গণবাণী ডট কম:
বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে (বীরবিক্রম) দশ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন দিয়েছেন ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম। মেজর (অব.) হাফিজকে রবিবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন জানায়৷ আর হাফিজের আইনজীবী রিমান্ড আবেদন বাতিল করে জামিনের আবেদন জানান৷ আদালত রিমান্ড আবেদন না মঞ্জুর করে তাকে জামিন দেন৷ এসময় বিএনপি নেতা হাফিজ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আগামী ১১ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন পর্যন্ত তিনি জামিনে থাকবেন।
পুলিশের দায়ের করা এজাহার এবং আদালতে মেজর (অব.) হাফিজের রিমান্ড আবেদনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘গত ২ মে ইসহাক মিয়ানের ব্যক্তিগত ইমেইল থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা, র্যা ব, পুলিশসহ অন্যান্য সরকারী সংস্থার ভূমিকা সম্পর্কে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যমূলক তথ্য ইমেইলে তিনি পাঠান। তার ওই কাজে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটনানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে। আসামির এমন কার্যকলাপ সামরিক বাহিনীতে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার হীনপ্রচেষ্টা।
এজাহার এবং পুলিশ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ‘‘হাফিজসহ অন্যরা ওই ইমেইলের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টায় লিপ্ত ছিলো৷ তারা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সেনাবাহিনীতে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছিল৷”
শনিবার রাতে সিংগাপুর থেকে ঢাকায় ফেরার পর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মেজর (অব.) হাফিজকে আটক করে র্যা ব৷ তবে তার আগে সকালে ঢাকার পল্লবী এলাকা থেকে আটক করা হয় কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ইসহাক মিয়ানকে৷ ইসহাক মিয়ান বিএনপি’র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরপত্তা দলের প্রধান৷
শনিবার দুপুরের পর মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ইসহাক মিয়ানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জিজিটাল আইনে মামলা হয়৷ আর মুহাম্মদ ইসহাককে শনিবারই সাত দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়৷
জিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৭, ৩১ ও ৩৫ ধারায় মামলাটি দায়ের করেছেন র্যা ব-৪ এর এসআই মো. আবু সাইদ৷ আর আদালতে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন এস আই মো. নুরে আলম৷
রবিবার দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানায় এসআই নূরে আলম ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এ সময় আসামি পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।
আদালতের শুনানিতে হাফিজের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘‘শনিবার কর্নেল (অব.) ইসহাকের রিমান্ড আবেদনের প্রতিবেদন আর একদিন পর মেজর (অব.) হফিজের রিমান্ড আবেদনের প্রতিবেদন একই৷ অথচ তাকে আটক করা হয় রাতে৷ ইসহাকের রিমান্ড আবেদনের সময় হাফিজ ছিলেন দেশের বাইরে বা বিমানে৷ তাহলে একই ফরোয়ার্ডিং হয় কিভাবে? বিমানে থাকা অবস্থায়ই কি তার মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়?”
তাঁর আইনজীবী বলেন, ‘‘যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভিত্তিহীন৷ যেই মেইলের কথা বলা হয়েছে, পুলিশ আদালতে সেই ইমেইল উপস্থান করতে পারেনি৷ তাই এটা বানোয়াট অভিযোগ ছাড়া আর কিছুই না৷ আদালত আমাদের যুক্তি গ্রহণ করেছে৷ তাই তাকে রিমান্ডে না দিয়ে জামিন দিয়েছেন৷”
রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আজাদ রহমান বলেন, ‘‘ইমেইল জব্দ করা হয়েছে৷ মামলার জব্দ করা মালামালের সঙ্গে তা আছে৷ এটা আদালতে পাঠানোর বিষয় নয়৷ আমাদের কাছে যে তথ্য-প্রমান আছে তাতে মেজর (অব.) হাফিজ সাবেক সেনা কর্মকর্তা হিসেবে ইমেইলের মাধ্যমে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করেছেন৷ তাকে সহযোগিতা করেছেন কর্নেল (অব.) ইসহাক৷”
জামিনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘আদালত মনে করেছেন তাই জামিন দিয়েছেন৷ এতে প্রমাণিত হয় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরি স্বাধীন৷”
মামলার বাদী র্যা ব-৪ এর এসআই মো. আবু সাইদ গণমাধ্যমের নিকট দাবি করেন, ‘‘হিরেন মূখার্জি নামের একটি ইমেইলে ইসহাকের মেইলটি পাঠানো হয়৷ ওই ইমেইল আমার কাছে আছে৷ ইসহাক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার সরোয়ার হেসেন এর সাথে জড়িত বলে জানিয়েছেন৷”
মামলার জব্দ তালিকায় একটি ল্যাপটপ, ল্যাপটপের চার্জার, মাউস ও একটি মেবাইল সেটের কথা উল্লেখ আছে৷ মামলার আরেকজন আসামি ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেনকে পলাতক দেখানো হয়েছে৷ খবর : ডয়চে ভেলে ও অন্যান্য সূত্র।