গাজীপুর প্রতিনিধি:
সহকর্মীকে হত্যার পর নাম ঠিকানা ও পেশা বদলে পরিচয় গোপন করে শ্বশুর বাড়ীতে ২৭ বছর লুকিয়ে ছিল আব্দুল আজিজ। এই সময়ের মধ্যে হত্যা মামলায় পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালতে মামলার স্বাক্ষ্য প্রমাণ বিচার বিশ্লেষণ হয়, শুনানী শেষে মামলার রায় ঘোষণা করে। মামলার রায়ে আব্দুল আজিজসহ ১৩ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৮ জন আসামী বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে এবং ১ জন আসামী জেল হাজতে মৃত্যুবরণ করেছে। আব্দুল আজিজসহ অপর ৪ জন আসামী যথাক্রমে ফালান, আলম এবং মানিক পলাতক ফাঁসির দন্ড মাথায় নিয়ে ২৭ বছর পলাতক ছিল। আব্দুল আজিজ স্ত্রী সন্তান নিয়ে শ্বশুর বাড়ীতে সুখেই ছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। র্যা বের একটি অভিযানিক দল আব্দুল আজিজকে নরসিংদী জেলার শিবপুরের শ্বশুর বাড়ী থেকে মঙ্গলবার দিবসের শুরুতে রাত আড়াইটার দিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
গ্রেফতার আব্দুল আজিজ (৫৫)গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানাধীন বাহাদুরসাদী গ্রামের মৃত আলফাজ উদ্দিন মোল্লার ছেলে। পরিচিতদের থেকে নিজেকে আড়াল করতে হত্যাকান্ডের পর (১৯৯৫ সালে) থেকে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে তিনি জাতীয় পরিচয় পত্রে (এনআইডি) নিজের নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করেন। আব্দুল আজিজ থেকে আব্দুল আজিজ মোল্লা নাম ধারণ করে স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করে নরসিংদী জেলার শিবপুর থানাধীন মৈশাদী গ্রামের ঠিকানায় এনআইডি তৈরি করে সেখানে শ্বশু বাড়ীতে বসবাস করে আসছিল। সেখানে তিনি পেশা পরিবর্তন করে কাঁচা তরকারির ব্যবসা করতেন।
নিহতের নাম মৃত বিল্লাল হোসেন @ বিলু (৩৫)। তিনি গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার মৃত সৈয়দ আলী @ কিতাব আলীর চেলে। নিহত বিল্লাল হোসেন ও ধৃত আসামী আব্দুল আজিজ উভয়ে স্থানীয় খলাপাড়া এলাকায় “ন্যাশনাল জুট মিল” এ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
র্যাব-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার ও সহকারী পরিচালক (মিডিয়া অফিসার) নোমান আহমদ মঙ্গলবার সকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, নিহত বিল্লাহ হোসেন ও ধৃত আসামী মোঃ আব্দুল আজিজ পাশাপাশি গ্রামের বাড়ীর বাসিন্দা। উভয়ে “ন্যাশনাল জুট মিল” এ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। বিল্লাল হোসেনের বাসার কর্মচারী আব্দুল আজিজের ভগ্নিপতি জনৈক কাদিরের লাউ চুরি করেছে, এ নিয়ে কথা বলার জন্য ঘটনার দিন ১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর সকালে বিল্লাল হোসেনকে স্থানীয় ঈশ্বরপুর বাজারস্থ জনৈক নিজাম উদ্দিন এর ছাপড়া দোকানের উত্তর পাশে ডেকে আনে। সেখানে আসার পর ধৃত আসামী আব্দুল আজিজসহ অন্যান্য আসামীগণ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বিল্লাল হোসেনকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো ছুরি, দা, কুড়াল ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঘটনাস্থলে ওৎপেতে ছিল। সেখানে আসার পর লাউ চুরির বিষয় নিয়া কথাকাটা কাটি হয়। এক পর্যায়ে আসামী আঃ আজিজ, ফালান, কাদির, ছাদির, কালাম, বাজিত, ওসমান, আঃ ছামাদ, হুমায়ুন, রুস্তম আলী, মানিক, ফারুক ও আলম ধাওয়া করে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে এবং জবাই করে বিল্লাল হোসেনকে হত্যা করে।
তিনি আরো জানান, পরে বিল্লাল হোসেনের ভাই মোঃ জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় ঘটনায় জড়িত আসামী ফালান, কাদির, ছাদির, কালাম, বাজিত, আঃ আজিজ, ওসমান, আঃ ছামাদ, হুমায়ুন, রুস্তম আলীসহ মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামী আব্দুল আজিজসহ এজাহার নামীয় ১০ (দশ) জনসহ তদন্তে প্রাপ্ত ঘটনায় জড়িত মানিক, ফারুক ও আলমসহ সর্বমোট ১৩ (তের) জন আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার পর থেকে আসামী আব্দুল আজিজ আত্মগোপনে থাকায় থানা পুলিশ গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে চার্জশিটের ভিত্তিতে গাজীপুর জেলার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, প্রথম আদালত, গাজীপুর বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে বিল্লাল হোসেনকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যার ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে গত ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল চার্জশিটে অভিযুক্ত আসামী আব্দুল আজিজসহ সর্বমোট ১৩ জনের মৃত্যুদন্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন। উক্ত ঘটনার পর হতে আসামী আব্দুল আজিজ দীর্ঘ ২৭ বছর পলাতক ছিলো। পলাতক থাকা অবস্থায় ধৃত আসামী আব্দুল আজিজ, স্ত্রী সবমেহের @ স্বপ্না ও চার পুত্র সন্তানকে নিয়ে নরসিংদী জেলার শিবপুর থানাধীন মৈশাদী গ্রামে শ্বশুর বাড়ীতে বসবাস করছিল। ১৯৯৫ সালে ঘটনার পর থেকে আসামী আর কোনোদিন কালীগঞ্জের নিজ স্থায়ী ঠিকানায় যায়নি।
তিনি আরো জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১৬ আগস্ট রাত আনুমানিক আড়াইটার সময় নরসিংদী জেলার শিবপুর থানাধীন মৈশাদী এলাকায় র্যাব-১ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল অভিযান পরিচালনা করে বিল্লাল হোসেন @ বিলুকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে এবং জবাই করে চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে পলাতক আব্দুল আজিজকে নরসিংদী জেলার শিবপুর থানাধীন মৈশাদী গ্রাম হতে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।
তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।