত ১০ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হন। গত ২৭ এপ্রিল তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত সোমবার শ্বাসকষ্ট অনুভব করায় খালেদা জিয়াকে কেবিন থেকে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। তারপরেই খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে সরকারের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন। উক্ত আবেদনের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের কপি রবিবার সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়।
গত শনিবার খালেদা জিয়ার তৃতীয় দফার পরীক্ষায় তার করোনাভাইরাস নেগেটিভ ফলাফল আসে বলে ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদন নাকচ করার পর এবিষয়ে কি মানবিক দিকের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে না-সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, “মানবিক বিষয় দেখবো বলেই তো আমরা পাঠিয়েছি যে আইনের কোন জায়গায় তাকে (এই সুযোগ) দেওয়া যায় কিনা এবং আইনের মধ্যে যে সুযোগ নাই সেটা আইন মন্ত্রণালয় থেকে জানিয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “মানবিকতার কথা বিবেচনা করেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে সাজা স্থগিত রেখে বাসায় চিকিৎসা সেবা গ্রহণের সুযোগ দিয়েছিলেন,”।
বিএনপির প্রতিক্রিয়া :
সরকারের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, “এই সিদ্ধান্তে নিঃসন্দেহে আমরা হতাশ এবং ক্ষুব্ধ। এবং এটা অত্যন্ত সত্য যে একটা মিথ্যা মামলা সাজিয়ে খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্যটাই ছিল তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া।”
তিনি আরো বলেন, এটা ওয়ান ইলেভেন থেকেই শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দলের বহু নেতাকর্মীর নামে মামলা দেয়া হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
“করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে যে চিকিৎসা তিনি এখানে নিচ্ছেন ,ডাক্তাররাই বলেছেন এই চিকিৎসা যথেষ্ট না। কারণ করোনা পরবর্তী যেসব জটিলতা এখন তার দেখা দিচ্ছে, এটা তার বয়স এবং তার যে রোগগুলো আছে সব মিলিয়ে যথেষ্ট ঝুঁকির সম্মুখীন আছেন তিনি। এবং তার জীবনও ঝুঁকির সম্মুখীন।”
তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্য সরকার আজ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
এখন দলের পক্ষ থেকে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে আবেদন করিনি। তার পরিবার করেছে। এখনেও তার পরিবারই সিদ্ধান্ত নেবে।”
২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
দেশজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর ২০২০ সালের ২৫শে মার্চ ছয় মাসের জন্য নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়েছিলেন বেগম জিয়া। তখন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার যে নির্বাহী আদেশ দিয়েছিলো সরকার শর্ত দিয়েছিল, মুক্তি পেয়ে বগম জিয়াকে বাসাতেই থাকতে হবে এবং এ সময় তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।
এরপর প্রথমে সেপ্টেম্বরে ও পরে চলতি বছরের মার্চে আবারো ছয় মাসের জন্য তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।