গণবাণী ডট কম:
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি এবং রাজনৈতিক সংগঠন ও তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার পট্ভূমিতে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে উপাচার্য ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনায় বুয়েটের ভিসি ড. সাইফুল ইসলাম ছাত্রদের প্রতি দেয়া এক ভাষণে এই ঘোষণা করেন।একই সঙ্গে আবরার হত্যার ঘটনায় এজাহারভুক্ত বুয়েটের ১৯ জন ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়।
এর আগে আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে প্রতিদিনের মতো সকাল থেকে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিল শেষে পলাশী থেকে বকশীবাজার সড়ক বন্ধ করে স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় শিক্ষার্থীরা খুনিদের ফাঁসি চান।
এরপর বিকাল সোয়া ৫টায় বুয়েট কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে উপস্থিত হন উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। অডিটোরিয়ামে শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মীরা উপস্থিত হন। আলোচনার শুরুতে আবরারের রুহের মাগফিরাত কামনায় ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আবরারের খুনিদের ফাঁসিসহ শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি নিয়ে শুধু বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীদের (১৫তম, ১৬তম, ১৭তম ও ১৮তম ব্যাচ) সঙ্গে আলোচনায় বসেন উপাচার্য। এর আগে গণমাধ্যমের সামনে আলোচনা করতে রাজি না হলেও অনেক আলোচনা ও আন্দোলনের পর গণমাধ্যমের সামনে আলোচনা করতে রাজি হয়েছেন উপাচার্য। তবে আলোচনা সভা সরাসরি সম্প্রচার না করার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন উপাচার্য।
উল্লেখ্য, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় খুন হন বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ। রবিবার রাতে তাকে শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটান বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। নির্মম পিটুনিতে আবরার লুটিয়ে পড়েন। এরপর নিথর দেহ টেনেহিঁচড়ে নিচে নামানোর চেষ্টা করেন ঘাতকরা। পরে বুয়েটের চিকিৎসক এসে আবরারকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে সারাদেশ। চলে ব্যাপক বিক্ষোভ।
ভিসির ঘোষণায় যা থাকছে:
বুয়েটে কোন ধরনের সাংগঠনিক রাজনীতি থাকবে না। উপাচার্য এ বিষয়ে নিজের ক্ষমতাবলে ক্যাম্পাসে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি এবং রাজনৈতিক সংগঠন ও তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
ক্যাম্পাসে সব ধরনের র্যাগিং ও নির্যাতন বন্ধ করা হবে। ড. ইসলাম বলেছেন, এধরনের নির্যাতন প্রতিরোধে একটি ‘কমন প্ল্যাটফর্ম’ গড়ে তোলা হবে যেখানে পরিচয় গোপন রেখে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ জানাতে পারবে। এসব অভিযোগের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ত্বরিত ব্যবস্থা নেবে।
আবরার ফাহাদের হত্যার দ্রুততম বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। এ ব্যাপারে সরকার সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী ১৯ জন ছাত্রকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে। তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত হওয়ার পর এদের চিরতরে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
নিহত আবরার ফাহাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
এই হত্যা মামলার খরচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করবে।
আবরার ফাহাদ হত্যার পর বুয়েটের আন্দোলনকারীরা ১০ দফা দাবি পেশ করেছিল।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, এসব দাবিদাওয়া বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।